০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০ মাঘ ১৪৩১, ৩ শাবান ১৪৪৬
`
গ্রীষ্মে তীব্র বিদ্যুৎ সঙ্কটের আশঙ্কা

সমাধানে সময়মতো নজর দিন

-

লুটেরা সরকারের অবৈধ অর্থ তসরুপের প্রধান খাত ছিল জ্বালানি, বিশেষত বিদ্যুৎ খাত। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর আওয়াজ তুলে এলোপাতাড়ি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। অপরিণামদর্শী এসব প্রকল্পে সরকারি কোষাগার থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়া হলেও বিদ্যুৎ পরিস্থিতির টেকসই উন্নয়ন ঘটেনি। বেপরোয়া অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে অন্তর্বর্তী সরকারকেও বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে। আসন্ন গ্রীষ্ম মৌসুমে দেশ তীব্র বিদ্যুৎ সঙ্কটের মধ্যে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শীত শেষ না হতেই দেশে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। এ দিকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি শুরু হবে কৃষিকাজে সেচ কার্যক্রম। এরপর সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমেই বাড়তে থাকবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রীষ্মে সারা দেশে প্রচণ্ড তাপদাহ হচ্ছে। বেশির ভাগ অঞ্চলে তাপমাত্রা সহ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। এবারো গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে। এই সময়ে দেশে চাহিদা বেড়ে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার মেগাওয়াটে দাঁড়াতে পারে। অথচ এই সময়ে দেশে বিদ্যুতের সংস্থান হতে পারে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার মেগাওয়াট। পতিত সরকার চোখ বুঁজে একের পর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছে। কাগজ-কলমে এগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি, যা গড় চাহিদার প্রায় দ্বিগুণ। এ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করা যেত। বাস্তব পরিস্থিতি পুরো উল্টো। আমরা ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করছি। এমনকি দুর্নীতিবাজ মুনাফাখোর আদানির কাছ থেকে বিপুল উচ্চমূল্যে আমদানি করতে হচ্ছে।
একের পর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হলেও এগুলোর জ্বালানির উৎস নিয়ে মোটেও ভাবা হয়নি। বিশাল অবকাঠামো নিয়ে একেকটি কেন্দ্র তৈরি হলেও নিয়মিত উৎপাদনে যেতে পারে না। বড় একটি অংশ অলস পড়ে থাকে। অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে যুক্ত হয়েছে চলমান কেন্দ্রের বকেয়া পাওনা। পতিত সরকার কেন্দ্রগুলোর পাওনা পরিশোধ করেনি। গত নভেম্বরে তাদের বকেয়া দাঁড়ায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। অর্থের অভাবে জ্বালানি সংগ্রহ করতে না পারায় বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদকরা কেন্দ্র সচল রাখতে পারছে না। ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল পরিচালিত কেন্দ্রগুলো জ্বালানি সঙ্কটে উৎপাদনে সক্ষমতা হারাচ্ছে। এি দকে কয়লা আমদানি ও যথাসময়ে পৌঁছাতে নানা জটিলতায় পড়ে সেগুলোর উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির পাশাপাশি ব্যাংকে অর্থ না থাকায় জ্বালানি কেনায় প্রভাব পড়ছে। ফলে আসন্ন গ্রীষ্মে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন।
জ্বলানি খাতে পতিত সরকার যে হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরি করেছে তা থেকে আশু মুক্তির পথ নেই। কুইক রেন্টালের নামে ক্ষমতাসীন চক্র নিজেদের পছন্দের লোকদের হাতে জ্বালানি খাতকে একরকম ইজারা দিয়েছিল। এ থেকে সৃষ্ট জটিলতার কারণেই আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তা ভঙ্গুর ও টালমাটাল হয়ে গেছে। এ অবস্থায় এক দিনে সমাধান আশা করা যায় না। নানা আইন করে বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতিবাজদের বাঁচানোর যে রক্ষাকবচ দেয়া হয়েছে জাতিকে তা থেকে উদ্ধার করতে হবে। এরপর দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ নিয়ে বিদ্যুৎ খাতকে সুস্থ ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হবে।
তবে আসন্ন বিদ্যুৎ সঙ্কট মোকাবেলায় সরকার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবে- এটিই প্রত্যাশা।


আরো সংবাদ



premium cement