আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার
- ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
দেশে হঠাৎ করেই শিশু চুরি ও হত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাগুলো ঘটছে পারিবারিক কলহ ও ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে। সম্প্রতি সিলেটের কানাইঘাটে মা-বাবার সাথে ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে ছয় বছরের শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিনকে হত্যা করে পুকুরে পুঁতে রাখে তার গৃহশিক্ষিকা। গত ১৬ নভেম্বর রাজধানীর পল্লবীতে হতাশা ও পারিবারিক কলহের কারণে তিন বছর ও সাত বছর বয়সের দুই ছেলেকে হত্যা করে নিজে গলা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান বাবা। অন্য দিকে বাসায় সাবলেট থেকে শিশু চুরির ঘটনাও ঘটেছে আজিমপুরে। অতীতে হাসপাতাল থেকে শিশু চুরির মতো ঘটনা জানা গেলেও বাসায় ডাকাতির সাথে শিশুকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী অবশ্য শিশুটিকে উদ্ধার করেছে। এসব ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারও করা হয়েছে। ঘটনাগুলো জাতীয় গণমাধ্যমে এসেছে বিধায় আমরা জানতে পারছি। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন ঘটনা যে আরো ঘটছে না, তা বলা যায় না। বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) শিশু অধিকার লঙ্ঘনবিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ৫৮০ শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সারা দেশে ৪৩১ শিশু হত্যার শিকার হয়। শিশু হত্যার মতো জঘন্য ঘটনা আসলে আমাদের সমাজের অধঃপতনের চিত্র।
জন্মগতভাবে মানুষ অপরাধী এমন বলার সুযোগ নেই। বরং সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে যে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে তা এক চিরন্তন সত্য। কিন্তু সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব এই মানুষই আবার নিকৃষ্ট জীবে পরিণত হতে পারে এবং সেটি এমন পর্যায়ে চলে যেতে পারে যে, তা পশুকেও হার মানায়।
মা-বাবার হাতে সন্তান হত্যার ঘটনা যেকোনো বিচারে চরম পাশবিকতার লক্ষণ। পশু মায়েরা সন্তানকে হত্যা দূরের কথা; বরং একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত গভীর মমতায়, অপত্য স্নেহে নিজের সন্তানদের লালন করে। পাখিদের ক্ষেত্রেও এটি সত্য। সন্তানের কোনো অনিষ্ট হতে দেখলে তারা তা রুখে দিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে; এমনকি নিজের জীবন উপেক্ষা করেও। এমন দৃষ্টান্ত আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও অহরহ দেখা যায়।
সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদক সেবন, নৈতিক অবক্ষয়, পরকীয়া, সাইবার দুনিয়ার প্রতি নিয়ন্ত্রণহীন আসক্তি ও পারিবারিক কলহজনিত হতাশার কারণে শিশুরা বেশি আক্রমণের শিকার হচ্ছে। সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও আর্থিক অসচ্ছলতা পরিবারের শিশুদের ওপর প্রভাব ফেলছে। প্রতিপক্ষকে ফাঁসানো, প্রতিশোধ কিংবা অপরাধ আড়াল করতে কখনো মা-বাবাসহ আপনজনও হয়ে উঠছেন শিশুদের ঘাতক।
বাংলাদেশের মতো সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সমমনা এত বিশাল জনগোষ্ঠীর মানুষ আমাদের একটি সুন্দর অপরাধমুক্ত সমাজ গঠনে অত্যন্ত সহায়ক। শিশু হত্যার মতো এমন অপরাধ দমনে এই সহায়ক শক্তিকে কাজে লাগানো প্রয়োজন। প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ সুদৃঢ় করতে হবে। তবেই কেবল সমাজ থেকে এমন অপরাধ দূর হতে পারে। এ জন্য সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগও নেয়া দরকার।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা