১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
চট্টগ্রাম কারাগার থেকে আসামি উধাও

কর্তৃপক্ষের মনোযোগ কোন দিকে

-

আমাদের কারাগারগুলোও দুর্নীতি অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হওয়ার খবর প্রকাশ পাচ্ছে। পত্রপত্রিকার মতে, এগুলোর ভেতর হেন অপকর্ম নেই হচ্ছে না। কিছু দিন আগে আমরা দেখলাম, কারা প্রশাসনের যোগসাজশে এক কয়েদিকে নারীসঙ্গ লাভের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। কারাগারের শীর্ষ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ কেউ সরাসরি এ কাজে সহযোগিতা করছেন। এরপর নিজেদের বিরোধের জের ধরে সেটি আবার সংবাদমাধ্যমে খবর হয়ে পড়ে। এর আগে, কারা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অর্থ পাওয়ায় বরখাস্ত করা হয়। মামলায় তার খালাসপ্রাপ্তির আগে কারা প্রশাসনের একেবারে শীর্ষ পর্যায় থেকে তাকে নতুন করে পদায়ন করার জন্য উপর্যুপরি আবেদন জানানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। কতটা দেউলিয়া হয়ে গেলে কারা প্রশাসনের এমন অবস্থা হতে পারে? কয়েক দিন আগে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে হত্যা মামলার এক আসামি উধাও হয়ে গেছে। এভাবে আসামি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা দেশে নিকট অতীতে আরো ঘটেছে। খবরে জানা যাচ্ছে, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে হত্যা মামলায় আটক হাজতি মো: ফরহাদ হোসেন রুবেল উধাও হয়ে গেছেন। রুবেলের বিরুদ্ধে তার সহপাঠীকে হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে। হত্যার শিকার আবুল কালাম আবু নামে এক ভাঙ্গাড়ি ব্যবসায়ীর মা এ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। ৬ ফেব্রুয়ারি রুবেলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে ছিলেন। চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ কারাগার থেকে হাজতি উধাও হওয়ার ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় করা মামলায় উল্লেখ করে, রুবেল কর্ণফুলী ভবনের পঞ্চম তলার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ছিলেন। শনিবার ভোর ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে রুবেল ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে যান। এ ঘটনার পর একই দিন বিকেলে তার সন্ধানে কারাগারে বাজানো হয় ‘পাগলা ঘণ্টা’। নতুন করে গণনা করা হয় হাজতিদের। কারাগার থেকে বন্দী অপরাধীদের পালিয়ে যাওয়া একটি বিরাট ব্যাপার। কারাগারের ব্যবস্থাপনা এতটা কঠোর যে, সেখান থেকে বন্দী পালানোর সুযোগ থাকে না। তবে প্রশাসনের অসতর্কতা ও গাফিলতির কারণে এমনটা ঘটতে পারে। গত বছরের ৬ আগস্ট গাজীপুরের কাশিমপুরের কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে মই দিয়ে পালিয়ে যায় আবু বকর সিদ্দিক নামের ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি। তাকে এ যাবৎ আটক করা যায়নি বলে জানা যায়। এর আগে কুমিল্লা কারাগার থেকে পালিয়ে গেছে আরেক বন্দী। বড় কারাগারগুলো থেকে কেন আসামিরা পালাতে পারছে, এর জবাবে জানা গেছেÑ এসব কারাগারে কারা প্রশাসনের কাউকে নিয়োগ পেতে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিতে হয়। এ কারণে তারা সেই টাকা আয় করার জন্য নানা ফন্দিফিকির করতে থাকেন। ফলে যারা পালানোর জন্য ফাঁকফোকর খুঁজতে থাকে তাদের জন্য সুযোগ এসে যায়। একজন ক্যাপিটাল পানিশমেন্টের আসামি পালিয়ে যাওয়ার জন্য খোদ কারা প্রশাসনের কেউ সাহায্য করেছেন কি না সেই সন্দেহ কি উড়িয়ে দেয়া যায়? যেখানে প্রশাসনের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত দুর্নীতির জন্য নানা সময় অভিযুক্ত হচ্ছেন। এ ঘটনায় কারাগারের জেলার ও ডেপুটি জেলারকে প্রত্যাহার, দুই কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত এবং এক কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক। তিনটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কারাগার থেকে গুরুতর আসামি পালিয়ে যাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় যে ধরনের উদ্যোগ নেয়া হলো, সেটি যথার্থ বলতে হবে। ঠিক এ ধরনের সতর্কতা কারা কর্তৃপক্ষ সর্বদা পালন করা উচিত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কারা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্তাব্যক্তির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠছে, তাতে মনে হয় না প্রশাসন দায়িত্ব পালনে যতœবান। বিশেষ করে তাদের অবৈধ প্রক্রিয়ায় অর্থ কামানোর যে অভিযোগ উঠছে সেটি উদ্বেগজনক। কারা প্রশাসনের অভ্যন্তরে দুর্নীতির যে প্রতিযোগিতা তা বন্ধ করা না গেলে আরো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ইতোমধ্যে কারা হেফাজতে বিভিন্ন সময় মানুষ মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এ জন্য কারা প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান প্রয়োজন। যেন এখানে এসে অপরাধীরা নতুন মাত্রায় অপরাধী হয়ে না ওঠে বরং সংশোধিত হতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement