০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বিপ্লব ও সংহতি দিবস আজ

জাতীয় ঐক্য সংহত করার দিন

-

ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের নাগপাশ থেকে সদ্যই বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। হাজারো ছাত্র-জনতার বুকের তাজা রক্ত ঢেলে অর্জিত হয়েছে এই মুক্তি। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের গণতন্ত্রহীন শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে দেশবাসীর ছিল না ন্যূনতম কোনো অধিকার। অঘোষিতভাবে সংবিধান রহিত করে একদলীয় শাসন কায়েম করা হয়েছিল। সংবিধানের সব অধিকার, আইন-কানুন এবং রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ-সুবিধা শুধু একটি পরিবার, একটি দল ও গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। সেই দুর্বিষহ নিষ্পেষণযন্ত্র থেকে আমরা দ্বিতীয়বার স্বাধীনতার উন্মুক্ত ময়দানে প্রবেশ করতে পেরেছি অকুতোভয় তরুণদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে। স্বৈরাচারের বুলেটের সামনে তারা বুক পেতে দিয়েছেন, আন্দোলন সংগ্রাম সংগঠিত ও সংহত করেছেন এবং গোটা দেশের সর্বস্তরের মানুষকে তাতে শামিল করেছেন। পেছনে ছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের বড় ভূমিকা, যা আন্দোলনকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যাভিমুখে পরিচালিত করেছে। আমরা ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট দানবের কবলমুক্ত হতে পেরেছি।
এই নতুন বাংলাদেশে আজ ফিরে এসেছে ৭ নভেম্বর, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। স্বৈরাচারী সরকার দিবসটি বাতিল করেছিল। কিন্তু সংগঠিত জাতির কোনো চেতনা চিরতরে মুছে ফেলা যায় না। ১৯৭৫ সালের এ দিনে আধিপত্যবাদ মোকাবেলার যে শানিত চেতনায় সিপাহি-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজপথে নেমে এসেছিলেন সেই চেতনা মুছে যায়নি; বরং হাসিনার জাতীয় স্বার্থবিরোধী ও আধিপত্যবাদ তোষণের রাজনীতির কারণে গত সাড়ে ১৫ বছরে তা আরো বেশি তীব্র ও সর্বব্যাপ্ত হয়েছে।
এখন নতুন করে গণতন্ত্র ও রাষ্ট্র সংস্কারের যে সুযোগ সামনে এসেছে সেই সময়ে আমাদের মনে করতে হবে ৭ নভেম্বরের দিনটি। ১৯৭৫ সালের নভেম্বরেও দেশে ভয়ানক অরাজক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল। স্বার্থান্বেষী ও চক্রান্তকারীরা দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীতে অনুপ্রবেশ করে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। ২ নভেম্বর রাতে সেনাবাহিনীর তদানীন্তন চিফ অব জেনারেল স্টাফ খালেদ মোশাররফ হঠাৎ সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দী করে পাল্টা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। এমন প্রেক্ষাপটে জাতীয় পরিস্থিতি এতটাই অনিয়ন্ত্রিত ও উদ্বেগজনক হয়ে পড়ে যে, কার্যত সরকারের কোনো অস্তিত্বই অনুভূত হচ্ছিল না। এদিকে, ৬ নভেম্বর রাতে ঢাকায় সিপাহিরা একজোট হয়ে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেন। তাদের সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেন বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ। সবাই রাজপথে নেমে সেনাপ্রধানকে স্বাগত এবং সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন দেশকে চরম নৈরাজ্যের মহাবিপদ থেকে রক্ষায়। সেনাপ্রধান জিয়াকে এ অবস্থায় রাষ্ট্রচালনার গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়।
আজ ২০২৪ সালের এই নভেম্বরেও দেশ থেকে স্বৈরাচারের বিপদ পুরোপুরি কেটে যায়নি। প্রতি মুহূর্তে প্রতিবিপ্লবের শঙ্কার মধ্যে রয়েছে দেশ ও জাতি। স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি অংশ ধ্বংস করে গেছে। দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতির সর্বনাশ করেছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, জাতীয় ঐক্য, সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারলে বিপদ কিন্তু পিছু ছাড়বে না। এ অবস্থায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর হতে পারে আমাদের জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের সার্বিক মুক্তির অন্যতম প্রেরণা।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল