শহরের মোট দরিদ্র্যের ৫১ শতাংশই নতুন
- অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
- ১৭ মে ২০২৩, ২৩:৩৯
গত বছর মোট দরিদ্রের ৫১ শতাংশই ছিল নতুন দরিদ্র। যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে নেমে গেছে। সঙ্কটে থাকা এই শ্রেণির ওপর আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। দেশে করোনা মহামারীর সময় দারিদ্র্যের হার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছিল। পরে সেটি ধীরে ধীরে কমে আসে। তবে করোনার কারণে শহরে নতুন দারিদ্র্যের আবির্ভাব ঘটেছে বলে রাষ্ট্রীয় গবেষনা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় এমন তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। আর পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, দেশে বৈষম্য বাড়ছে। তবে সেটি প্রাকৃতিক করণে নয়, মানব সৃষ্ট। এই বৈষম্য প্রশমণ ও দরিদ্র মানুষের কষ্ট কমাতে কাজ করছে সরকার।
তিনি বলেন, সমতাভিত্তিক সুযোগ নিশ্চিত করা গেলে বৈষম্য কমানো সম্ভব। আমরা সেটিই করার চেষ্টা করছি।
বুধবার (১৭ মে) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বিআইডিএস রিসার্চ অ্যালমানাক ২০২৩ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে এই গবেষণার তথ্য প্রকাশ করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন।
দু’দিনের বিআইডিএসের এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম ও পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিৎ কর্মকার।
প্রবন্ধে সংস্থাটি জানায়, তারা ২ হাজার ৪৬টি খানার ওপর জরিপ করে এই গবেষণা করেছে। এতে উল্লেখ করা হয়, করোনার আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালে দরিদ্র মানুষের মধ্যে আত্মকর্মসংস্থানের হার ছিল ৩৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। করোনার পর অর্থাৎ গত বছর সেটি বেড়ে ৩৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে অতিদরিদ্র মানুষের মধ্যে করোনার আগে আত্মকর্মসংস্থানের হার ছিল ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। করোনার পর সেটি বেড়ে ৩৩ দশমিক ২১ শতাংশে দাঁড়ায়। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ যে দারিদ্র্য হারের কথা বলা হয়েছে, তার প্রায় অর্ধেক বা ৯ শতাংশের মতো নতুন দরিদ্র হয়েছে। এর আগে তারা নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছিল বলে উপস্তাপনায় বলা হয়।
এছাড়া ২০১৯ সালে দরিদ্র খানা বা পরিবারের মধ্যে ৩৯ দশমিক ২৯ শতাংশ এমএফএস ব্যবহার করতো। করোনার পর অর্থাৎ ২০২২ সালে সেটি বৃদ্ধি পেয়ে ৭৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ হয়েছে। যদিও তাদের ব্যাংক হিসাব খোলার পরিমাণ খুব একটা বাড়েনি। করোনার আগে ৩২ দশমিক ২২ শতাংশ পরিবারের ব্যাংক হিসাব ছিল। পরে সেটি বেড়ে ৩৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ হয়েছে। আর অতিদরিদ্র পরিবারের মধ্যে এমএফএস ব্যবহারের প্রবণতাও বেড়েছে। ২০১৯ সালে এসব পরিবারের মধ্যে ১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ এমএফএস ব্যবহার করতো। করোনার পর এখন সেটি বেড়ে ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ হয়েছে। এই ধরনের অতিদরিদ্র পরিবারের মধ্যে ব্যাংক হিসাব খোলার প্রবণতা বাড়েনি।
বিনায়ক সেন প্রবন্ধে বলেন, মোট দরিদ্রের প্রায় ৫০ শতাংশ নতুন দরিদ্র। যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে নেমে গেছে। সঙ্কটে থাকা এই শ্রেণির ওপর আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, করোনা পরবর্তী সময় দারিদ্র্য কমাতে আত্মকর্মসংস্থান বড় ভূমিকা রেখেছে। যাদের আর্থিক সঞ্চয় ছিল, তারা সেটি ভেঙে নিজের কর্মসংস্থানের জন্য কাজে লাগিয়েছেন। তাছাড়া আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে মোবাইলে আর্থিক সেবা বা এমএফএস আত্মীকরণ দারিদ্র্য কমিয়ে আনতে সহায়তা করেছে।
ড. সেন বলেন, করোনাকালে অনেক শিশু স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে। নিম্ন আয়ের পরিবারের মধ্যে সেই প্রবণতা বেশি। শহরাঞ্চলে সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা অল্প বিধায় এই জায়গায় বেশি নজর দিতে হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, সম্পদ যখন সৃষ্টি হয় তখন বৈষম্য অবধারিত। বৈষম্য প্রশমনে আমরা কাজ করছি। তারই অংশ হিসেবে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতার মতো ভাতা দেয়া হচ্ছে। তারা কাজ না করেও ভাতা পাচ্ছেন।
প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, করোনার সময় দারিদ্রতা বেড়েছিল এটা ঠিক। সরকারের সঠিক পরিকল্পনা এবং উদ্যোগে নিয়ন্ত্রণ কমানো সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে করোনার সময়ে বিভিন্ন উৎপাদমূখী শিল্পকারখানা বন্ধ না রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই কারণে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ক্ষতির প্রভাব পড়েনি।