জাতীয় সংলাপ হতে পারে
- ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ছাত্র-গণ অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর দেশে সার্বিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছেন। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারবিষয়ক কমিশনের দায়িত্ব পেয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছেন। এর মধ্যে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের প্রসঙ্গে মতামত দিয়েছেন অনেকে। তাদের মধ্যে বিশেষজ্ঞরা যেমন আছেন তেমনই রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনও আছেন। গণমাধ্যমে এ বিষয়ে আলোচনা জোরালো হচ্ছে।
বর্তমানে প্রচলিত নির্বাচনীব্যবস্থাকে বলা হয়, ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে কোনো আসনে বেশি ভোট পাওয়া ব্যক্তি নির্বাচিত হন। আর সামান্য ভোটের ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা প্রার্থী নির্বাচিত হতে পারেন না। এর ফলে মাত্র কয়েক শতাংশ ভোট কমবেশি হওয়ায় সংসদে আসন পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক ব্যবধান সৃষ্টি হয়। যেমন, দেখা গেছে, কোনো দল ৪০.২১ শতাংশ ভোট পেয়েও সংসদে মাত্র ৬২টি আসন বা ৩২.৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে মাত্র ৩০টি আসন পেয়েছে। এর বিপরীতে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন-পিআর) পদ্ধতি গ্রহণ করা হলে এমন ঘটনা ঘটবে না। ভোটাররা কোনো ব্যক্তিকে নয়, দলকে ভোট দেবেন। প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে দলগুলোর মধ্যে আসন বণ্টন করা হবে। এর ফলে একটি দল প্রকৃত অর্থে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসতে পারবে। অর্থ ও পেশিশক্তি বা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচিত হওয়ার প্রবণতা হ্রাস পাবে। একই সাথে কালো টাকার দৌরাত্ম্য কমে আসতে পারে।
এ পদ্ধতি আমাদের প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কা ও নেপালে এবং ইউরোপের বেশির ভাগ দেশসহ বিশ্বের ৯৭টিরও বেশি দেশে আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে চালু আছে।
আমাদের দেশেও এ পদ্ধতি গ্রহণের কথা অনেকে বলছেন। পদত্যাগী সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল তার বিদায়ী ব্রিফিংয়ে পিআর পদ্ধতিতে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব করেন। ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাথে সংলাপেও কিছু দল এ ধরনের সংস্কারের প্রস্তাব দেয়। গত আগস্টে সুশাসনের জন্য নাগরিক ‘সুজন’ অন্তর্র্বর্তী সরকারের কাছে যেসব সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরে সেখানে পিআর পদ্ধতি গ্রহণের কথা বলা হয়।
রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল সম্প্রতি যে ৯টি কৌশলগত বিষয়ের সুপারিশ তুলে ধরে তার অন্যতম ছিল পিআর ব্যবস্থার প্রবর্তন।
এ মুহূর্তে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরাও নির্বাচনীব্যবস্থার সংস্কারে এ পদ্ধতির ওপর জোর দিচ্ছেন। অনেক রাজনৈতিক দলও এর পক্ষে।
স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ তার একটি বইয়ে পিআর পদ্ধতির সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে আলোচনা করে এ পদ্ধতি গ্রহণের পক্ষে মত দেন।
দেশে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি ক্রমে জোরালো হচ্ছে। এ সময় নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা অবশ্যই ইতিবাচক।
বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সমরূপতায় নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি উপযোগী হতে পারে। তবে সব ব্যবস্থার ভালোমন্দ দিক থাকে। পিআর পদ্ধতিতে যেসব সমস্যা আছে সেগুলোর কতটা গ্রহণীয় বা বর্জনীয় তা বিশেষজ্ঞরা নিশ্চয় বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখবেন। তারপর জাতীয় সংলাপের ভিত্তিতে সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি পদ্ধতি গ্রহণ করবেন- এটা প্রত্যাশিত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা