ক্যাম্পাসে নৈরাজ্য কাম্য নয়
- ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্ররাজনীতি নিয়ে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। গত মঙ্গলবারের এই সংঘর্ষে আহত হন শতাধিক শিক্ষার্থী।
গত সাড়ে ১৫ বছরে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখেছি, ছাত্র-রাজনীতির নামে কিভাবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল। হল দখল, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সিট জিম্মি করে শিক্ষার্থীদের জবরদস্তিমূলকভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিয়ে যাওয়া, নিকৃষ্ট ‘গেস্ট রুম’ কালচার, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নিয়োগবাণিজ্য, চাকরি ও ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসসহ এমন কোনো কাজ ছিল না যা বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী ছাত্রলীগ করেনি। সব ক্যাম্পাসে ভিন্নমতের ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের কার্যক্রম কার্যত নিষিদ্ধ করে রেখেছিল তারা। বিরোধী ছাত্ররাজনীতির নেতাকর্মীদের ওপর বছরজুড়েই চলত নির্যাতন ও নিপীড়ন। হল থেকে পিটিয়ে বের করে দিয়ে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানো ছিল ছাত্রলীগের নিত্যদিনের কাজ। রেহাই পেত না সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। যেমন- বুয়েটের আবরার ফাহাদ। ভারতের পানি আগ্রাসন নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার ঘটনায় ছাত্রলীগের গুণ্ডারা আবরারকে রাতভর পিটিয়ে হত্যা করে।
এমনই এক অবস্থায় গত জুলাই আন্দোলনের সময় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি ওঠে। অবশেষে ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের পর কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ। এর আগে আবরার ফাহাদকে হত্যার পর শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে কর্তৃপক্ষ বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। বিগত সময়ের ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজনীতির কারণে ছাত্রদের মধ্যে যে এক ধরনের ট্রমা কাজ করছিল, সেটি ভুলে যেতে কুয়েট কর্তৃপক্ষের রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অবশ্যই সময়োপযোগী ছিল।
ছাত্ররাজনীতি চালুর দাবিতে গত মঙ্গলবার কুয়েটে যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হলো তা অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত। দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মারামারি ছাত্রলীগের সেই ত্রাসের রাজনীতির কথাই কেবল মনে করিয়ে দেয়, যা সাধারণ শিক্ষার্থীরা রীতিমতো ঘৃণা করে। ৫ আগস্ট-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এমন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ কারোরই কাম্য নয়।
আমরা কুয়েটের ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করি। সেই সাথে যারা প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে তাদেরসহ এই সংঘর্ষে জড়িত অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।
ছাত্রসংগঠনের নেতাদের মনে রাখতে হবে, তাদের রাজনীতি মূলত শিক্ষার্থীদের কল্যাণ নিয়ে। কোনো ছাত্রসংগঠনের রাজনীতি শিক্ষার্থীরা অপছন্দ করলে তাদের পক্ষে রাজনীতি করা কঠিন হতে পারে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা যদি কোনো ছাত্রসংগঠনের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ে তাহলে তারা তা মোকাবেলার পথ খুঁজবে।
বাংলাদেশের মতো দেশে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তা আছে কি না কিংবা থাকলেও এখন এর পরিধি কেমন হওয়া উচিত- তা নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক আলোচনা হওয়া দরকার। ৫ আগস্ট-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতি যদি ছাত্রলীগের রাজনীতির মতোই থাকে তাহলে তা যে ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না, বলা বাহুল্য।
আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্থিতিশীল পরিবেশ চাই। ক্যাম্পাসে কোনো কারণে এক দিনের জন্যও যেন ক্লাস, পরীক্ষা বন্ধ না থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনসহ ছাত্রসংগঠনগুলোরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা