রক্ষা করুন উচ্চশিক্ষা খাত
- ০৫ মার্চ ২০২১, ০১:২৫
বিশ্ববিদ্যালয় মানে সর্বোচ্চ পর্যায়ের জ্ঞান-বিজ্ঞান নিয়ে পঠন-পাঠন, চর্চা, আলোচনা-পর্যালোচনা ও গবেষণার স্থান। পাঠদানের উৎকর্ষ কতটা অর্জিত হয়েছে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগতে বিশ্বজুড়ে নতুন কী কী সংযোজন বা উদ্ভাবন হয়েছে সেসব বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক, মতবিনিময় হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিয়মিত আয়োজন হবে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম-পাঠচক্র। বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ চিন্তাবিদ, অধ্যাপক, গবেষকরা নিজেদের এবং গোটা বিশ্বের জ্ঞান-জগতের নতুন নতুন উদ্ভাবন চিন্তাভাবনা প্রকাশ করবেন এখানে। বের হবে জ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুগোপযোগী জার্নাল। ছাত্র-শিক্ষকরা জড়িত থাকবেন প্রতিনিয়ত সৃষ্টিশীল বিষয় নিয়ে। এমনটাই হওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি গত এক যুগে একেবারেই পাল্টে গেছে। এগুলো নিয়ে আলোচনার বিষয় একটি বিন্দুতে এসে ঠেকেছে। আর সেটি হলো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা-দুর্নীতিতে কতটা জড়িয়ে পড়েছে।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসিরা জড়িয়ে পড়েছেন অনিয়ম-দুর্নীতিতে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে অর্থ আত্মসাৎ, আত্মীয়করণ ও দলীয়করণের। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন একেকটি দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। আর ভিসি এসব দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্ণধার। কেন এমন হলো কেউ প্রশ্ন তুলছে না। এ নিয়ে সরকারের কোনো বিকার নেই।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি শহীদুর রহমান খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিজের ছেলে-মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দিয়েছেন। এরপর চেষ্টা করছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত স্ত্রীকে অধ্যাপক পদে নিয়োগ দিতে। পরিবারের যোগ্য প্রার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পেতেই পারেন। কিন্তু অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এই ভিসির বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ১৫টি অভিযোগ তদন্ত করছে। ভিসিদের বিরুদ্ধে এই প্রথম দেখা যাচ্ছে অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ। রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নাজমুল আহসান কলিমউল্লøাহর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’টি ১০ তলা ভবন ও একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজে অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে ইউজিসি।
যেসব খবর প্রকাশিত হচ্ছে তাতে মানুষের মনে ধাঁধা লাগার উপক্রম যে, আসলে একজন ভিসির কাজ কী? কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার ৪৫টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ক্যাম্পাসে ধারাবাহিক অনুপস্থিতি, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনা ধামাচাপা দেয়া, দুর্নীতির মাধ্যমে জনবল নিয়োগ, ইচ্ছামাফিক পদোন্নতি, জোর করে বিভিন্ন পদ দখল ইত্যাদি। সবগুলোই গুরুতর অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে যখন অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া গেল সেই সময় দেখা গেল, তিনি অন্য আরেকজন অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষে সাফাই গাইছেন। সম্প্রতি গবেষণাপত্রে চৌর্যবৃত্তির দায়ে শাস্তি পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক। তাদের মধ্যে একজনকে দেখা গেল, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ওই কলিমউল্লøাহকে পাশে নিয়ে নিজের নির্দোষিতার পক্ষে সাফাই গাইছেন। দুর্ভাগ্য আমাদের।
সরকার নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি দিতে অত্যন্ত উদার। এ জন্য ডজন ডজন বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছে। কিন্তু এগুলোতে উন্নতমানের শিক্ষা দেয়া হবে সে ব্যাপারে একেবারে নির্বিকার। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি দিয়ে ভাবটি এমন যে, অনেক কিছু করে ফেলেছি। সেখানে এখন শিক্ষার বদলে কিছু ব্যক্তির নেতৃত্বে অনিয়ম-দুর্নীতির চর্চা হচ্ছে। ১৩টি স্বায়ত্তশাসিত এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের তদন্ত করছে ইউজিসি। এর মধ্যে ১০ ভিসির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। বাস্তবতা হচ্ছে, ইউজিসি দুর্নীতির ব্যাপকতা সামলে উঠতে পারছে না। অভিযোগের সংখ্যা অনেক বেশি। কিছু ক্ষেত্রে তারা চেষ্টা করছেন যাতে অন্ততপক্ষে কিছু সাফাই গাওয়া যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষকদের অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠবে এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। যেকোনো মূল্যে দুর্নীতিবাজদের এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায় করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানই যদি দুর্নীতিবাজ হন তাহলে সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নীতিনৈতিকতা, সততার সাথে জ্ঞানের চর্চা করতে পারবেন এমন চিন্তার কোনো অবকাশ আর থাকে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা