৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
সরকার আন্তরিক হলে সবই সম্ভব

হজের বিপুল খরচ কমলো

-

পতিত স্বৈরাচারের সময় জীবনযাত্রার সব কিছুরই ব্যয় অত্যধিক বেড়ে গিয়েছেল। দুর্নীতি-অনিয়ম আর বেপরোয়া লুটপাটের কারণে অর্থনীতির চাকা প্রায় থেমে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। সেই সাথে ছিল বিশ্বের সর্বোচ্চ পরিমাণ মূল্যস্ফীতি। মানুষের জীবনযাত্রা নির্বাহেই নাভিশ্বাস ওঠে। ইসলাম ধর্মে হজব্রত পালন ফরজ কেবল সামর্থ্যবান মানুষের জন্য। অর্থাৎ যারা সচ্ছল ও সম্পদশালী তাদেরই হজ পালন করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু গত কয়েক বছরে স্বৈরাচারী সরকার হজের ব্যয় এমন অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে দেয় যে, দেশ থেকে যত মানুষের হজে যাওয়ার কোটা ছিল- তার বড় অংশই পূরণ হয়নি। অথচ বাংলাদেশে প্রতি বছর হজে যেতে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা সব সময়ই সৌদি আরবের দেয়া কোটার চেয়ে বেশি।
প্রকৃতপক্ষে, আওয়ামী সরকারের সময়ে প্রতিটি খাত থেকে অর্থ লোপাটের লক্ষ্য নিয়েই ব্যয় নির্ধারণ করা হতো। এ জন্য হজ বিমানের ভাড়া, মক্কায় হারাম শরিফ থেকে অবস্থানের নৈকট্য- ইত্যাদির প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা হাজীদের সাথে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। হজের ব্যয় বিপুলভাবে বাড়িয়ে দেয়ার পেছনে মানুষকে ধর্মচর্চায় নিরুৎসাহিত করার কোনো দুরভিসন্ধি ছিল কি না, সেই সন্দেহও করেন অনেকে। কারণ স্কুলের শিক্ষা কারিকুলামে ধর্মীয় বিষয়াদি নিয়ে তারা যে অপকর্ম করেছে, সামাজিক-সাংস্কৃতিক নানা ক্ষেত্রে তাদের ধর্মবিরোধী অবস্থানের জন্য এ ধরনের সন্দেহ যুক্তিযুক্ত মনে করার কারণ রয়েছে।
গতকাল ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন দু’টি প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এর একটিতে হজের খরচ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা। অন্যটিতে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা। যেটি গত বছর ছিল সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা এবং বিশেষ প্যাকেজে ছিল ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। স্বৈরাচারী সরকার হজের ব্যয় এতটাই অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে দেয় যে, বিশ্বের সব দেশের চেয়ে বাংলাদেশীদের হজ করতে সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। ভারতের মতো দেশে যেখানে বাংলাদেশী মুদ্রায় হজের ব্যয় সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা, সেখানে বাংলাদেশে ছিল প্রায় দ্বিগুণ। আর ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ায় সরকারিভাবে হজের ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেয়া হয় বলে সেখানে ব্যয় খুবই কম।
এবার বাংলাদেশে হজের বিশেষ প্যাকেজ বাদ দেয়া হয়েছে। ফলে দু’টি প্যাকেজেই ব্যয় লাখ টাকা কমে গেছে। এটি সরকারের এক গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য বলে মনে করি। বিশেষ করে ধর্ম উপদেষ্টার আন্তরিকতা এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তিনি এ বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগী হয়েছেন। হজ আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলেছেন। সৌদি আরব সফর করে সমঝোতা করেছেন এবং বিমান সংস্থার সাথে আলোচনা করে বিমান ভাড়া কমানোর ব্যবস্থা করেছেন। এ ছাড়া হজযাত্রীদের সব ধরনের ভ্যাট-ট্যাক্স মওকুফ করা হচ্ছে।
আমাদের বিশ্বাস, সরকারের উপদেষ্টারা আন্তরিক হলে স্বৈরাচারের আমলের অনেক অযৌক্তিক ব্যয়ই কমানো সম্ভব হবে। যেমনটি হয়েছে আন্দোলনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেলের স্টেশন মেরামতের ক্ষেত্রে। এসব কর্মকাণ্ড সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা যেমন তৈরি করবে, তেমনি তারা কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে।
এর পাশাপাশি আমাদের পরামর্শ থাকবে, ভবিষ্যতে হজযাত্রার ব্যয়ে সরকারি ভর্তুকির ব্যবস্থা করবেন ধর্ম উপদেষ্টা। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও হজযাত্রীদের ভর্তুকি দেয়া হতো। সাম্প্রদায়িক মোদি সরকার সম্প্রতি সে সুবিধা বাতিল করেছে। বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ রাষ্ট্রের কাছে এটুকু আনুকূল্য দাবি করতেই পারে।


আরো সংবাদ



premium cement