২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
৫৫ হাজারের জন্য একজন চিকিৎসক

সবার জন্য স্বাস্থ্যের খবর কী

-

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সঙ্কটে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। কারণ, উপজেলার ৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮৮০ জন মানুষের জন্য রয়েছেন মাত্র ১৭ জন চিকিৎসক। এর মধ্যে দু’-একজনকে প্রশিক্ষণ, সভা-সেমিনারসহ নানা কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকতে হয়। ফলে অনেক সময় তাৎক্ষণিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। ফলে রোগীর জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। একটি জাতীয় দৈনিকের মুরাদনগর (কুমিল্লা) সংবাদদাতার প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাধারণ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ ৩৭টি। ১২টি পদই শূন্য। একজন বিশেষজ্ঞসহ চারজন রয়েছেন প্রেষণে। চারজন বিনা অনুমতিতে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত। ফলে হাসপাতালে উপস্থিত থাকছেন মাত্র ১৭ জন চিকিৎসক। অন্যদিকে, এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে জনসংখ্যা ৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮৮০ জন। সে হিসেবে এ উপজেলায় প্রায় ৫৫ হাজার মানুষের বিপরীতে চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র একজন। ১৮ হাজার ৬৯৮ জন মানুষের বিপরীতে হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা মাত্র একটি। এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ অনুযায়ী শুধু মেডিসিন, কার্ডিওলজি, গাইনি, অ্যানেস্থেসিয়া, শিশু ও অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসক রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে নেই সার্জারি, নাক, কান ও গলা), চক্ষু, চর্ম রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ফলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে অন্য রোগের বিশেষজ্ঞকে দিয়ে সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা। এদিকে গ্রামের তৃণমূল মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে ২২টি ইউনিয়ন পরিষদের জন্য ২২ জন চিকিৎসকের কথা থাকলেও আছেন মাত্র একজন। তার মধ্যে নবীপুর পূর্ব ইউনিয়নের একজন বাদে বাকি দুজনও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই রোগী দেখেন।
ডাক্তার কম থাকায় দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তি হচ্ছে। বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের। আবার বেশির ভাগ সময় এখানে রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে শয্যা পাওয়া যায় না, ফ্লোরে চিকিৎসাসেবা নিতে হয়। শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হলে ভালো হতো। এ ছাড়া যেসব পদে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই, সেসব পদে চিকিৎসক দিতে কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: এনামুল হক বলেন, ‘এখানে রোগীর আনুপাতিক হারে মেডিক্যাল অফিসার ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এ হাসপাতালে সার্জারি বিশেষজ্ঞ না থাকায় অধিকাংশ সময় সার্জারির রোগীদের সেবা দিতে খুব বেগ পেতে হয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে সাত থেকে আট শতাধিক এবং আন্তঃবিভাগে সবসময় ৬৫ থেকে ৭০ রোগী ভর্তি থেকে নিয়মিত চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। জরুরি বিভাগে দৈনিক ৭০-৮০ রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। কখনো এ সংখ্যা শতাধিকে গিয়ে দাঁড়ায়’।
আমাদের দেশে দু’টি স্লোগান সরকারিভাবে বেশি প্রচার করা হয়- ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ ও ‘সবার জন্য শিক্ষা’। কিন্তু বাস্তবে অগ্রগতি দেখা যায় না। এজন্য ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ আগে নিশ্চিত করা দরকার। এটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয়সংখ্যক চিকিৎসক দরকার। বাস্তবে দেশে এখনো পর্যাপ্ত চিকিৎসক তৈরি হয়নি। কিন্তু সবার জন্য চিকিৎসক ছাড়া সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।


আরো সংবাদ



premium cement