২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সহস্রাধিক কৃষকের ফাঁস সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্প

টাকা আদায়ে চাপ কাম্য নয়

-

দৈনিক নয়া দিগন্তের পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, পঞ্চগড়ে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে সেচপাম্প চালাতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে একটি বেসরকারি ব্যাংক। ওই ব্যাংকের মাধ্যমে কৃষক সমবায় সমিতি গঠন করে ঋণের টাকায় বসানো হয় সৌরচালিত সেচপাম্প। অভিযোগ রয়েছে, ২০-২৫ বছরের জন্য এই সেচপাম্প বসানো হলেও নিম্নমানের প্যানেল ও যন্ত্রাংশ দেয়ায় স্থাপনের এক বছরের মধ্যে সেগুলো অকেজো হয়ে পড়ে। আর কৃষকরা বাধ্য হয়ে সেচকার্য চালাতে গভীর নলকূপ স্থাপন করছেন। এতে ফসলের উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে। সেচপাম্প থেকে কোনো আয় না থাকলেও মূল ঋণের সাথে দ্বিগুণের বেশি সুদের টাকা আদায়ে মামলাসহ জমি নিলাম করছে ব্যাংকটি। এ নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন পঞ্চগড়ের ১১টি কৃষক সমবায় সমিতির সহ¯্রাধিক কৃষক।
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার কাজলদীঘি কালিয়াগঞ্জ ইউপির খারিজা বনগ্রাম শিকারপুর আদর্শ কৃষক সমবায় সমিতির সভাপতি গোলাম রহমান জানান, কৃষকদের কৃষিকাজে সহায়তার জন্য মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা পঞ্চগড় সদর ও বোদা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কৃষক সমবায় সমিতি গঠনের পরামর্শ দেন। সমিতির সদস্যদের কৃষিঋণ দেয়ার পাশাপাশি ব্যাংকের অর্থায়নে পরিবেশবান্ধব ও নিরবচ্ছিন্নভাবে সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচপাম্প স্থাপনের কথা বলেন। তাদের কথামতো জেলায় ১১টি কৃষক সমবায় সমিতি গঠন করা হয়। সমিতির সদস্যদের কৃষিঋণ দেয়ার পাশাপাশি ১৭টি সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচপাম্প বসানোর জন্য ব্যাংকের ঠাকুরগাঁও শাখার মাধ্যমে গ্রিন এনার্জি প্রকল্পের আওতায় কৃষক সমবায় সমিতিগুলোর সদস্যদের জমি বন্ধক রেখে পাঁচ কোটি ৩০ লাখ টাকা ঋণ বরাদ্দ করা হয়। সেই ঋণের টাকা দিয়ে রহিম আফরোজ ও শেরপা নামের দু’টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে ১৭টি সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্পের জন্য প্রয়োজনীয় প্যানেল ও যন্ত্রাংশ স্থাপন করা হয়। নির্মাণ করা হয় প্রয়োজনীয় ড্রেন। কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা বলেন যে, প্রতিটি পাম্প দিয়ে ২০-২৫ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে ১০০-১৫০ বিঘা জমিতে সেচকার্যক্রম চালানো যাবে। শুরুতেই প্যানেল, পাম্প ও যন্ত্রাংশের মান নিয়ে কৃষকদের সন্দেহ ছিল।
প্যানেল স্থাপনের প্রথম বছর ভালো সার্ভিস দিলেও পরবর্তী বছর থেকেই সমস্যা শুরু হয়। এভাবে দুই বছর চলার পর পাম্প পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে ব্যাংক ও প্যানেল স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে বারবার যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাননি কৃষকরা। বাধ্য হয়ে তারা তাদের সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচপাম্প ফিরিয়ে নিয়ে ঋণ থেকে মুক্তি পেতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন দফতরে আবেদন করেন।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ঠাকুরগাঁও শাখা ব্যবস্থাপক বলেন, ঋণ দেয়া শুরু হয়েছিল ২০১২-১৩ সাল থেকে। ইতোমধ্যে ১০ বছর চলে গেছে। সমস্যা শুরু হওয়ার পর তারা আমাদের জানাননি। সমস্যা সমাধানে সমিতির নেতৃবৃন্দ এবং কোম্পানির লোকজনকে একাধিকবার ডাকা হয়েছিল। তাদের আগ্রহ দেখিনি। তবে তাদের দু’টি ঋণেরই সুদ মওকুফ করা হয়েছে।
সৌরবিদ্যুতের পাম্প পঞ্চগড়ের সহ¯্রাধিক কৃষকের জন্য গলার ফাঁস হয়ে উঠেছে। এই সমস্যার সমাধান আগে করতে হবে। তা না করে কর্তৃপক্ষ সুদে আসলে ১৫ কোটি টাকা আদায়ের জন্য মামলা চালাচ্ছে। কৃষকদের জমি নিলাম করা হচ্ছে। এটি কাম্য নয়। সরকারের নজর দেয়া দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement