২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
নিত্যপণ্যের দাম এখনো ঊর্ধ্বমুখী

অন্তর্বর্তী সরকারেরও নজর কম

-

পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যে মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছিল। তখন সরকার কার্যকর কোনো উদ্যোগ না নিয়ে বিষয়টি উপেক্ষা করেছে। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফসল নতুন অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও গত দুই মাসে দ্রব্যমূল্য কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে, এমনটা দৃশ্যমান নয়।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর দুই মাসে ছয়টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। কমেছে মাত্র দু’টির।
টিসিবির বাজারদরের তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ৮ আগস্টের তুলনায় মোটা চাল কেজিতে এক টাকা, মাঝারি চালের দাম কেজিতে তিন-চার টাকা বেড়েছে, যা টিসিবির তালিকায় উল্লেখ নেই; খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ছয় টাকা, পামতেল ১২ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১০ টাকা, চিনি তিন টাকা ও ডিম ডজনে ১৫ টাকা বেড়েছে। বিপরীতে পেঁয়াজ ও আলুর দাম কেজিতে পাঁচ টাকা কমেছে। এ দু’টি পণ্যের ক্ষেত্রে সরকারের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ছিল। শুল্ক কমিয়ে আমদানির ব্যবস্থা করে বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। এ দিকে কৃষি বিপণন অধিদফতরের হিসাবে, ৮ আগস্টের তুলনায় বেশির ভাগ সবজির দাম বেশি। রাজধানীর বাজারে বেশির ভাগ সবজির কেজি ৬০-১০০ টাকা।
নিত্যপণ্যের দাম না কমায় সব নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট কোনো মাত্রায় লাঘব হয়নি। তবে দেরিতে হলেও বাজার পরিস্থিতি ও সরবরাহ ব্যবস্থা তদারক ও পর্যালোচনায় গত সোমবার জেলাপর্যায়ে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার।
হাসিনার আমলে অব্যাহত উচ্চমূল্য শহর ও গ্রামের সব মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করেছিল। এখন গণমানুষের আকাক্সক্ষার সরকার যদি নিত্যপণ্যের দাম কমাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়, তা সত্যি দুঃখজনক। এই কষ্টের কথা সাধারণ মানুষ কাকে বলবেন?
যদিও গত মাসে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে ১০ শতাংশের কিছুটা কম হয়েছে। তবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখনো ১০ শতাংশের ওপরে। এর মানে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে যে খাদ্য কিনতে মানুষকে ১০০ টাকা ব্যয় করতে হতো, তা কিনতে এখন ১১০ টাকার বেশি লাগছে। মূল্যস্ফীতি অনুযায়ী, মানুষের মজুরি বাড়ছে না। বিবিএস বলছে, সেপ্টেম্বরে প্রায় ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতির বিপরীতে মজুরি বেড়েছে ৮ শতাংশের মতো। এর মানে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আরো কমেছে।
দ্রব্যমূল্য কিভাবে কমানো যায়, সে ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ, বাজার বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে স্বল্পমেয়াদে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে। যেমন-চাল, চিনি, ভোজ্যতেল ও ডিমের শুল্ক-কর কমানো। এতে দাম কমানোর সুযোগ তৈরি হবে। সরবরাহ বাড়বে। ডিজেলের দাম কমালে পরিবহন খরচ কমবে, যা পণ্য সরবরাহে খরচ কমাবে।
লক্ষণীয়, দেশের বিভিন্ন নিত্যপণ্যের বাজার গুটিকয়েক কোম্পানি ও আমদানিকারকের দখলে। সেখানে প্রতিযোগিতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সেই সাথে পণ্যের চাহিদা, উৎপাদন ও সরবরাহের পরিসংখ্যান বিশ্বাসযোগ্য করা জরুরি। কারণ সঠিক হিসাব না থাকলে সঠিক নীতি নেয়া যায় না।
প্রকৃত বাস্তবতায় বাজার নিয়ন্ত্রণে গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাজার তদারকি সফল করতে পাকা রসিদের ব্যবহার, লেনদেন আনুষ্ঠানিক করা, চাঁদাবাজি দূর করা ও বাজারগুলো থেকে মধ্যস্বত্বভোগীদের দূর করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement