২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ডেঙ্গু প্রতিরোধে উদাসীনতা

বিপদ ডেকে আনতে পারে

-

দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, সাথে সাথে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। ঢাকা ছাড়াও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে অন্যান্য জেলায়। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর ৫৫ শতাংশ ঢাকার বাইরে। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে এখন ডেঙ্গু রোগীর ভিড় ক্রমাগত বাড়ছে। চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা। সঙ্গতকারণে বলা যায়, গত কয়েক মাস আগে থেকে মশার বিস্তার প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতি এত খারাপ হতো না।
এ বছর শুধু সেপ্টেম্বরের ১৮ তারিখ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রন্ত হয়ে ৩৬ জন মারা গেছেন। রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৯ হাজার ১২৫ জন। আর সারা দেশে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১২২ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২১ হাজার ৯৬৬ জন।
মৃত্যুর সংখ্যা বিবেচনায় নিলে এবারের পরিস্থিতি গতবারের চেয়ে কিছুটা ভালো। তার পরও প্রশ্ন থেকে যায়, আমরা কি সংখ্যাটি কমিয়ে আনতে পারতাম না? হ্যাঁ, অবশ্যই ডেঙ্গু প্রতিরোধে সম্পৃক্ত দুই মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য ও স্থানীয় সরকার একযোগে কাজ করলে পরিস্থিতি আরো ভালো থাকতে পারত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছর সেপ্টেম্বরে যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হবে ওই বিষয়ে দুই মাস আগে থেকে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর তেমন কোনো উদ্যোগ নয়। এখনো যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, অক্টোবরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।
প্রতি বছর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতায় সংশ্লিষ্টদের দায়ী করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা এর দায়িত্বে আছেন তারা এটাকে চাকরি হিসেবে দেখেন, সেবা ও আন্তরিকতাপূর্ণ সহাবস্থানের অনুপস্থিতি দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামালে ব্যর্থ হচ্ছি আমরা। এর সাথে রোগীর অসচেতনতা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু রোগীর যথাযথ চিকিৎসা না করে অন্য হাসপাতালে পাঠানো, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির দুর্বলতা প্রতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়াচ্ছে।
বাংলাদেশের মতো পৃথিবীর কোনো দেশে ডেঙ্গুতে এত মৃত্যুর রেকর্ড নেই। এর কারণ আমাদের দেশে অসচেতনতায় রোগীদের দেরিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রবণতা প্রবল। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতাও এ রোগে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
সচেতনতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে লিফলেট বিলি, মাইকিং করে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারলে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা যেতে পারে। একই সাথে ফগিং, লার্ভিসাইডিং কর্মসূচি জোরদারের মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ফলপ্রসূ হতে পারে ।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি বুঝতে বারবার জরিপ করা দরকার। কিন্তু এবার শুধু প্রাক-বর্ষা জরিপ হয়েছে। বর্ষা চলে গেলেও জরিপ হয়নি। বর্ষা-পরবর্তী জরিপেরও উদ্যোগ নেই। তাই সামনে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও কীটতত্ত্ববিদরা। তারা বলছেন, মশার লার্ভার উপস্থিতি কোথায় কতটা, সে বিষয়ে কারো হাতে কোনো তথ্য নেই। এ পরিস্থিতিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লে তা সামলানো কঠিন হবে।
যদিও বর্ষাকালে সাধারণত ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার বিস্তার ঘটে এবং ডেঙ্গু ছড়ায়। তবে ২০২২ সালে অক্টোবরে দেশে ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়। এখন কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে এবারো ডেঙ্গু পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে পারে। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে জরুরি ভিত্তিতে সিটি করপোরেশনগুলোর নিজস্ব তাগিদে জরিপ করা প্রয়োজন।
ডেঙ্গু শুধু চিকিৎসার বিষয় নয়। জনস্বাস্থ্যের জটিল বিষয়। এর সাথে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, নগর ব্যবস্থাপনা, সামাজিক সচেতনতা নিবিড়ভাবে জড়িত। এসব বিবেচনায় নিয়ে ডেঙ্গু মোকাবেলায় সরকার অতি দ্রুত কর্মসূচি নেবে এমনটিই জনপ্রত্যাশা।


আরো সংবাদ



premium cement