২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচন

প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই, তবুও সহিংসতা

-

নিকট অতীতেও দেশে যেকোনো নির্বাচন, বিশেষ করে স্থানীয় সরকারের প্রাথমিক স্তরের ইউপি নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হতো; কিন্তু সম্প্রতি নির্বাচন ‘একতরফা’ হওয়ায় ভোটারদের কাছে আকর্ষণ হারিয়েছে। নির্বাচন এখন আর প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নয়, আনুষ্ঠানিকতায় রূপ নিয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহনী ‘একতরফা’ এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মধ্যরাতে ব্যালটবাক্স ভরার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কিছু করতে পারেনি। বরং এ অপকর্মের সহযোগী ছিল বলে অভিযোগ আছে। একই সাথে স্থানীয় অনেক নির্বাচনও একই কায়দায় অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং হচ্ছে।
আমাদের নির্বাচনব্যবস্থা এখন বিবর্ণ এবং ভঙ্গুর। মানুষের ভোট দেয়ার আগ্রহ তলানিতে। এ অবস্থার জন্য বর্তমান ইসিই যে দায়ী, সে কথা বলা বাহুল্য। এ ধারাবাহিকতায় প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি বিএনপিহীন গত সোমবার দেশে এবার প্রথম ধাপের ২০৪টি ইউপি ও কয়েকটি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচনেও সহিংসতা, ইভিএমে ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দেয়াসহ নানা অনিয়মের বহু অভিযোগ উঠেছে। নিরুত্তাপ ভোটেও সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময়ই বিভিন্ন ইউনিয়নে সঙ্ঘাত-সংঘর্ষের ঘটনার পর শঙ্কা ছিল, নির্বাচনের দিন আরো সহিংস রূপ নিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে সে শঙ্কাই বাস্তবে রূপ নিয়েছে। বরিশালের গৌরনদী ও ভোলার চরফ্যাসনে তিনজন নিহত হওয়ায় পাশাপাশি আরো কয়েকটি ইউনিয়নে সংঘর্ষে আহতের সংখ্যা কম নয়।
বেশ কিছু ইউনিয়নে অনিয়ম-অস্বচ্ছতার অভিযোগে প্রার্থীদের ভোট বর্জনের ঘটনাও ঘটেছে। পাশাপাশি কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাইয়ের অভিযোগও উঠেছে। এরপরও নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলে ইসি ভাঙা রেকর্ড বাজিয়েছে। বলেছে, দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ২০৪টি ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। ইসির এমন দাবি নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে ২০৪টি ইউপির মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ২৮ জন। অথচ সবার জানা, অবাধ নির্বাচনের পূর্বশর্ত সব প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনেও ইসি যে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি, তা না বলাই ভালো। বিএনপি ছাড়া ব্যালট ও ইভিএমে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি দল অংশ নেয়। দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বেশি ঘটেছে।
নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় পুরো সময়টাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালনে ইসি পূর্বাপর ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েই চলেছে। শুধু সহিংসতাই নয়; নির্বাচনপ্রক্রিয়ার প্রায় ক্ষেত্রেই অস্বচ্ছতার অভিযোগ থেকে উতরে উঠতে পারেনি ইসি। অতীতে ইউপি নির্বাচন গ্রামীণ জনপদে উৎসবমুখর হলেও নির্বাচনকেন্দ্রিক নানামুখী সহিংসতা ও অনিয়মে ভোটের এই ঐতিহ্যবাহী মেজাজও ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে ইসি। অথচ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হচ্ছে নির্বাচনে অবাধ ভোট গ্রহণের আয়োজন করা; কিন্তু ইসির ব্যর্থতায় দেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা বিলীয়মান। আমাদের নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে অব্যবস্থা-অপূর্ণতা উৎকটভাবে দৃশ্যমান।
আমরা মনে করি, এবারের প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ যেমন নিশ্চিত করতে পারেনি ইসি; ঠিক তেমনিভাবে বিনা ভোটে অনেক প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ভোটারদের গণতান্ত্রিক অধিকার ভোটাধিকার খর্ব হয়েছে। যদিও জাতীয় সংসদের নির্বাচনেও নাগরিকদের ভোটাধিকার সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে ইসি। তাই বর্তমান ইসির প্রতি দেশের নাগরিকদের আস্থা শূন্যের কোঠায়। এ আস্থা পুনরুদ্ধার ইসিকেই করতে হবে। ক্ষমতা যথাযথভাবে ব্যবহার করে কেন সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করতে পারছে না ইসিÑ এর উত্তর দেয়ার দায়ও স্বাধীন এই সংস্থার ওপরই বর্তায়।


আরো সংবাদ



premium cement