২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
হেফাজত নেতাকর্মীর নামে মামলা

জামিন পাওয়া আইনি অধিকার

-

বাংলাদেশে বিচারপ্রক্রিয়ায় অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে। সুবিচার পাওয়ার চেয়ে একজন মানুষের হেনস্তার শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি। এখানে দোষীদের প্রকাশ্যে দম্ভভরে চলতে দেখা যায়। আবার কোনো ধরনের অপরাধ না করেও শাস্তি পেতে দেখা যায়। সরকার সুশাসনের মাধ্যমে এ ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে পারে। তবে বাস্তবতা হলো- দেশে সরকারই এ ধরনের একটি অন্যায্য পরিস্থিতি বজায় রাখার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে। চলতি বছর মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদকে ঘিরে বড় ধরনের নিপীড়ন চালানো হয়। তখন ১৯ জন প্রাণ হারান। আহত হন বহু মানুষ। ওই ঘটনায় হেফাজত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানে নামে প্রশাসন। ঢালাউভাবে মামলা হয় তাদের বিরুদ্ধে। আর দেশে কারো নামে মামলা মানেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তার ওপর নেমে আসে হয়রানি ও নির্যাতন।
পুলিশ সদর দফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, হেফাজতের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে সারা দেশে ১৫৪টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে লক্ষাধিক। তখন সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ওই জেলায় ৫৬টি মামলায় ৩৮ হাজারের বেশি মানুষকে আসামি করা হয়। অন্য দিকে রাজধানী ঢাকায় হেফাজতের বিরুদ্ধে করা ১৪টি মামলায় আসামি করা হয় ১০ সহস্র্রাধিক মানুষকে। আসামিদের অনেকে এখন কারাগারে আছেন। এ ধরনের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এলোপাতাড়ি যে কারো নামে মামলা দেয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এরপর শুরু হয় পুলিশি অভিযান। পুলিশের তৎপরতায় বেশির ভাগ সময় দেখা যায় নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্য। নিরীহদের হয়রানি করে অর্থকড়ি আদায় করতে দেখা যায় তাদের। এমন ধরনের মামলা মানে একধরনের হয়রানির আয়োজন। এসব মামলায় ভুক্তভোগীদের হেনস্তারও অন্ত থাকে না।
মামলাগুলোতে শুধু হেফাজতের নেতকর্মী নন, আসামি করা হয়েছে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধীদলীয় সমর্থকদের। বিরোধী দলের রাজনৈতিক সদস্যরা বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো অভিযোগ আনা যায়। অন্যায়ভাবে ধরে নিয়ে যাওয়া যায়। যখন তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের হয়রানি হয়; তখন তারা কোথাও থেকে আনুকূল্য পান না। অন্য দিকে সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ থাকলেও সাধারণত পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয় না। কারণ ক্ষমতাসীন প্রভাবশালীরা তাদের পক্ষে অবস্থান নেন। তাই হয়রানি করে অর্থ কামাতে বিরোধী দলের সমর্থক বা সাধারণ নাগরিকের ওপর মামলা পুলিশের জন্য দারুণ একটি সুযোগ সৃষ্টি করে; এটি পরিচিতি পেয়েছে ‘গ্রেফতার বাণিজ্য’।
গণতান্ত্রিক পরিবেশে প্রত্যেকের প্রতিবাদ বিক্ষোভ করার অধিকার রয়েছে। শুধু হেফাজত নয়; দেশের যেকোনো রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির জন্য একই অধিকার সংবিধান স্বীকৃত। ঘটনার সময় দেখা গেছে, পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের ব্যানারে থাকা মানুষজনের ওপর হামলা করেছে। এসব হামলায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভকারীরা বিপুলসংখ্যায় আহতও হয়েছেন। এরপর হেফাজতের বিভিন্ন নেতার ওপর বিচ্ছিন্নভাবে সরকারের পুলিশি মামলাও দেখা গেছে। ওই সব মামলায় হেফাজতের নেতাদের অনেকে এখনো জেলে। তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে; সেগুলোর ভিত্তিও বেশ দুর্বল বলে মনে হয়। তাদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ প্রমাণও মিলছে না। অথচ তাদের অনেকে জামিন পাচ্ছেন না। ১৫৪টি মামলার এখনো তদন্ত শেষ হয়নি। এভাবে দীর্ঘ দিন ধরে বিপুলসংখ্যক মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এমন প্রেক্ষাপটে এ কথা বলা অসঙ্গত নয় যে, এটি রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে একটি গোষ্ঠীকে নিপীড়নে পরিণত হয়েছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। গণতান্ত্রিক একটি রাষ্ট্রে সবার অধিকার সংরক্ষণ করাই হচ্ছে সরকারের দায়িত্ব; কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকেই সেই দায়িত্ব উপেক্ষা করা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement
পাকিস্তানে প্রতিবাদের খবর দেয়ায় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ দর্শনায় অস্ত্রসহ যুবদল নেতা গ্রেফতার বাহাদুর শাহ পার্ক : ইতিহাসের নীরব সাক্ষী পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ভারতের ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য ফেসবুক, টিকটক নিষিদ্ধ অস্ট্রেলিয়ায় ‘হাইব্রিড মডেল’ মানবে না পাকিস্তান, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে জটিলতা বাড়ল উগান্ডায় ভূমিধসে ৪০ বাড়ি চাপা, নিহত ১৫ দেশে বিশৃঙ্খলার পেছনে রয়েছে ইন্ধনদাতারা জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জামায়াত আমিরের দুর্নীতিবাজদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে না পারলে কিসের বিপ্লব, প্রশ্ন দেবপ্রিয়ের নৈরাজ্য সৃষ্টি জাতিকে বিপর্যয়ে ঠেলে দেবে

সকল