সুযোগ খুঁজে নিতে হবে
- ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি বিশ্বে বড় ধরনের বাণিজ্যযুদ্ধের সূচনা করেছে। গত শনিবার ঘনিষ্ঠ দুই মিত্র দেশ কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীনের পণ্যের ওপর আগের নির্ধারিত শুল্কের অতিরিক্ত আরো ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করেন তিনি। ‘সবার আগে আমেরিকা’ বা আমেরিকা ফার্স্ট নীতির আওতায় ট্রাম্পের আরোপিত এ শুল্ক আজ মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে। এর বিরুদ্ধে দেশ তিনটি পাল্টা ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। কানাডা আজ থেকে মার্কিন পণ্যে সমপরিমাণ শুল্ক আরোপ করছে। চীন আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অভিযোগ করছে। মেক্সিকো সম্ভাব্য পদক্ষেপ পর্যালোচনা করছে।
শুধু শুল্ক আরোপই নয়; বিশ্বে আরেকটি বড় দ্বন্দ্বের ঘটনা ঘটে চলেছে ব্রিকস নামের রাষ্ট্রগুলোর জোট ঘিরে। ট্রাম্প এ জোটের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, মার্কিন ডলারের জন্য ক্ষতিকর কোনো পদক্ষেপ তিনি সহ্য করবেন না। ব্রিকস দেশগুলো ডলারের একচেটিয়া প্রভাব কমানো শুধু নয়, ডলারের একটি বিকল্প মুদ্রার প্রচলন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বিশ্ব অর্থনীতির নির্ভরতা কাটিয়ে নতুন অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠারও চেষ্টা করছে। দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের সবচয়ে ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হুঁশিয়ারিতে কাজ হচ্ছে না। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর দু’টি সদস্য দেশ তুরস্ক ও সার্বিয়া ব্রিকসে যোগ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এতে দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে উঠবে।
বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতির ফলে বিশ্বে একধরনের সংরক্ষণবাদের বিকাশ ঘটতে পারে। অর্থাৎ সব দেশ নিজস্ব পণ্য উৎপাদকদের স্বার্থ রক্ষায় আমদানি পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ করতে পারে। সে জন্য বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশেরও চিন্তার কারণ আছে। আমাদের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরী পোশাকের প্রধান গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। ট্রাম্প ইইউর ওপরও শুল্ক আরোপ করবেন। ইইউ বাড়তি শুল্ক চাপিয়ে দিলে বাংলাদেশের জন্য বিপদ আসতে পারে। তবে একটি সুযোগও যে আসবে না এমন নয়।
চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্র বাড়তি শুল্ক আরোপ করায় বাংলাদেশের রফতানি বাড়তে পারে। এমন সম্ভাবনার কথা বলছেন দেশের অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের রফতানি বাড়তে পারে। একই সাথে, অনেক বিনিয়োগকারী চীন থেকে কারখানা সরিয়ে নিতে বাধ্য হতে পারেন। এসব শিল্প-কারখানা বাংলাদেশে স্থাপনের সুযোগ দেয়া যেতে পারে।
একটি জাতীয় দৈনিককে দেয়া বক্তব্যে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) একজন গবেষণা পরিচালক বলেন, স্বল্পমেয়াদে বাংলাদেশ ক্রয়াদেশ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুফল পেতে পারে। কম ও মাঝারি দামের পোশাকের ক্রয়াদেশের একটি অংশও বাংলাদেশে আসতে পারে। চীনের যেসব কোম্পানি জাপান, কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানি করে সেগুলোও এখন কারখানা অন্য দেশে সরিয়ে নিতে বাধ্য হতে পারে।
অর্থাৎ বাংলাদেশের জন্য সুযোগ আছে বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ থেকে সুবিধা তোলার। তবে এ দেশে রাজনৈতিক স্থিতির অভাব ভাবনার বিষয়। সম্প্রতি গণ-অভ্যুত্থানে দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন ঘটলেও দেশ এখনো স্থিতিশীল নয়। দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়া ফ্যাসিস্ট শাসক ও তার দোসররা এখনো নানাভাবে অস্থিরতা জিইয়ে রাখার অপচেষ্টা করছে। এর ফলে আগামী দিনেও বাংলাদেশের জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া দুরূহ হতে পারে। তবু চেষ্টা করতে হবে।
আমরা মনে করি, সরকার আনুকূল্য দিলে এবং বেসরকারি খাত এগিয়ে এলে বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ থেকে সৃষ্ট সুযোগের সদ্ব্যবহার করা সম্ভব।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা