সারা দেশেই হতে হবে শর্তমুক্ত
- ০২ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
স্বাধীনতার আগে থেকেই দেশে গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নেয়ার প্রচলন থাকলেও সাসম্প্রতিক বছরগুলোতে আর সেই রীতি অনুসরণ করতে চাইছেন না বেশির ভাগ গণপরিবহন মালিক। এবার সরকার অযৌক্তিকভাবে তেলের দাম বাড়ানোর পর গত কিছুদিন ধরে গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়া অর্থাৎ ‘হাফ পাসের’ দাবিতে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। মালিকপক্ষ ও সরকারের মধ্যে বৈঠকের পর বাস ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়া হলে ‘হাফ পাসের’ দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এই দাবি আদায়ে প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ২৪ নভেম্বর সিটি করপোরেশনের গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান এবং সোমবার রাতে রামপুরায় বাসচাপায় এসএসসি পরীক্ষার্থী মাইনুদ্দিন ইসলাম দুর্জয় নিহত হওয়ায় তাদের ক্ষোভ আরো বৃদ্ধি পায়। মঙ্গলবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক বিক্ষোভ করেছেন।
আন্দোলনের মুখে মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের হাফ পাসের দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দেয় ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতি। সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ছবিযুক্ত পরিচয়পত্র দেখিয়ে শিক্ষার্থীরা বাসে অর্ধেক ভাড়া দিতে পারবেন। সরকারি ছুটির দিন, সাপ্তাহিক ছুটির দিন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্যান্য ছুটির দিনে এ ‘সুযোগ’ থাকবে না। পাশাপাশি এটি শুধু ঢাকা মহানগরের জন্য প্রযোজ্য হবে। ১ ডিসেম্বর থেকে তা কার্যকর করতে ঘোষণা দেয় সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। তবে পরিবহন মালিকদের ওই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা এ জন্য নতুন কর্মসূচিও দিয়েছেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশেই গণপরিবহনে ছাত্রছাত্রীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া চান। শুধু বাসে নয়; লঞ্চ ও ট্রেনও হাফ ভাড়ার আওতাভুক্ত হোক, সেটি সারা দেশে এবং ২৪ ঘণ্টা। একই সাথে তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নয়, সপ্তাহের সব দিন ২৪ ঘণ্টাজুড়ে চান। মঙ্গলবার রাজধানীতে বিআরটিএ ভবনে গিয়ে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছে নিজেদের দাবিনামা পেশ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা। বৈঠক থেকে বেরিয়ে তারা জানান, তাদের দাবি মানা হয়নি, আশ্বাসও দেয়া হয়নি। এরপর ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
মালিকপক্ষ যে এই দাবি মানার ক্ষেত্রে চাতুরীর আশ্রয় নিয়েছে, বিষয়টি সবার কাছেই স্পষ্ট। কারণ ঢাকার বাইরেও লাখ লাখ শিক্ষার্থী বাসে যাতায়াত করেন। অথচ তাদের জন্য এই সুবিধা রাখা হয়নি। এটি রীতিমতো বৈষম্য। এই সিদ্ধান্তে কোনো যুক্তিই ধোপে টেকে না। আর সময়সীমা সম্পর্কে বললে বলতে হয়, শিক্ষার্থীদের অনেকে ভোর ৬টায় উঠে বাসে করে কোচিংয়ে যান, ক্লাস ধরতে যান। অনেক শিক্ষার্থী টিউশনি শেষে গভীর রাতে বাসায় ফেরেন। তাদের ক্ষেত্রে কী হবে, সে ব্যাপারে মালিকপক্ষের কোনো বক্তব্য নেই।
সবার মতো আমরাও মনে করি, গরিব এই দেশে হাফ পাস শিক্ষার্থীদের একটি ন্যায্য অধিকার, এটি নিশ্চিত করতে হবে। গণপরিবহনের মালিকদের কাছে থেকে শিক্ষার্থীদের এটি কোনো অনুগ্রহ নয়। যেহেতু সরকার গণপরিবহনের ভাড়া বাড়িয়েছে, সেহেতু অবিলম্বে হাফ পাসের প্রজ্ঞাপনও দিতে হবে সরকারকে। বাস-লঞ্চ মালিকদের সাথে বৈঠক করে সরকারকেই একটি যৌক্তিক অবস্থানে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে হাফ ভাড়া হতে হবে শর্তমুক্ত এবং সারা দেশের শিক্ষার্থীদের জন্যই।
সবচেয়ে বড় কথা, এটি আমাদের সরকারের দায়। স্বাধীনতার আগের পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের যে ১১ দফা দাবি ছিল তাতে এই দাবি ছিল অন্যতম। সে সময় আওয়ামী লীগ সেটি সমর্থন করে। পাকিস্তান সরকার যদি সেটি মেনে নিতে পারে তাহলে আজ স্বাধীন বাংলাদেশে সেই আওয়ামী লীগের সরকার কোন যুক্তিতে ছাত্রদের দাবি অস্বীকার করতে পারে!
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা