২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৬ শাবান ১৪৪৬
`
দেশ অস্থিতিশীল করতে পতিত শক্তির পাঁয়তারা

ঐক্যবদ্ধ হয়ে অপতৎপরতা রুখতে হবে

-

ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর থেকে দেশ যাতে শৃঙ্খলায় ফিরতে না পারে সে জন্য স্বৈরাচারের দোসররা অপতৎপরতায় লিপ্ত। ফ্যাসিবাদ-উত্তর ছয় মাস অতিক্রান্ত হলেও অপশক্তি সক্রিয় থাকার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তারা ফায়দা নিতে চায়। দেশে সংঘটিত আরো বেশ কিছু ঘটনা তাদের অপতৎপরতার ইঙ্গিতবাহী।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে সরকার নানা ধরনের পরিকল্পনা নিয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব:) মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গত সোমবার বলেছেন, সন্ধ্যার পর থেকে কঠোর অবস্থানে নামছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। এ ছাড়া এ নিয়ে একই দিন আইন উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবসহ সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা জোরালো প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে স্বৈরাচারের দোসররা দেশকে চরম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র আঁটছে। অবস্থা দৃষ্টে এটি সহজে অনুমেয়, নানা ইস্যুতে কাজ করছে হাসিনার দোসররা। ৫ আগস্ট হাসিনার দেশ ছেড়ে পালানোর পর আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী রাতারাতি ভোল পাল্টেছে। এরা বিভিন্ন পক্ষের সাথে মিশে অন্তর্ঘাতমূলক নানা কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে। ঢাকায় হঠাৎ করে ছিনতাই-চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এর সাথে জড়িত রয়েছে আওয়ামী সমর্থিত সাবেক কাউন্সিলর ও তাদের সহযোগীরা। তাদের নিয়ন্ত্রিত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এ ক্ষেত্রে মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে কিছু দিবসকেন্দ্রিক বিতর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ণের অপচেষ্টা করা হতে পারে। যেমন- ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখকে নিশানা করা হতে পারে। ওই দিনের মঙ্গল শোভাযাত্রা ইউনেস্কো স্বীকৃত। এবারের এই শোভাযাত্রায় বিঘ্ণ ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা চালাতে পারে। যাতে দেশকে বহির্বিশ্বে হেয় করা যায়। এ ছাড়া পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে কোনো হামলা হলে সেখানে বাংলাদেশে উগ্রবাদের উত্থানের একটি প্রচারণা চালানোর নিশানা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে হাসিনার দোসররা নিজেরা তৌহিদি জনতা সেজে ওই হামলা চালাতে পারে। ইতঃপূর্বে গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের একটি অডিও ভাইরাল হয়। তাতে শোনা গেছে, তার বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। ঢাকার মানুষকে শুধু রাতেই নয়, দিনের বেলায়ও ঘুমাতে দেবে না। রাজধানীর আইনশৃঙ্খলার অবনতির পেছনে এদের গভীর যোগসাজশ থাকাটা স্বাভাবিক।
ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক ও সামাজিক দলগুলোর ভেতরে কোন্দল বাধানোর পরিকল্পনা নিয়েও এগোচ্ছে পতিত স্বৈরাচার। সে ক্ষেত্রে পুলিশসহ সরকারি পর্যায়ে ফ্যাসিবাদের দোসরদের কাজে লাগাতে পারে এই অপশক্তি। পেশাজীবীদের দাবিদাওয়ার মিছিলে-বিক্ষোভে স্বৈরাচারের লোকজন অনুপ্রবেশ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, এমনকি লাশ ফেলতে পারে। নারীদের লাঞ্ছিত করে নারীবাদীদের উসকে দেয়া হতে পারে। ফ্যাসিবাদী জমানায় যেসব নারীবাদী সংগঠন শত অঘটন ঘটলেও নীরব ছিল; এখন ঠুনকো ঘটনায়ও মাঠে সরব হওয়ার চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশ নিয়ে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত এখনো জোরেশোরে চলছে, তা নিশ্চিত করে বলা যায়। সরকারের একার পক্ষে এই অস্থিরতা দমন করা কঠিন। এ জন্য দরকার ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক শক্তিসহ দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতার ঐক্য। সব মতভেদ একপাশে সরিয়ে সবাইকে দেশের স্বার্থে এখন ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement