২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজ

শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো আমলে নিন

-

২০১৭ সালে শিক্ষার মান উন্নয়নে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন রাজধানীর সাতটি বড় কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কলেজগুলো হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ ও মিরপুর বাঙলা কলেজ।
অধিভুক্তের পর এসব কলেজের শিক্ষার মান কতটুকু বেড়েছে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। উপরোন্তু অধিভুক্তের পর থেকে কলেজগুলো যে নানাবিধ সমস্যায় ভুগছে তা স্পষ্ট। এ থেকে মুক্তি পেতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা এবার ঢাবির অধীনে না থেকে সাত কলেজ নিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি জানিয়েছেন। দাবি আদায়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। অন্য দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা। ঢাবি শিক্ষার্থীরা বলছেন, সাত কলেজ অধিভুক্ত থাকায় তারা অ্যাকাডেমিক, প্রশাসনিক কাজে জটিলতায় ভুগছেন। সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। আমরা চাই অবিলম্বে এ অধিভুক্তি বাতিল করতে হবে।
সাত কলেজের সমস্যাগুলো তুলে ধরে একটি সহযোগী জাতীয় দৈনিকের খবর, এ সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি, তারা স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়হীনতায় ভুগছেন। ঢাবির শিক্ষার্থীরা গবেষণার সুযোগ পেলেও ওই কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা গবেষণার সুযোগ পান না। ঢাবির শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কিন্তু সাত কলেজের সুনির্দিষ্ট কোনো অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার নেই। শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক সঙ্কট রয়েছে। কোনো কোনো কলেজে নির্দিষ্ট বিভাগে শিক্ষক নেই। অনার্স ও মাস্টার্সে যে পরিমাণ শ্রেণিকক্ষ প্রয়োজন, তা নেই। পরীক্ষার আগে কখনো সম্পূর্ণ সিলেবাস শেষ করা হয় না। ফল প্রকাশে বিলম্ব করা হয়। ঢাবি ছয় থেকে সাত মাস পর পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। খাতা মূল্যায়নে সয় গণহারে ফেল করানো হয়।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক যেসব অভিযোগ সেগুলো ঢাবি কর্তৃপক্ষ গুরুত্বসহকারে দেখবে, তা সবার প্রত্যাশা। অন্য দিকে এসব কলেজের শিক্ষক, ক্লাসরুম ও গবেষণাগার সঙ্কটসহ যেসব সমস্যা রয়েছে; সেগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেখতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি এ মুহূর্তে কতটা বিবেচনাপ্রসূত তা নিয়ে কথা ওঠা স্বাভাবিক। কারণ এ সরকার একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে। এই অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের জায়গাগুলো স্পষ্ট। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মতো কাজ সময়সাপেক্ষ। এ ছাড়া এখন ঢাকায় আর কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা আছে কি না, তা-ও একটি বড় প্রশ্ন। আবার সাত কলেজ নিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হলে যে সাথে সাথে সব সমস্যার সমাধান হবে; তার নিশ্চয়তা কী।
সাত কলেজ ঘিরে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তা যেন আর বাড়তে দেয়া না হয়। এটি নিয়ে যেন কোনো পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে; সে দিকে সজাগ থাকতে হবে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো ধরনের বিরোধ সৃষ্টি না হয় তা-ও খেয়াল রাখতে হবে। সাত কলেজের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে উপনীত হবেন- এটি আমাদের প্রত্যাশা।


আরো সংবাদ



premium cement