৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩১, ২৯ রজব ১৪৪৬
`
ঢাকার সাত কলেজ নিয়ে সঙ্কট

সুচিন্তিত সমাধান প্রয়োজন

-

পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া কোনো কাজ যে ভালো ফল বয়ে আনে না; তা বলাই বাহুল্য। সুচিন্তিত না হলে এক সময় না এক সময় জটিলতার আবর্তে নিপতিত হয় ব্যক্তি, সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় জীবন। কিন্তু আমাদের দেশে সব বিষয়ে যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রবণতা তীব্রভাবে বিদ্যমান। শিক্ষা ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নজির সবচেয়ে বেশি। এর সর্বশেষ দৃষ্টান্ত ঢাকার সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা। কাজটি ভেবেচিন্তে করা হয়নি তা এখন প্রমাণিত সত্য।
এসব কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ছিল। নিয়মিত ক্লাস নিয়ে পরীক্ষা নেয়া, সময়মতো ফল প্রকাশ, সেশনজট কমানোসহ মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রায় আট বছর আগে এসব কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন আনা হয়। কিন্তু আট বছরেও সব সমস্যার সমাধান হয়নি। শিক্ষাবিষয়ক সমস্যাগুলোর পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কিছু ‘অবহেলা’র অভিযোগও সামনে এসেছে। অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হওয়ার পর আগের চেয়ে পড়াশোনায় কিছু বিষয়ে অগ্রগতিও হয়েছে।
ফ্যাসিস্ট হাসিনা জমানায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি কলেজগুলো সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়। ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় রাজধানীর সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। তবে সাত বড় সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন নেয়ার পর আট বছরে ক্ষুদ্র সমস্যাগুলো পুঞ্জীভূত হয়ে বড় রূপ নিয়েছে।

এই সাত সরকারি কলেজ হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ। শিক্ষক এক হাজারের বেশি।
সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়টির সক্ষমতা ছিল কি না তা বিবেচনায় নেয়া হয়নি। ফলে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবনে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে থাকেন। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে এক সময় দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে আন্দোলনে নামেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এখন সংশ্লিষ্ট সাত কলেজকে ফের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করা হচ্ছে। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে এসব কলেজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে না। সর্বশেষ আন্দোলনের এক পর্যায়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাত কলেজের জন্য একটি পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে বলে উল্লেখ করেছিলেন। সেই আলোকে ইউজিসি এই সাত কলেজের জন্য পৃথক ব্যবস্থাপনায় কাজ করছে।
সাত কলেজের জন্য স্বতন্ত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয় করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ জন্য অধ্যাদেশ বা আইন পাসের বিষয় আছে। আবার অবকাঠামোরও দরকার হয়। কিন্তু এগুলো সুরাহা হওয়ার আগেই চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এ সাত কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি না করার সিদ্ধান্তে কিছুটা জটিলতার আশঙ্কা আছে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন এ সাত কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি হবে কোন প্রতিষ্ঠানের অধীন, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া এ সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও কাজটি ঠিকমতো সামলাতে পারেনি। এখন সাত কলেজকে আলাদা করা, পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন নেয়ার বিষয়ে ভবিষ্যৎ প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে তা বিবেচনায় নেয়া দরকার। তা না হলে ভবিষ্যতে একই ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।

 


আরো সংবাদ



premium cement