১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

তীব্র গরমে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পোশাকশ্রমিকেরা

তীব্র গরমে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পোশাকশ্রমিকেরা - সংগৃহীত

গত ৭০ বছরের মধ্যে রেকর্ড তাপমাত্রা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এপ্রিল মাসে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছিল।

বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় একটি অংশ তৈরি পোশাক শিল্প থেকে এলেও এই শিল্পের সাথে সরাসরি জড়িত শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও কাজের পরিবেশের সুরক্ষায় সরকার ও প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বের অবহেলার চিত্র প্রায়ই চোখে পড়ে।

২২ বছর বয়সী আয়েশা আক্তার তানিশা আশুলিয়ায় বিদেশী ব্র্যান্ডের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। সেখানে জিন্স ও বাচ্চাদের পোশাক তৈরি করা হলেও তীব্র গরমে কর্মীদের সুরক্ষা দেয়ার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই বলে জানান তিনি।

আয়েশা বলেন, ‘আমাদের মধ্যে প্রায়ই কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিশেষ করে মেয়েরা। অতিরিক্ত গরমের কারণে অনেকে মাথা ঘুরিয়ে বমি করে দেয়।’

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে কর্মরত ৪০ লাখ কর্মীর প্রায় ৬০ শতাংশ নারী।

সম্প্রতি জাতিসঙ্ঘের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সারাবিশ্বের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ শ্রমিক কাজের সময় তীব্র তাপদাহের মুখোমুখি হয়।

অ্যাড্রিয়েন আরস্ট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেসিলিয়েন্স সেন্টারের পরিসংখ্যান বলছে, গরমের তীব্রতায় কর্মীদের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার লোকসানের মুখোমুখি হয়।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছরই তাপদাহের মাত্রা বেড়ে চলেছে।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ লেবার স্টাডিজের সহকারী পরিচালক মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘গার্মেন্টস শিল্পের জন্য তাপদাহ একটি গুরুতর ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

৪০০ পোশাকশ্রমিকের ওপর তিনি একটি জরিপ পরিচালনা করেন। এতে দেখা যায়, পাঁচজন শ্রমিকের মধ্য একজনকে গরমের মাসগুলোতে অন্তত একবার অসুস্থতাজনিত ছুটি নিতে হয়েছে। আর ৩২ শতাংশ শ্রমিক জানিয়েছে, তীব্র গরমের কারণে তাদের কর্মক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।

কিছু শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যবস্থাগ্রহণ করলেও তা অপর্যাপ্ত বলে মনে করছেন শ্রমিক অধিকার নিয়ে কাজ করা অ্যাক্টিভিস্টরা। সরকার, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আরো বেশি প্রতিশ্রুতির দাবি তাদের।

বেশ কিছু পোশাক কারখানার ছাদে এরই মধ্যে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ‘ওয়াটার স্প্রিঙ্কল’ পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ফ্যান ব্যবহার করে বাইরের তাপমাত্রার চেয়ে কারখানার ভেতরে চার থেকে পাঁচ ডিগ্রি কম রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তবে শুধুমাত্র কর্মক্ষেত্রে নয়, পোশাক শ্রমিকদের বাসস্থানেও প্রায় একই অবস্থা। বেশিভাগ সময়ই তাদের ছোট আকারের ঘরে অনেকের সাথে ভাগাভাগি করে থাকতে হওয়ায়, সেখানেও গরমজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement