৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

করোনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে সাড়া নেই ব্যাংকের

তদারকি জোরদারে ১৫ দিন পরপর তথ্য পাঠানোর নির্দেশ
করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প উদ্যোক্তাদের মাঝে ঋণ বিতরণে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না ব্যাংকগুলো। - ফাইল ছবি

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প উদ্যোক্তাদের মাঝে ঋণ বিতরণে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না ব্যাংকগুলো। গত এপ্রিল ও মে মাসে মাত্র পাঁচটি ব্যাংক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণ বিতরণ করেছে ২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে একটি ব্যাংকই বিতরণ করেছে ঋণের ৮০ শতাংশ। এমনি পরিস্থিতিতে প্যাকেজ বাস্তবায়নে তদারকি জোরদারের জন্য ১৫ দিন পরপর ঋণ বিতরণের হালনাগাদ তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

একটি ব্যাংকের এমডি জানান, কিছু কিছু ব্যাংকের ঋণ বিতরণের সক্ষমতা থাকার পরেও বিতরণ করছে না। কারণ এই মুহূর্তে ঋণ বিতরণ করলে তা খেলাপি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দ্বিতীয়ত. বিদ্যমান ঋণও আদায় করা যাচ্ছে না। উপরন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আরো তিন মাস ঋণ পরিশোধ না করলেও ব্যবসায়ীদের খেলাপি না করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো ধরেই নিয়েছিল আগের ৬ মাস চলতি জুন মাসে শেষ হচ্ছে। অর্থাৎ আগে জুন পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের খেলাপি ঋণ না করতে নির্দেশনা ছিল। জুলাই থেকে ব্যবসায়ীদের চাপে রাখলে তারা কিছু টাকা পরিশোধ করতেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় আরো সুযোগ পেয়ে যান ব্যাংকিং খাতের চিহ্নিত ঋণখেলাপি ও রাঘববোয়ালরা। এ কারণে যেটুকু তহবিল তাদের হাতে আছে তা তারা হাতছাড়া করতে চাচ্ছে না। স্বল্প মেয়াদে সরকারের ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগ করে মুনাফা নিতে চাচ্ছে। একই সাথে আপৎকালীন সঙ্কট মেটাতে ট্রেজারি বিল বন্ধক রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তহবিল জোগাড় করতে পারবে। এ কারণে ব্যাংকগুলো এই মুহূর্তে ঋণ বিতরণ করতে চাচ্ছে না। তবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা বেশি হারে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ করতে উৎসাহিত হবেন বলে ওই এমডি জানান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সিআরআর হার দেড় শতাংশ কমানো হয়েছে। এতে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার বাড়তি তহবিল ব্যাংকগুলো পেয়েছে। পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে ঋণ বিতরণের সীমা। আগে ১০০ টাকা আমানত নিলে ৮৫ টাকা বিনিয়োগ করা যেত। কিন্তু এখন তা বাড়িয়ে ৮৭ শতাংশ করা হয়েছে। এতে বিদ্যমান বিনিয়োগসীমার অতিরিক্ত প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর বাইরে বৃহৎ, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও সেবা খাতে ঋণ বিতরণের জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। এর পুরোটাই প্রথমে ব্যাংকগুলোর জোগান দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ব্যাংকগুলোর তহবিল সঙ্কটের বিষয়টি বিবেচনা করে ২৫ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পুনঃঅর্থায়ন তহবিল আকারে জোগান দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর পরেও ঋণ বিতরণে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না ব্যাংক।

এ দিকে করোনা প্যাকেজ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য বৃহস্পতিবার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো কী পরিমাণ বাস্তবায়ন করছে তা তদারকি জোরদার করতে গতকাল সোমবার নতুন করে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট থেকে জারি করা সার্কুলারে বলা হয়, ব্যাংকগুলোকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে কী পরিমাণ ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে তার হালনাগাদ তথ্যপ্রতি ১৫ দিন পরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের আলোচ্য বিভাগে পাঠাতে হবে। আগে এক মাস পর পর এ তথ্য পাঠাতে হতো। এখন থেকে প্রতি মাসের ২০ তারিখের মধ্যে প্রথম ১৫ দিনের হালনাগাদ তথ্য এবং পরের মাসের ৫ তারিখের মধ্যে মাসের দ্বিতীয় ১৫ দিনের হালনাগাদ তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, এর ফলে বেসরকারি খাতে কী পরিমাণ ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে তা তদারকি করা যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement