২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
নির্বাচন কমিশন গঠন আইন

সার্চ কমিটিতেই অটল সরকার

-

আমাদের রাজনীতিকরা সংবিধান ও আইনের ভিত্তিতে দেশ চালাবেন এটাই হওয়ার কথা; কিন্তু সেটি সবসময় ঘটে না। রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে প্রায়ই সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। অনেক ক্ষেত্রে সংবিধানের প্রতি অবজ্ঞার ভাবও প্রকাশ পায়। যেমনÑ নির্বাচন কমিশন গঠন সম্পর্কিত সংবিধানের নির্দেশনা। সংবিধানে আইন প্রণয়ন করে সেই আইনের ভিত্তিতে কমিশন গঠনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে; কিন্তু স্বাধীনতার পর ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই আইন প্রণয়ন করা হয়নি। নিজেদের পছন্দমাফিক ব্যক্তিদের নিয়ে কমিশন গঠন এবং প্রকারান্তরে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় দলীয় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার হীন লক্ষ্যেই রাজনীতিকরা সংবিধানের প্রতি অবজ্ঞা করে এসেছেন সেটি সুস্পষ্ট। তবে এই কাজটি কোনো একটি বিশেষ দলই কেবল করেছে এমন নয়। এ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন হওয়া সব দল, সেটি গণতান্ত্রিক, সামরিক গণতান্ত্রিক বা স্বৈরাচারী যে ধরনের সরকারই হোক না কেন, করেছে। এই একটি ক্ষেত্রে আদর্শ-নির্বিশেষে সব দলের একই চরিত্র প্রকাশ পেয়েছে।
এই যখন পরিস্থিতি তখন নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের প্রভাব থাকবে সেটিই স্বাভাবিক; কিন্তু তার সুদূরপ্রসারী কুফলও ফলেছে। ১৯৯৪ সালে একটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে কথিত জালিয়াতির অভিযোগে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ দেশ অচল করে দেয়ার উপক্রম করে। তার সাথে যোগ দেয় সব বিরোধী দল। প্রতিষ্ঠা হয় নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা। কেউ কেউ এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন করার বিষয়টিকে জঙ্গলের আইন বললেও এটাই নিরেট সত্য যে, একমাত্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলোর অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোই বাংলাদেশের সবচেয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবে দেশে-বিদেশে স্বীকৃত। কোনো দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন নয়। এখন সেই ব্যবস্থাটি তুলে দেয়া হয়েছে। সেই সাথে ফিরে এসেছে নির্বাচনে জালিয়াতির সেই পুরনো প্রক্রিয়া।
বর্তমান ক্ষমতাসীনদের সময়ে নির্বাচনী ব্যবস্থাটিই যে সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, নির্বাচনের ওপর মানুষের আর কোনো আস্থাই নেই। এ জন্য বর্তমান নির্বাচন কমিশনের দায় নিশ্চয়ই আছে; কিন্তু সরকারের দায়ই মুখ্য।
এমনই পরিস্থিতিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে এবং আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। আগামী নির্বাচন কমিশন যেন সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় সে জন্য সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী আইন প্রণয়ন করে তার ভিত্তিতে কমিশন গঠন করার বিষয়টি সামনে আসে। সংবিধানে বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। রাষ্ট্রপতি এই পাঁচজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ করবেন এ উদ্দেশ্যে প্রণীত একটি আইনের মাধ্যমে।
কিন্তু সেই আইন কখনো করাই হয়নি। গত প্রায় চার পাঁচ মাস আগে থেকে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে; কিন্তু সরকার আইন প্রণয়নে আগ্রহী নয়। তারা আগের মতোই সার্চ কমিটি দিয়ে কমিশন গঠনের বিষয়ে অটল। কিন্তু এভাবে বর্তমান কমিশনের মতো একটি ধামাধরা অদক্ষ কমিশন গঠন করা হলে তার ওপর সব দলের আস্থা থাকবে না সেটি নিশ্চিত। আর কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে না পারলে সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা করা বাতুলতা মাত্র।
নতুন আইন করে কমিশন গঠনের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এতদিন বলা হচ্ছিল সময়াভাবের কথা। এখনো তা-ই বলা হচ্ছে। তবে গত রোববার আইনমন্ত্রী বিষয়টি খোলাসা করে দিয়েছেন। এখন তিনি বলছেন, সংসদের আগামী দু’টি অধিবেশনের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন গঠন সম্পর্কিত আইন আনা হবে বিল আকারে। তবে এবারের কমিশন এই আইনের অধীনে হবে না। তবে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে যে কমিশন গঠন করা হবে সেটি নতুন আইনের ভিত্তিতে হবে না।
আইনমন্ত্রীর কথায় কোনো অস্পষ্টতা নেই। সুতরাং নুরুল হুদা কমিশনের অধীনেই আরেকটি নির্বাচন জাতির কপালের লিখন।


আরো সংবাদ



premium cement