২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
নাগরিকসেবার অবনতি

সমস্যা জর্জরিত ঢাকা

-

ঢাকায় একটি সিটি করপোরেশন ভেঙে দু’টি আলাদা করপোরেশন গঠন করা হয় ২০১১ সালে। বলা হয়েছিল, এতে নাগরিকসেবার মান বাড়বে, ব্যবস্থাপনা সহজ হবে এবং নগরবাসীর স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত হবে। তখন অনেকে এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন; কিন্তু কোনো আপত্তি, কোনো যুক্তির কথায় কেউ কর্ণপাত করেননি। বরং বিশাল মহানগরীর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য সম্ভব হলে চার ভাগে ভাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করা হয়েছিল সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে। জনসংখ্যা ও আয়তনের বিষয়টি মাথায় রাখলে সেই যুক্তি অগ্রাহ্য করার মতো নয়; কিন্তু সিটি করপোরেশন দু’ভাগ করার পর ঢাকার নাগরিকসুবিধা কতটা বেড়েছে তা ভেবে দেখার বিষয়।
আমরা খোলা চোখে দেখতে পাচ্ছি, দুই সিটি করপোরেশন হওয়ার পর বরং অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বৃষ্টি হলেই নগরীর কোনো কোনো অংশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বায়ুদূষণে বিশ্বরেকর্ড করেছে ঢাকা। পরিবেশদূষণের ক্ষেত্রেও একই কথা। নদীগুলোর করুণ দশা এর প্রমাণ। যানজট নিরসনে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি উত্তর বা দক্ষিণ কোনো করপোরেশনই; নগরবাসীর দৈনন্দিন যাতায়াতে প্রয়োজনীয় যানবাহনের সহজলভ্যতাও নিশ্চিত করতে পারেনি। দীর্ঘ যানজট নগরবাসীর মূল্যবান সময়ের বিপুল অপচয় ঘটাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার বা মশকনিধনের মতো সাধারণ পরিষেবারও উন্নতি তো দূরের কথা, ন্যূনতম প্রাপ্যতাও নেই। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও ব্যর্থ দুই সিটি করপোরেশন। দুর্গন্ধময় রাস্তাঘাট অনেক জায়গায় বিড়ম্বনার কারণ। ডেঙ্গুর ভয়াবহতা ঢাকাবাসীর জন্য রীতিমতো আতঙ্কের। এখনো প্রতিদিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ জন।
অপরিকল্পিত নগরায়ন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন-রাস্তা, নগরজুড়ে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, উন্নয়নের ধকল, গ্যাস স্বল্পতায় মানুষের রান্নাবান্না বন্ধ হয়ে যাওয়া, পানির জন্য হাহাকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে উদ্যোগহীনতা- এসব বিষয় না হয় বাদই থাকুক, কারণ এগুলো একা সিটি করপোরেশনের আওতায় নয়; কিন্তু যে বিষয়গুলো সিটি করপোরেশনের দেখার কথা সেগুলোর কতটা উন্নতি হয়েছে সেটিই বিবেচ্য।
নগর ব্যবস্থাপনার মধ্যে নগরবাসীর বিনোদন এবং স্বাস্থ্যরক্ষার বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত। এ ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নিয়েছে দুই সিটি? নগরীর পার্ক এবং খেলার মাঠগুলো রক্ষা করতে পারেনি। যেসব মাঠে একসময় দলবেঁধে শিশু-কিশোররা খেলায় মেতে থাকত সেগুলোর কোনো কোনোটিতে উন্নয়নের নামে সুন্দর গ্রিলের ঘেরাও দিয়ে সবুজ ঘাস লাগানো হয়েছে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পানি ছিটানো হচ্ছে নিয়মিত। সুন্দর দর্শক গ্যালারি বানিয়ে বেওয়ারিশ কুকুর ও ভবঘুরেদের জন্য ভালো আশ্রয় নিশ্চিত করেছে সন্দেহ নেই; কিন্তু সে মাঠে শিশুরা খেলার সুযোগ পায় না। বয়স্ক, নারী ও স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ ভোরে বা সন্ধ্যায় হাঁটতে যেতে পারে না। এই উন্নয়ন কার স্বার্থে, কোন প্রয়োজনে সে প্রশ্ন অসঙ্গত নয়। এটি আদৌ উন্নয়নের সংজ্ঞায় পড়ে কি না সেটিও প্রশ্ন।
দেখা যাচ্ছে, ২০১১ সালের চেয়ে ঢাকা আরো বেশি বসবাসের অযোগ্য হয়েছে। এর কারণ নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। গতকাল বুধবার একটি দৈনিকে বিশিষ্ট নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেছেন, যোগ্য নেতৃত্ব না থাকলে নগরের উন্নতি হওয়া খুব কঠিন। প্রথম সঙ্কট হচ্ছে শাসন, পরিচালন, ব্যবস্থাপনা বা নেতৃত্বের। আরেকজন নগর বিশেষজ্ঞ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেছেন, নগর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, মশকনিধন- এগুলো সিটি করপোরেশনের প্রধান কাজ। কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে না করে মেয়ররা অন্য কাজে মনোনিবেশ করছেন। মার্কেট বা শপিং সেন্টার তৈরিতে আগ্রহ অনেক বেশি। তিনি বলেন, মনে হয়, সিটি করপোরেশনগুলো জবাবদিহির ঊর্ধ্বে চলে গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement