১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫ মাঘ ১৪৩১, ১৮ রজব ১৪৪৬
`
অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো দূর হয়নি

সরকারের কাজে গতি আনুন

-


স্বৈরাচারী সরকার দেশে যে চোরতন্ত্র কায়েম করেছিল তার পতন হলেও অর্থনীতিতে নতুন গতি আসেনি। ভবিষ্যতের জন্য তেমন কোনো সুখবর নেই; বরং একের পর এক দুঃসংবাদ আসছে।
আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংকের মতো বৈশ্বিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাব্য গতিপ্রকৃতি নিয়ে নেতিবাচক পূর্বাভাস দিচ্ছে।
বিশ্ব-অর্থনীতির নিয়ন্তা বলে পরিচিত বৈশ্বিক সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আগেই পূর্বাভাস দেয়, চলতি বছর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। সর্বশেষ বিশ্বব্যাংকও একই রকম পূর্বাভাস দিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। কমেছে বিনিয়োগকারীদের আস্থা। এমন পরিস্থিতি এবং নীতি অনিশ্চয়তায় প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমানো হয়েছে।

এ দিকে গত বুধবার প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বৈশ্বিক ঝুঁকি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখনো মূল্যস্ফীতির বড় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এতে অর্থনীতির জন্য পাঁচটি বড় ঝুঁকির বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো হলো মূল্যস্ফীতি, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া, পরিবেশদূষণ, বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক সুযোগের অভাব এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতা।
এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের যেভাবে সক্রিয় হওয়া দরকার সেটি নেই। স্বৈরাচারী আমলের দীর্ঘ ১৫ বছরে অর্থনীতিতে যে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য কায়েম করা হয়েছিল তা থেকে বেরিয়ে আসতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়নি।
গত ১৫ বছরে উন্নয়নের নামে দেশের সম্পদ যেভাবে তছরুপ করা হয়েছে, অর্থের অপচয় ও পাচার করা হয়েছে তাতে একটা সময়ে অর্থব্যবস্থা যে ধসে পড়বে সেটি বোঝাই যাচ্ছিল। ব্যাংক খাতে বিপুল খেলাপি ঋণ, লক্ষকোটি টাকা পাচার, জ্বালানি খাতে বিপুল অর্থ নয়ছয়, বিদ্যুৎ আমদানিতে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়া ইত্যাদির পরিণতি কী হতে পারে তা অস্পষ্ট ছিল না।

স্বৈরাচারের শেষ দুই বছরে অর্থনীতির সব সূচক নেতিবাচক হয়ে আসে। রিজার্ভে ধস নামে। আমদানি ব্যাপকভাবে কমানোয় শিল্প অচল হওয়ার উপক্রম হয়। জ্বালানির অভাবেও অনেক শিল্প বন্ধ হয়ে যায়। ডলারের অভাবে নিত্যপণ্য আমদানির জন্যও এলসি খোলা যায়নি। আকাশছোঁয়া মূল্যস্ফীতি মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকিয়ে দেয়।
বোঝা যাচ্ছিল, ভবিষ্যতে নতুন কোনো সরকার এলে তাদের পক্ষে দেশ চালানো প্রায় অসম্ভব হবে। সেটিই হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কঠিন অবস্থায় পড়েছে; বিশৃঙ্খল অর্থনীতি, শূন্য রাজকোষ এবং বিপুল বেকারের ভার নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের বিভিন্ন পদে চারজন খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ আছেন। কিন্তু তাদের হাতে অর্থনীতিতে কোনো গতি সঞ্চার হয়নি। কেন হয়নি সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বলা হচ্ছে, সরকার তেমন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। অর্থনৈতিক সংস্কারে হাত দিচ্ছে না।
এখানে রাজনীতির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট। অন্তর্বর্তী সরকার কতটা সংস্কার করবে সে বিষয়ে মতভেদ আছে। রাজনৈতিক স্থিতিও সুনিশ্চিত নয়। ব্যবসায় পরিবেশের উন্নতি হয়নি। সরকার আর্থিক খাতের সংস্কারে হাত না দিয়ে ভ্যাট বাড়ানোর মতো সহজ উপায়ে আপাতত দায় সারতে চাইছে। তাই অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদী হওয়ার সুযোগ খুব কম।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement