২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
অর্থনীতিতে গতি ফেরানো যাচ্ছে না

মানুষ এখনো আশাবাদী

-


পতিত স্বৈরাচার নজিরবিহীন অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি প্রায় ধ্বংস করেছে। দীর্ঘ ১৫ বছরের চরম বিশৃঙ্খলার পরিণাম এখন ভুগছে অর্থনীতির প্রতিটি খাত। ব্যাংকব্যবস্থা সেই ধকল কাটিয়ে উঠতে পারছে না। পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। মূল্যস্ফীতির রাস টানা যায়নি।
আওয়ামী লীগের বেপরোয়া লুটপাট ও অর্থপাচারের ঘটনা জনগণের অজানা ছিল না। দলীয় নেতাকর্মী ও তাদের সুবিধাভোগীদের বিপুল অর্থ-সম্পদের পাহাড় গড়ে উঠতে দেখেছে মানুষ। বৈষম্য ও বঞ্চনাবোধ তাদের ক্ষুব্ধ করেছে। কিন্তু নিরুপায় তাকিয়ে দেখা ছাড়া তাদের কিছ্ইু করার ছিল না। সে কারণেই দেশের ছাত্রসমাজের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ডাকে সর্বস্তরের মানুষ শামিল হয়। এক মহা গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস রচনা করে তারা দেশের সবচেয়ে ঘৃণ্য ফ্যাসিবাদী শাসককে গদি থেকে টেনে নামিয়ে আনে।

ফ্যাসিবাদের পতনের পর জনমনে আশার সঞ্চার হয়েছিল দু’টি কারণে। প্রথমত, নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিয়েছেন বলে। দ্বিতীয়ত, সফল গণ-অভ্যুত্থানের পর সেই চেতনার ভিত্তিতে একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় সংশ্লিষ্টদের অঙ্গীকারের পরিপ্রেক্ষিতে।
অর্থনীতি-সংক্রান্ত শ্বেতপত্র থেকে আওয়ামী লীগের দুর্নীতি ও লুটপাটের ভয়াবহ চিত্র জনগণের সামনে এসেছে। ১৫ বছরে প্রায় ২৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার। গড়ে প্রতি বছর পাচার করেছে এক লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। রাজনীতিবিদ ও আমলারা উন্নয়ন প্রকল্প থেকে লুটপাট করেছে পৌনে তিন লাখ কোটি টাকা। সরকারি কেনাকাটা থেকে ঘুষ খেয়েছে আড়াই লাখ কোটি টাকা। আর শেয়ারবাজার থেকে আত্মসাৎ করা হয় এক লাখ কোটি টাকা। এর কুফল দেখা যাচ্ছিল ২০২৪ সালের শুরু থেকেই। তখন অর্থনীতির প্রায় সব সূচকই ছিল নেতিবাচক। এমনকি বানোয়াট তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়েও সেগুলো চেপে রাখা যাচ্ছিল না।
গত চার বা পাঁচ মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে অন্তত দু’টি ক্ষেত্রে ইতিবাচক চিত্র দেখা যাচ্ছে। গত চার মাসের প্রতি মাসেই প্রবাসী আয় এসেছে ২০০ কোটি ডলারের বেশি। আর গত পাঁচ মাসে রফতানি আয় দুই হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। এর ফলে দেশের রিজার্ভে ধস বন্ধ হয়েছে। আরেকটি ইতিবাচক দিক হলো- নতুন সরকারের যারা অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের দেখাশোনার দায়িত্ব পেয়েছেন তাদের স্বচ্ছ ভাবমর্যাদা। তারা পতিত সরকারের রেখে যাওয়া ‘জঞ্জাল’ সরানোর কাজ করছেন।

এই মুহূর্তে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সামলানো যায়নি। কিন্তু সরকার চেষ্টা করছে, বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। নির্বিচারে লুটপাট ও পাচার বন্ধ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি পুনরুদ্ধার হলে শিল্প-বাণিজ্যে গতি আসবেই। তবে নির্বাচনের দাবি ও পতিত স্বৈরাচারের নৈরাজ্য সৃষ্টির চক্রান্ত মিলে দেশে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। এ ক্ষেত্রে বলতে চাই, আওয়ামী লীগ যতদিন আছে, ততদিন এসব নৈরাজ্য থাকবেই। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সরকারের সেই সময়গুলো স্মরণীয়। শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, সরকারকে এক মুহূর্তও শান্তিতে থাকতে দেবেন না। সেই পাঁচ বছরেই রমনার বটমূলে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে, বিভিন্ন দলের জনসভা সমাবেশে একের পর এক বোমা হামলা ছাড়াও নানা দাবিতে সংসদ অচল করাসহ লাগাতার হরতালে অর্থনীতির চাকা স্তব্ধ করার চেষ্টা হয়েছে। তারপরও ওই সময়টিই ছিল দেশের ইতিহাসে অর্থনৈতিক সাফল্যের সেরা সময়।
সরকার আন্তরিক হলে চলমান অস্থিরতার মধ্যেও অর্থনীতি এগিয়ে নিতে পারবে- এ আস্থা রাখা যেতেই পারে।

 


আরো সংবাদ



premium cement