২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
আফগানবিষয়ক ওআইসি সম্মেলন

মানবিক সাহায্যের দ্বার খুলুক

-

আফগানিস্তান সঙ্কট নিয়ে পাকিস্তানের আমন্ত্রণে অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) বিশেষ সম্মেলনে একটি মানবিক তহবিল গঠনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে। আশরাফ গনি সরকারের পতনের পর পশ্চিমারা দেশটিতে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা বন্ধ করে দিয়েছে। দেশটিতে তালেবানের ফের ক্ষমতায় আসার পর আগস্টের মাঝমাঝি যুক্তরাষ্ট্র আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৯ দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার আটকে দিয়েছে। আইএমএফসহ অন্য পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলো একই পথে হেঁটেছে। আফগান সরকার অর্থের অভাবে বেতন দিতে পারছে না জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর। সেখানে হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। ফলে সেখানে কোটি কোটি মানুষ ক্ষুধা ও চরম দারিদ্র্যে নিপতিত। পরিস্থিতির আরো অবনতির শঙ্কায় পাকিস্তান মুসলিম দেশগুলোর ৫৭ সদস্যের জোট ওআইসিকে এ সঙ্কট মোকাবেলায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে। আশা, মুসলিম দেশগুলো আফগানদের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য লাঘবে সহযোগিতার হাত বাড়াবে।
মানবাধিকার এখন বহুল চর্চিত একটি বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র ও এর ইউরোপীয় মিত্ররা এটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ার কথা বলে থাকে। আফগানিস্তানে দুই কোটি ২৮ লাখ মানুষ খাদ্য সঙ্কটে ভুগছে। তাদের মধ্যে লাখ লাখ শিশু ভয়াবহ অপুষ্টিতে রয়েছে। দুর্ভাগ্য, এই সময়ে বিশ্বমানবতা খুব একটা সাড়া দিচ্ছে না। প্রতিদিন আফগানিস্তানে মানুষ ক্ষুধা নিয়ে ঘুমোতে যায়। অসুখ-বিসুখ এমনকি করোনার মধ্যে তাদের জন্য ওষুধ নেই। অনেকের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই; তীব্র শীতে খোলা জায়গায় কাঁপছে। এ অবস্থায় আফগানদের সাহায্য করার বদলে পশ্চিমাদের কাছে প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে প্রতিনিধিত্বশীল সরকার, নারী নেতৃত্ব আর নিজেদের মানদণ্ডে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা। ফলে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও আফগানরা কোনো মানবিক সাহায্য পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হচ্ছে না।
অবনতিশীল পরিস্থিতি বিবেচনায় ইসলামাবাদে ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মেলন আয়োজন হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছে জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক অন্যান্য আর্থিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান- যুক্তরাষ্ট্র্র, চীন, রাশিয়া, জাপান ও জার্মানির মতো শক্তিশালী দেশগুলো। এতে ২০টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ১০টি দেশের প্রতিমন্ত্রী এবং অন্যান্য দেশের ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে মানবাধিকার নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দেয়া বক্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য। পশ্চিমারা যে মানদণ্ড এ ব্যাপারে স্থির করেছে, সেটি যে পৃথিবীর সব সমাজে সমানভাবে খাপ খাবে না, তিনি তা উল্লেøখ করেছেন। যে কারণে আফগান সরকারের স্বীকৃতি ও মানবিক সহায়তাও বন্ধ হয়ে আছে। পশ্চিমারা তাদের অবস্থান থেকে সরে আসবে কি না তা স্পষ্ট নয়। তবে এ সম্মেলনে সাধারণ আফগানদের দুর্দশার চিত্রটি বিশ্ববাসীর কাছে পরিষ্কার হয়েছে। কয়েকটি সেশনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আফগানদের প্রতি জরুরি সাহায্য পাঠানোর প্রয়োজনীয়তা ও কৌশল আলোচনা হয়েছে।
আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে এখনো কোনো দেশ স্বীকৃতি দেয়নি। দেশ চালানোর ক্ষেত্রে তালেবানের যে একগুঁয়েমি, তা থেকে সরে আসার পরামর্শ আবারো দেয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আনলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মানবিক সাহায্য দিতে এখনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। অথচ আফগানিস্তানে ক্ষুধা-দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা মানুষ আগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাহায্য পেয়েছে। সেই মানুষ কেবল তালেবান শাসনের অধীনে থাকার কারণে বাঁচার মৌলিক অধিকারও হারিয়ে ফেলেছে। সহসা সেখানে তালেবান শাসনের পতন হবে এমন লক্ষণ নেই; বরং বিগত ৪০ বছরের মধ্যে তালেবানের এই সরকার বেশি শক্তি ও সংহতি নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। কেবল শাসকদের অপছন্দ করার কারণে দেশের সাধারণ মানুষ মানবিক সাহায্য থেকে বঞ্চিত হবে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা আশা করব, ওআইসি আফগানদের প্রতি মুসলিম হিসেবে পর্যাপ্ত মানবিক সাহায্য পাঠানোর উদ্যোগ নেবে। এতে করে অন্যায্য আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার কঠোরতা দেশটি মোকাবেলা করতে পারবে। অন্য দিকে তালেবান শাসকদের উচিত; একরোখা অবস্থান থেকে সরে এসে নমনীয় নীতি গ্রহণ করা। বাংলাদেশের মন্ত্রী পর্যায়ের কেউ এ সম্মেলনে অংশ না নিলেও আফগান জনগণের প্রতি ভ্রাতৃসুলভ মনোভাব প্রদর্শন করবে এবং ঢাকা দেশটির সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে উৎসাহী হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement