কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা
- ২৯ অক্টোবর ২০২১, ০০:০৫, আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২১, ২৩:২৮
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া থেকে মানকিগঞ্জের পাটুরিয়া রুটে একটি ফেরি ডুবে গেছে। ওই সময় ফেরিতে ১৭টি পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান এবং ১৬টি মোটরসাইকেল ছিল। নৌপথে ফেরি এমন একটি পরিবহন যা স্বল্প দূরত্ব অতিক্রম করে। সাধারণত দু’টি সড়কপথের সংযোগ হিসেবে নদীপথে ফেরি ব্যবহৃত হয়। ঢাকা থেকে উত্তর ও দক্ষিণের মহাসড়কগুলোতে আগে অনেক ফেরি পারাপার ছিল। এখন বেশির ভাগ নদীর উপর সেতু নির্মাণ হওয়ায় অল্প কয়েকটি রুটে ফেরির প্রচলন রয়েছে। নৌযানটির প্রকৃতি এমন যে, এটি সাধারণত টেকসই হয়। ফেরি ডোবার রেকর্ড বিরল। সে ক্ষেত্রে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে ফেরিটি ডুবে এক নতুন নজির সৃষ্টি হলো। ফেরি চলাচল নিয়ে নানা অনিয়ম, স্বেচ্ছারিতা ও জনভোগান্তির খবর সবার জানা। খুব সম্প্রতি সামান্য কয়েক দিনের ব্যবধানে নবনির্মিত পদ্মা সেতুতে উপর্যুপরি ফেরির আঘাত নতুন রেকর্ড করেছে। আর এবার ঘটল ফেরিডুবি। এই প্রথম জানা গেল, মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরি নিয়েও কর্তৃপক্ষের কোনো নজর ছিল না। ফলে সাধারণ মানুষকে এর খেসারত দিতে হলো।
ঘটনার বিবরণে জানা যাচ্ছে, গত বুধবার যানবাহন বোঝাই হয়ে আমানত শাহ ফেরিটি দৌলতদিয়া ছেড়ে আসে। মাঝপথে এসে দেখা গেল, এক দিক থেকে পানি উঠতে শুরু করে। সকাল ১০টায় পাটুরিয়ায় পন্টুনে ভেড়ার সাথে সাথে তড়িঘড়ি করে যানবাহনগুলো নেমে যেতে থাকে। চতুর্থ ট্রাকটি নামার চেষ্টার সময় ফেরিটি এক দিকে হেলে যায়। ট্রাকটিও নদীতে পড়ে যায়। এ সময় অন্য সব যানবাহনসহ ফেরিটি তলিয়ে যায়। এরপর প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের তোড়জোড় শুরু হয়। স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে হাজির হন। ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ডের ডুবুরি দল এসে উদ্ধারকাজ শুরু করে। বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্ধারকারী জাহাজ হামজাও উপস্থিত হয়। জানা যাচ্ছে, ফেরিটি উদ্ধার করার সামর্থ্য নেই হামজার। সে জন্য দরকার আরো শক্তিশালী উদ্ধারকারী নৌযানের। সেটির ব্যবস্থা হচ্ছে।
এ ঘটনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই রুটে ১৯টি ফেরি চলাচল করে। তার মধ্যে কয়েকটি ফেরি পুরনো। আমানত শাহ ফেরিটি গত শতাব্দীর আশির দশকে কেনা। হিসাব মতে, এক বছর আগেই এটি মেয়াদোত্তীর্ণ। তার পরও ফেরি সঙ্কটের কারণে এটি জোড়াতালি দিয়ে চালু রাখা হয়। ফেরিটি গত বছর নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে মেরামত করা হয়। বুধবার ডুবে যাওয়ার সময় এটির তলা ফুটো হয়ে গিয়েছিল।
দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ফেরি পারাপার দেশের যোগাযোগব্যবস্থার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। ফেরি পারাপার নিয়ে প্রায়ই নানা অব্যবস্থাপনা দেখা যায়। কর্তৃপক্ষ নিজেদের স্বেচ্ছাচারিতা চালায়। যানবাহন পারাপারে সাধারণ মানুষ বৈষম্যের শিকার হন। তবে মেয়াদোত্তীর্ণ ত্রুটিযুক্ত ফেরির কারণে পণ্যদ্রব্যসহ যানবাহন ডুবে যাবে এটা অনাকাক্সিক্ষত ও দুঃখজনক। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন অনেক এগিয়েছে বলে সরকার ঢোল পেটায়। আসল ব্যাপার হচ্ছে, উন্নয়নের নামে দুর্নীতি-অনিয়ম-অপচয়ের শেষ নেই। হাজার হাজার কোটি টাকা নানাভাবে লোপাট করা হচ্ছে। ৪০ বছর চলাচলের পর কেন একটি ফেরি মেরামত করে চালাতে হবে। নতুন ফেরির দাম নিশ্চয়ই হাজার কোটি টাকা নয়। সরকার চাইলে স্বল্পদিনের নোটিশে ডজন ডজন ফেরি সংগ্রহ করতে পারে। আমরা মনে করি, পুরনো জরাজীর্ণ ফেরির জায়গায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক নতুন ফেরির ব্যবস্থা অচিরেই করতে হবে। অন্য দিকে এই দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করে কেউ দায়ী থাকলে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা