২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
বরেন্দ্র ভূমিতে সামুদ্রিক শৈবালের চাষ

বাণিজ্যিক সাফল্য প্রয়োজন

-

‘সমুদ্রের ক্ষারীয় পানিতে সুতার মতো ভেসে থাকে ক্ষুদ্র শৈবাল স্পিরুলিনা। নীলাভ সবুজ এই শৈবাল সূর্যালোকের সাহায্যে দেহের প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করে। প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ থাকায় খাদ্য উপাদান হিসেবে তো বটেই, নানা রোগ-নিরাময়েও দেশে-বিদেশে বেশ চাহিদা স্পিরুলিনার। বরেন্দ্র ভূমি হিসেবে পরিচিত রাজশাহীর তানোরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে সামুদ্রিক এই শৈবালের।’
একটি সহযোগী দৈনিক পত্রিকায় একটি রিপোর্টের প্রথম পরিচ্ছেদ এটি। রাজশাহী থেকে পাঠানো এই প্রতিবেদনের সাথে একটি ছবি। নিচে ক্যাপশনÑ ‘সামুদ্রিক শৈবাল স্পিরুলিনা চাষের জন্য নির্মাণ করা কৃত্রিম জলাধার। সেখান থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে শৈবাল।’ এ দৃশ্য তানোর উপজেলার আমশো নামক গ্রামের।
একজন কলেজশিক্ষক বাণিজ্যিকভাবে শৈবাল চাষ শুরু করেছেন। স্থানীয় একজন ‘স্বশিক্ষিত কৃষিবিজ্ঞানী’র সহায়তায় তিনি এ কাজ করছেন। গত ৪ মার্চ সর্বপ্রথম আহরণ করা হলো এ শৈবাল। দাবি করা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে এর চেয়ে বৃহৎ পরিসরে কেউ এর চাষ করেননি।’ উল্লেখ্য, স্পিরুলিনা চাষের সুবিধার্থে ১৭ হাজার লিটার পানির জলাধার বানানো হয়েছে আমশো গ্রামে। এতে সূর্যালোক ঢোকার জন্য স্বচ্ছ প্লাস্টিক দিয়ে ঘর নির্মিত হয়েছে। গত ৪ জানুয়ারি ‘বীজ’ হিসেবে ১৫ লিটার পানি জলাধারে ঢালার পর কৃত্রিম উপায়ে শৈবাল বড় হচ্ছে। জানা যায়, ঝিনাইদহের একজন শৈবালচাষি দেলোয়ার হোসেন সারা দেশে স্পিরুলিনা উৎপাদনের ট্রেনিং দিয়ে আসছেন। তার কাছ থেকেই তানোরের কলেজশিক্ষক রাকিবুল সরকার এবং কৃষি গবেষক নূর মোহাম্মদ প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। শেষোক্ত জন ছয়টি প্রজাতির ধানও উদ্ভাবন করেছেন।
সমুদ্রের পানির উপাদানের জন্য সংশ্লিষ্ট জলাধারে ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। এ যাবৎ এক লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এ জন্য। এতে মাস ছয়েকের প্রয়োজন পূরণ হবে। এরপর পানির মাত্রা বাড়াতে প্রয়োজনের অনুপাতে একই উপাদান দিতে হবে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত উদ্যোক্তার সাড়ে তিন লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ৪-৫ মাসে এ বিনিয়োগ উঠে আসবে। এক সপ্তাহ পরপর আহরণের পাশাপাশি, মাসে শুকনা শৈবালের পরিমাণ ৩০ থেকে ৪০ কেজি হতে পারে। রোদ বেশি থাকলে উৎপাদন বেশি হবে। ছাঁকনি দিয়ে শৈবাল সংগ্রহ করা হয়। কাঁচা শৈবাল শুকালে ওজন হয়ে যায় আগের তিন ভাগের এক ভাগ।
এ দিকে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের পূর্বোক্ত শৈবালচাষি জানান, তিনি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের কাছে স্পিরুলিনা চাষের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। গত বছর থেকে বেসরকারিভাবে কৃত্রিম জলাধারে এর চাষের ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। দেশের প্রায় দেড় শ’ জলাধারের মধ্যে তানোরেরটা সর্ববৃহৎ। চাষিরা আড়াই হাজার টাকা কেজি দরে এ শৈবাল বিক্রি করছেন। প্রক্রিয়াজাত করার পর এর দাম ওঠে ছয় হাজার টাকায়। ঝিনাইদহের প্রশিক্ষক আরো জানান, দেশে রঙিন মাছ চাষের জন্য স্পিরুলিনা অনেক দামে থাইল্যান্ড থেকে আনা হচ্ছে। কিন্তু দেশে উৎপাদিত হলে এর দাম অনেক কমে যায়। ওই শৈবালের মধ্যে ক্ষতিকর বস্তু তো নেই-ই; বরং এর পুষ্টিমান ডিম, দুধ, গোশত, মাছ ও শাকসবজির চেয়েও বেশি।
আমরা আশা করি, বহুলালোচিত স্পিরুলিনা শৈবাল চাষের জন্য সরকার শিগগির ও সাধ্যমতো সহায়তা প্রদান করবে। তা ছাড়া শুধু গবেষণা বা উদ্ভাবন নয়, পণ্যের বাণিজ্যিক উৎপাদনে সফলতা আনতে হবে। অন্যথায় এর ব্যাপক প্রচলন ও জনপ্রিয়তা সম্ভব নয়।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল