০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ মাঘ ১৪৩১, ৯ শাবান ১৪৪৬
`
গ্রাহকের ১০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা

প্রতারকদের দমন করুন

-

একটি সহযোগী দৈনিকের খুলনা প্রতিনিধি জানান, প্রতি মাসে এক লাখ টাকায় ১২০০ টাকা মুনাফা দেয়া হবে- এমন প্রলোভনে পড়ে তিলে তিলে সঞ্চয় করা আট লাখ টাকা সমিতিতে জমা রাখেন রানাই গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান। কিন্তু হঠাৎ তার সঞ্চিত টাকা নিয়ে উধাও ‘সুপ্রভাত’ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি। থানায় অভিযোগ দিয়েও টাকা ফেরত পাচ্ছেন না তিনি। ফলে স্বাবলম্বী হওয়ার বদলে নিঃস্ব হয়ে এখন ভ্যানচালক তিনি।
শুধু কৃষক হাবিবুর রহমান নন, ৯০০ গ্রাহকের কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া বাজারে প্রতিষ্ঠিত সুপ্রভাত সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি। হঠাৎ ২৭ ডিসেম্বর থেকে তাদের নিজ কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। এ ঘটনার পরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গ্রাহকরা। সঞ্চিত টাকা খুইয়ে তাদের স্বপ্ন ভেঙেছে। সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগও করেছেন অনেকেই।
২০১২ সালে রানাই গ্রামের বাসিন্দা হাশেম খানের ছেলে ও সমিতির পরিচালক বাবলু খান সুপ্রভাত সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি গড়ে তোলেন। ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ২০১২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তার সমিতিতে ৯০০ গ্রাহক তৈরি হয়। দীর্ঘ এই সময়ে প্রত্যেক গ্রাহকই সমিতিতে মাসিক কিস্তিতে মোটা অঙ্কের অর্থ সঞ্চয় করেন। এ ছাড়া মাসে এককালীন এক লাখ টাকায় ১২০০ টাকা মুনাফা দেয়ার খপ্পরে পড়ে অনেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় করেন। বিপুল নারী-পুরুষের কাছ থেকে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে সমিতিটি।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা জানান, ডকুমেন্ট হিসেবে পাস বই ধরিয়ে দিয়ে ৯০০ গ্রাহকের কাছ থেকে ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এতে সবার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। দুশ্চিন্তায় অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
এই প্রসঙ্গে ডুমুরিয়া থানার ওসি মাসুদ রানা বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত চলছে। ঊর্ধ্বতনদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গ্রাহকদের টাকা নিয়ে সমবায় সমিতির লাপাত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা জেলা সমবায় কর্মকর্তা সৈয়দ জসীম উদ্দিন বলেন, আসলে যে কাজের জন্য সমিতির অনুমতি দেয়া হয়, সমিতি সে কাজগুলোই করে না। গোপনে সমিতিগুলো অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে লেনদেন কার্যক্রম করে। কিন্তু আমরা জানতে পারি না। কারণ খাতা-কলমে এসব লেনদেনের উল্লেখ থাকে না। যখন আমরা জানতে পারি, তখন আর উপায় থাকে না। এ বিষয়ে মানুষকে ‘সচেতন’ করা হচ্ছে। তবে ‘গ্রাহকরা অভিযোগ দিলে’ বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রতারণা বড় ধরনের পাপ। তাই প্রতারকদের দমন করতে হবে। গ্রাহকদের কষ্টার্জিত টাকা নিয়ে কোনো সমিতির কর্মকর্তা লাপাত্তা হতে পারেন না। এটা বিশ্বাসভঙ্গের শামিল ও ভারী অন্যায়। সরকারের অবিলম্বে এ ব্যাপারে দৃষ্টি দেয়া দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement