২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ ফাল্গুন ১৪৩০, ২২ শাবান ১৪৪৬
`
সম্মেলনে ডিসিদের খোলামনে আলোচনা

দরকার চাপমুক্ত সৎ-দক্ষ প্রশাসন

-

বাংলাদেশে মাঠপ্রশাসনের কেন্দ্রে রয়েছেন জেলা প্রশাসক বা ডিসি। সরকারের নীতি-কৌশল স্থানীয় পর্যায়ে বাস্তবায়নের সরকারি প্রতিনিধি তারা। ডিসিদের দক্ষতা, যোগ্যতা ও স্বাধীনভাবে কাজের সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে একটি সরকারের সফলতা-ব্যর্থতা। জনগণকে দমন করে ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করাই ছিল হাসিনা সরকারের একমাত্র লক্ষ্য। বিগত দিনে জনসেবার বদলে দুঃশাসন চাপানো হয় মাঠপ্রশাসনের মাধ্যমে। সেই মাঠপ্রশাসনের প্রধান ডিসি সম্মেলন শুরু হয়েছে গত রোববার। সেখানে সারা দেশ থেকে আসা ডিসিরা তাদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ তুলে ধরেন। তাদের বক্তব্যে নতুন এক বার্তা পাওয়া গেল। তারা কোনো ধরনের চাপ ছাড়া স্বাধীনভাবে খোলামেলা কথা বলেছেন। এই অবস্থায় তাদের দেয়া প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা গেলে জনবান্ধব সরকারব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।
মুক্ত অলোচনায় ডিসিরা জানান, তারা গতানুগতিক এক শাসন পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন। যেখানে ক্ষমতার পালাবদলে তাদের পরিচালনাকারী ঊর্ধ্বতনদের পরিবর্তন হয়। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে নতুন পক্ষ খবরদারি কর্তৃপক্ষ হিসেবে হাজির হয়। এ চক্রের সাথে আপস করে তাদের চলতে হয়। অসাধু চক্রের লক্ষ্য থাকে বালুমহাল, জলমহাল ও হাটবাজার ইজারা, সরকারি কাজে দুর্নীতি-অনিয়মের দরজা খুলে দেয়া, সরকারি সম্পত্তি দখলভোগ, অবৈধ ব্যবসায় ও চাঁদাবাজির অবাধ সুযোগ আদায় করা। প্রশাসন পরিচালনায় ডিসিদের স্থানীয় এ অবৈধ সুবিধাভোগীদের চাপের মুখে কাজ করতে হয়। কেউ নিজেকে বাঁচিয়ে কোনোরকমে তার দায়িত্ব পালন করেন। অনেকে অন্যায়কারী চক্রের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যান।

নির্বাচনে সরকারের পক্ষ হয়ে কাজের চাপ, যা বিগত হাসিনা আমলে বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়। যারা অন্যায় অনিয়মে সাড়া দেবেন, হাসিনা সরকার তাদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা পুরস্কার পদোন্নতি ও আনুকূল্য দেয়ার নীতি নেয়। এর মাধ্যমে সারা দেশে জঙ্গলের শাসন কায়েম করা হয়েছিল। ডিসিদের ওপর ক্ষমতাসীন সরকারের আশকারায় যে অসাধু চক্র চেপে বসে তাদের দৃশ্যপট থেকে বিদায় করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের তালিকায় এই দুষ্টচক্রের উৎপাটনে কার্যকর পরিকল্পনা থাকতে হবে। এখনো ডিসিদের কিছু ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জে পড়তে হচ্ছে। তবে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে সরকারের ইতিবাচক দিকটি ডিসিদের ভাষায় প্রকাশ পেয়েছে। তারা জানালেন, জেলা প্রশাসন এখন একটি সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে চলছে। আগে যেখানে প্রশাসন পরিচালনার জেলায় আলাদা আলাদা ভরকেন্দ্র ছিল, এখন জেলা প্রশাসক-পুলিশ সুপার ও অন্যরা নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া ও সমন্বয় করে কাজ করছেন। জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছাতে হলে এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
ডিসিদের উদ্দেশে ভাষণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সবধরনের ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে প্রশাসন পরিচালনা করতে হবে। এতদিনকার নিয়ম ছিল মাঠপ্রশাসন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে; বিদ্যমান সরকারের কর্তাব্যক্তিদের স্তাবকতা করবে। এ প্রথা ভেঙে দিতে প্রধান উপদেষ্টা আহ্বান জানিয়েছেন। ডিসিদের উদ্দেশে ভাষণে স্পষ্ট করে তিনি বলেন, ‘সরকারপ্রধান বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অহেতুক স্তুতি বা প্রশংসার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’ আশা করা যায়, সংস্কারের চলমান উদ্যোগ যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে আমরা একটি দক্ষ, সৎ ও সক্ষম প্রশাসন পাবো।

 


আরো সংবাদ



premium cement