জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা নয়
- ১৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে নীলফামারী জেলার উপজেলা শহর সৈয়দপুরে এবং এর গ্রামাঞ্চলে বেশির ভাগ দোকানি ওষুধ বিক্রির নিয়ম-কানুন মানছে না বলে অভিযোগ এসেছে। একটি সহযোগী দৈনিকের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ড্রাগ লাইসেন্স, নিবন্ধিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র এবং প্রশিক্ষিত ফার্মাসিস্ট ব্যতীতই জীবনরক্ষাকারী গুরুত্বপূর্ণ ওষুধসহ অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে সংশ্লিষ্ট জনগণ রয়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে-সেখানে গজিয়ে ওঠা বেশির ভাগ ওষুধ দোকানি নিজেরাই ডাক্তারের মতো অহরহ চিকিৎসা করছে বিশেষ করে অভাবী ও নিম্নবিত্ত লোকজনকে। সরকারের ওষুধ প্রশাসনের নীতিমালা মোতাবেক, বৈধ ফার্মেসিরও প্রত্যেকটিতে ওষুধ বিক্রি করার জন্য ট্রেনিং নেয়া একজন করে ফার্মাসিস্ট থাকতে হবে। কিন্তু সাধারণত এসব দোকানে এ ধরনের নিয়ম-নীতির কোনো বালাই নেই।
জানা গেছে, সৈয়দপুর উপজেলায় প্রশাসনের হিসাব মতে, লাইসেন্সপ্রাপ্ত ফার্মেসি আছে এক হাজার ৩৬৬টি। এর মধ্যে অ্যালোপ্যাথিক ফার্মেসিই এক হাজার ৩৪৮টি। অন্যগুলোর মধ্যে হোমিওপ্যাথিক সাতটি, ইউনানি বা হাকিমি ছয়টি এবং আয়ুর্বেদিক বা কবিরাজি ফার্মেসি পাঁচটি। ড্রাগ লাইসেন্সের জন্য জমা রয়েছে আরো শতাধিক ব্যবসায়ীর দরখাস্ত। অন্য দিকে কোনো লাইসেন্স ব্যতীতই এখানে চলছে ওষুধের এক হাজার দোকান। ড্রাগ লাইসেন্স না থাকা, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করা প্রভৃতি অপরাধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জরিমানা করলেও তাতে তাদের বেআইনি কাজের তাণ্ডব কমেনি। অর্থাৎ তারা আগের মতোই অবাধে অবৈধ ব্যবসায় করে আসছে। এ দিকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে প্রতি বছর মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে। সরকারি ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের স্থানীয় জেলা তত্ত্বাবধায়ক অসহায়ত্ব প্রকাশ করে সোজাসুজি বলেছেন, ‘‘আমাদের লোকবল কম। তাই এখানে প্রধানত পাড়া-মহল্লা ও গ্রামে গ্রামে ওষুধ বিক্রির ব্যাপারে মনিটরিং পুরো করা সম্ভব হচ্ছে না। তবুও নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখায় মধ্যে মধ্যে বিভিন্ন ফার্মেসিকে জরিমানা করা হয়। ‘যত দ্রুত সম্ভব’ বিনা লাইসেন্সের ওষুধের দোকানে অভিযান চালানো হবে।”
অপর দিকে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় যে, শুধু পাড়া-মহল্লা এবং গ্রামাঞ্চলেই নয়, শহরের মূল বাজারেও রেজিস্ট্রার্ড ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ব্যতীতই ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে। স্বল্প আয়ের অনেকেই রোগের কথা বলে এসব দোকানে ওষুধপত্র কিনছে। ওষুধের নির্দিষ্ট দামের চেয়ে বেশি নেয়ার ঘটনাও ঘটছে। দেখা গেছে, লাইসেন্সহীন বা বেআইনি দোকানে ব্যথানাশক, গ্যাস, যৌন উত্তেজক ও নেশাকর সিরাপ-ট্যাবলেটের চাহিদা অধিক। রোগীদের কথা হলো, ‘ডাক্তারের কাছে গেলে অনেক খরচ করতে হয়। তাই দোকান থেকে ওষুধ নিয়ে যেতে হচ্ছে। তাদের দাবি, এভাবে কাজও হচ্ছে ওষুধে।’ আর ওষুধ দোকানিদের অভিযোগ, ‘ড্রাগ লাইসেন্স অর্জন করা সহজ নয়’। তাই তাদের অনেকে এ জন্য আবেদনই করে না। আবেদন করা হলে বিভিন্ন অজুহাতে ‘অফিসের লোকজন’ মোটা অঙ্কের টাকা চায়। তাই লাইসেন্স ছাড়াই ওষুধ বেচাবিক্রি চলছে। এ জন্য ‘সমস্যা’ না হওয়ার কারণ সরকারের লোকজন এলে ‘কিছু দিয়ে দিলে’ তারা কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে চলে যায়। এটাকে ব্যবসায়ীরা বলে থাকে ‘সিস্টেম’। এসব সত্ত্বেও বৈধ ফার্মেসিতে ফার্মাসিস্ট রয়েছে এবং নিবন্ধিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া সেখানে অ্যান্টিবায়োটিক পর্যন্ত বিক্রি করা যায় না।
বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সোসাইটির মতে, ‘সৈয়দপুরে লাইসেন্স-সহ ওষুধের ব্যবসায় করছে যতজনে, তার কয়েক গুণ বেশি লোক করছে লাইসেন্স ব্যতীত; আবার অনেকের লাইসেন্স থাকলেও তারা প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে পারে না। সর্বত্র অবৈধ ফার্মেসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, নিবন্ধিত চিকিৎসক ব্যতীত ওষুধ বিক্রি বিপজ্জনক।
আশা করি, ভেজাল-নকল-মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রিসহ মানুষের জীবন নিয়ে সব ধরনের ছিনিমিনি খেলা অবিলম্বে সর্বত্র বন্ধ করা হবে। কারণ এটা অপরাধ এবং তা করার অধিকার কারো নেই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা