স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা নেই
- ২৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
দেশে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় বেশুমার মানুষ মারা যাচ্ছেন। দুর্ঘটনায় মৃত্যু যেন মানুষের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে রেলপথ ছিল সবচেয়ে নিরাপদ; কিন্তু ইদানীং সেই রেলভ্রমণও অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। সড়কপথের কথা বলাই বাহুল্য। প্রায় প্রতিদিনই সড়কে কেউ না কেউ কোথাও না কোথাও নিহত হচ্ছেন। সরকারি হিসাবে, বাংলাদেশের মানুষ ৩৫ শতাংশ যাতায়াত করেন নৌপথে। আগে সড়কের চেয়ে নৌপথ অপেক্ষাকৃত নিরাপদ থাকলেও গত দুই দশক ধরে বিপদসঙ্কুল হয়ে পড়েছে। এখন নৌপথে লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রতি বছর শত শত মানুষ মারা যাচ্ছেন।
আগে প্রতিকূল আবহাওয়ায় লঞ্চ দুর্ঘটনাকবলিত হয়েছে; কিন্তু এখন শান্ত নদীতে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে লঞ্চ দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। গত বছর বুড়িগঙ্গায় দু’টি লঞ্চের সংঘর্ষে লঞ্চডুবিতে বহু মানুষের সলিল সমাধি হয়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ নামে একটি লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে এবং জীবন বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পানিতে ডুবে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। নয়া দিগন্তে গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে মৃত্যুর এ সংখ্যা উল্লেøখ করা হয়েছে। এ ঘটনায় দগ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৫ জন। কতজন নিখোঁজ রয়েছেন, তা কেউ বলতে পারছেন না। সংখ্যাটি ১০০ জনের কম হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, আগুন লাগার পর লঞ্চটিকে তীরে ভিড়াতে ৪৫ মিনিটের বেশি সময় লাগে। আগুন লাগার সাথে সাথেই লঞ্চটিকে তীরে ভিড়ানো সম্ভব হলে প্রাণহানি এড়ানো যেত বলে মনে করেন তারা। লঞ্চটিতে আগুন লাগার ঘটনার কারণ তদন্ত করতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি করেছে। এই দুই কমিটি প্রতিবেদন দিলে বোঝা যাবে, কিভাবে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ইঞ্জিনকক্ষ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।
প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ ছাড়া যদি সংঘর্ষ এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে তাহলে নৌপথে চলাচলকারীদের নিরাপত্তা কোথায়? বাস্তবতা হলো- দেশে কোনো বাহনই এখন নিরাপদ নয়। বাস, ট্রেন, লঞ্চ দুর্ঘটনায় মৃত্যু যেন দেশবাসীর পিছু ছাড়ছে না। কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা। অথচ সবার জানা, একটি দুর্ঘটনা হলে একটি পরিবারের সব আশা-ভরসা এক পলকে শেষ হয়ে যায়। শেষ হয়ে যায় পরিবারের ভবিষ্যৎ। এ দেশে মানুষের জীবন যেন আজ কিছুতেই নিরাপদ নয়। একের পর এক বিপদাপদ ধেয়ে আসছে। এক দিকে বিশ্বময় মহামারী করোনা সবার জীবন ওলট-পালট করে দিয়েছে, অন্য দিকে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় বেশুমার প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ। দেশে এখন স্বাভাবিক মৃত্যু যেন অস্বাভাবিক হয়ে উঠছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, এ দেশে মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নেই। জীবন যেন অতি তুচ্ছ একটি বিষয়।
সড়কপথের চেয়ে যাতায়াতে তুলনামূলক আরামদায়ক, সাশ্রয়ী ও নিরাপদ মনে করা হয় নৌপথকে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যান্ত্রিক ত্রুটি, মুখোমুখি সংঘর্ষ ও চালকের অসাবধানতাসহ বিভিন্ন কারণে মাঝে মধ্যেই নৌডুবির ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। যেমন ছিল দিনদুপুরে বুড়িগঙ্গায় শান্ত নদীতে লঞ্চডুরির ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন, তাদের হত্যা করা হয়েছে বললে ভুল হবে না। লঞ্চমালিক এবং কর্মীদের উদাসীনতার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিটি দুর্ঘটনার পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকে। আসলে অসতর্কতার ফলেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। তা বৈরী আবহাওয়া হতে পারে, নির্মাণ ত্রুটি হতে পারে, ইকুইপমেন্ট ফেইলিওর হতে পারে। কিন্তু সুগন্ধায় অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে মালিকপক্ষের দায় এড়ানোর কোনো উপায় নেই। কারণ তারা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই লঞ্চের ইঞ্জিন পাল্টেছেন।
আমরা মনে করি, ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা এড়াতে নৌযান আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তৎপরতা জরুরি। তারা যদি কর্তব্যপরায়ণ হন, তাহলে ফিটনেসবিহীন নৌযান চলাচল করার কথা নয়। এ জন্য কর্তাব্যক্তিদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। দেশবাসীর আশা, সব ধরনের বাহনে সবার পথচলা হোক নিরাপদ ও শান্তিময়। তবে সবার আগে প্রয়োজন, সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা