মনোভাবেও পরিবর্তন দরকার
- ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
সমাজে কোনোরকম আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে তা মোকাবেলায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। আলাপ-আলোচনা ও আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগে শান্তি ফিরিয়ে আনা যায়। বিগত সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলাজনিত সব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ অস্ত্রের ওপর নির্ভর করেছে। ভিন্নমত প্রকাশ, দাবি-দাওয়া উত্থাপন ও জনগণের প্রতিবাদ বিক্ষোভ নৃশংস উপায়ে দমন করা হয়েছে। পুলিশ এসব ক্ষেত্রে এমন সব অস্ত্র ব্যবহার করেছে যা যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। এজন্য হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামলে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে ডজন ডজন মানুষের প্রাণ গেছে। সর্বশেষ জুলাই বিপ্লবে দুই হাজার মানুষের প্রাণহানি ও ৩০ হাজার মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন। এ অবস্থায় পুলিশের প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে জোরালো আপত্তি উঠেছে।
জেলা প্রশাসকরা পুলিশের হাতে প্রাণঘাতী অস্ত্র না রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। জুলাই বিপ্লবের বহু আগে থেকে পুলিশ বাহিনীকে প্রাণঘাতী অস্ত্রে সজ্জিত করা হচ্ছিল। ক্রমেই তাদের জন্য সামরিক অভিযানে ব্যবহার হয় এমন অস্ত্রের জোগান দেয়া হতে থাকে। তার ফলাফলও দেখা গেছে। অকাতরে মানুষের প্রাণ গেলেও জবাবদিহির বালাই ছিল না। পুলিশ চরম পর্যায়ে বেপরোয়া ও রক্তপিপাসু হয়ে ওঠে।
জুলাই আন্দোলনে প্রাণ হারানো ১৭৫ জনের লাশ যাচাই করে ৭৮ শতাংশ মৃতের শরীরে প্রাণঘাতী গুলির ক্ষত দেখা যায়। নিহতদের বেশির ভাগের দেহে একটি বা একাধিক গুলির ক্ষত ছিল। পুলিশ ৭ পয়েন্ট ৬২ এবং ৯ এমএম ক্যালিবারের অস্ত্র ব্যবহার করেছে। এগুলো ৩০০ মিটার দূরে কাউকে আঘাত করলেও প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। এ ধরনের অস্ত্র দেশের শত্রুদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হয়। স্বাধীন দেশের সীমান্তরক্ষীরা সাধারণত এগুলো ব্যবহার করে। দেশের নাগরিকরা শত্রু না হলেও স্বৈরাচারী হাসিনা তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অস্ত্র প্রয়োগ করেছেন। সুতরাং প্রাণঘাতী অস্ত্র জনপরিসরে সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে সম্ভবত সবাই একমত পোষণ করবেন।
পুলিশ প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার একেবারে বন্ধ করে দেবে কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। কারণ দেশে প্রায়ই সন্ত্রাসীদের উৎপাত দেখা দেয়, রয়েছে ডাকাত দল, এমনকি কিছু জেলায় সংঘবদ্ধ সশস্ত্র অপরাধী চক্র রয়েছে, তাদের দমনে সীমিত পরিসরে প্রয়োজনীয় অস্ত্র ব্যবহারের সুযোগ পুলিশকে দিতে হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের হাজার হাজার ক্যাডার এখনো বিচারের আওতায় আসেনি। তাদের কাছে নানা ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। এরা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে যেকোনো সময় মাথা চাড়া দিতে পারে। তাদের দমনেও পুলিশকে প্রয়োজনীয় অস্ত্রের ব্যবহার করার সুযোগ রাখতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ বাহিনীর সৃষ্টি হয়েছে। হাসিনা একে দানবীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ করালেও একে আমাদের আবারো জনগণের প্রকৃত সেবক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শুধু প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করে নয়; তাদের মানসিকতারও বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণেও পরিবর্তন আনতে হবে। মানুষকে তাদের বন্ধু ভাবতে হবে।
পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। আশা করি, কমিশন যথাযোগ্য সুপারিশ দেবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা