১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
মহান বিজয় দিবসে এবারের প্রত্যাশা

জাতীয় ঐক্যের মহাসড়ক রচিত হোক

-

আজ ১৬ ডিসেম্বর, আমাদের মহান বিজয় দিবস। দিনটি আমাদের আত্মপরিচয় লাভের দিন। তবে এবারের বিজয় দিবস দেশবাসীর জন্য ভিন্ন এক আবেগ-অনুভূতি নিয়ে হাজির হয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানে দেশ এখন মুক্ত। তাই এবারের বিজয় দিবস জাতীয় জীবনে নিয়ে এসেছে অযুত সম্ভাবনা। এই সম্ভাবনা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে না পাড়লে পুরো জাতিকে এর খেসারত দিতে হবে অনেক দিন।
বিপুল রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের মহান স্বাধীনতা। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। ৫৩তম বিজয় দিবস পূর্তির এ ক্ষণে লাল সূর্য নতুন ‘আলোর ঝর্ণাধারা’ বয়ে আনবে জাতির জীবনে- এটিই কাম্য। যদিও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের কথা বলা হয়েছে; তা আজো বাস্তবায়ন হয়নি। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে এ ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের সুবর্ণ সুযোগ এসেছে আজ।

স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে আমাদের অর্জন যেমন ঈর্ষণীয়, তেমনি ব্যর্থতাও কম নয়। অনুন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটতে যাচ্ছে। কিন্তু আর্থসামাজিকভাবে ন্যায় প্রতিষ্ঠা এখনো অনেক দূরে। বিশেষ করে ধনী-গরিবের ব্যবধান আকাশচুম্বী। স্বাধীনতার সুফল আমরা প্রত্যেক মানুষের ঘরে পৌঁছে দিতে পেরেছি এমন নয়; বরং মুষ্টিমেয় মানুষের কাছে যেন সব সুবিধা পুঞ্জীভূত হয়েছে।
আমাদের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা মুখ থুবড়ে পড়েছিল। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে দেশ আবার গণতন্ত্রের অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছে। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরে চেপে বসা ফ্যাসিবাদী শাসনে মৌলিক মানবাধিকার শূন্যে মিলিয়ে গিয়েছিল। যা ছিল স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে সম্পূর্ণ অসঙ্গতিপূর্ণ।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল দারিদ্র্যমুক্ত-শোষণমুক্ত স্বদেশ, যে বাংলাদেশ হবে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমুন্নত। জনগণ পাবে সর্বজনীন মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও বাধাহীন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার স্বাধীনতা। নাগরিকরা পাবেন নিজের অবস্থান উত্তরণের সুযোগ। তাই স্বাধীনতার ৫৩ বছর পূর্তিতে দীর্ঘ পথপরিক্রমায় বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়, সে মূল্যায়ন এখন জরুরি।

পাঁচ দশকের বেশি সময়ে আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের কিছু সূচক বৈশ্বিক প্রশংসা কুড়িয়েছে। দেশবাসীর জীবনমানে পরিবর্তন এসেছে। গ্রাম-শহরে উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু গ্রাম-শহরে জীবনযাত্রার ফারাকও ব্যাপক। স্বৈশরাসনমুক্ত সময়ে এ ব্যবধান ঘোচানোর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জোরালোভাবে নিতে হবে। দেশে এখনো দারিদ্র্যসীমায় বাস করে পাঁচ কোটির মতো মানুষ। স্বৈরাচারীর হাত ধরে দুর্নীতি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল। সুশাসনের অনুপস্থিতি এবং দুর্বল গণতন্ত্র ছিল এর জন্য দায়ী। এখন বৈষম্য দূর করে সাম্যভিত্তিক কল্যাণরাষ্ট্র অর্জনে আমাদের পদক্ষেপ হতে হবে। রাজনীতি ও প্রশাসনে গণতন্ত্র চর্চা ফেরাতে হবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে জনগণের পক্ষে অবস্থান নিতে পারে সেই অনুকূল পরিবেশ করে দিতে হবে।
আমরা দেখছি, প্রায় একই সময়ে স্বাধীনতা পেয়ে অনেক দেশ উন্নতির শিখরে পৌঁছেছে। নির্মাণ করেছে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। আমরা কেন পারিনি তা খতিয়ে দেখতে হবে। স্বাধীনতাকামী মানুষ যে চেতনা নিয়ে একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, সেই চেতনার যথাযথ মূল্যায়নের পথে হাঁটতে হবে আমাদের। এ জন্য দরকার বিভেদের দেয়াল ভেঙে সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা। দরকার জাতীয় সমঝোতা, সম্প্রীতি ও ঐক্যের মহাসড়কে এগিয়ে চলা।


আরো সংবাদ



premium cement