ভারতীয় সুতা আমদানি রুখতে বিটিএমএ’র অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপের দাবি
- অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
- ০১ জুন ২০২০, ০৮:০৬, আপডেট: ০১ জুন ২০২০, ০৭:৫০
ভারতীয় ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতায় ক্ষেপেছেন টেক্সটাইল খাতের দেশীয় উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশ থেকে পোশাক রফতানিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির তৎপরতায় ক্ষুব্ধ দেশী ব্যবসায়ীদের দাবি, ভারতের ব্যবসায়ীরা ডাম্পিং মূল্যে সুতা রফতানি করায় বাংলাদেশের মিলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভারত থেকে সুতা আমদানির ওপর অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপের দাবি জানান তারা। অর্থমন্ত্রীকে দেয়া এক আবেদনে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) এ দাবি জানায়।
বিটিএমএ সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের ক্ষতি পোষাতে বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া তৈরী পোশাকের ওপর শুল্ক আরোপের দাবি করেছেন ভারতের ব্যবসায়ীরা। এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারতীয় সুতা আমদানির ওপর অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপের দাবি করেছে বাংলাদেশের বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ। সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী শনিবার ভারতীয় সুতার ওপর অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপের দাবি জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে চিঠি দেন। একই সাথে সুতা আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি কাউন্ট সুতার ক্ষেত্রে ট্যারিফ ভ্যালু ধার্য, আমদানি করা সুতার শুল্কায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সুতার আমদানি মূল্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে খালাসের ব্যবস্থা এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত বস্ত্র খাতের নগদ সহায়তা ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণের দাবি জানান তিনি।
জানা যায়, করোনার ক্ষতি পোষাতে বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া তৈরী পোশাকের ওপর শুল্ক আরোপের দাবি করে গত ২২ মে ভারতের বস্ত্রমন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে চিঠি দেন ভারতের দ্য ক্লদিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার (সিএমএআই) সভাপতি রাকেশ বিয়ানি। আগামী ১২ মাসের জন্য শুল্ক আরোপ চায় ভারতের পোশাক উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীদের এ সংগঠনটি। সিএমএআই সভাপতি রাকেশ বিয়ানি চিঠিতে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ থেকে শুল্কমুক্ত পোশাক আমদানির মাধ্যমে পেছন দরজা দিয়ে চীনের কাপড় ভারতে চলে আসছে। তাতে অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানা-নির্ভর দেশীয় পোশাক খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। করোনায় ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে পোশাকের চাহিদা ৪০ শতাংশের বেশি কমেছে বলেও দাবি করে সিএমএআই।
বিটিএমএ’র সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ গত অর্থবছর ভারত থেকে ৩৯৪ কোটি ডলারের তুলা, সুতা, সুতি কাপড়সহ বস্ত্র খাতের বিভিন্ন সামগ্রী আমদানি করেছে। এক্ষেত্রে ভারতের সাথে আমাদের বাণিজ্যের অনুপাত নেতিবাচক। তারপরও তৈরী পোশাক রফতানির ওপর শুল্ক আরোপের প্রস্তাব অন্যায্য ও অগ্রহণযোগ্য। বাংলাদেশ থেকে গত ২০১৮-১৯ অর্থবছর ভারতে ৩৬ কোটি ডলারের তৈরী পোশাক রফতানি হয়েছে, যা কিনা দেশটির মোট পোশাক আমদানির ৩৩ শতাংশ। বিষয়টি সিএমএআই সভাপতি চিঠিতে বেশ গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করেন। গত অর্থবছরই ভারতে পোশাক রফতানির বিপরীতে বাংলাদেশ ১০ গুণ বেশি পরিমাণ অর্থমূল্যের সুতা, তুলা, কাপড় ইত্যাদি সামগ্রী আমদানি করেছে বলে দাবি করেছে বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী।
ভারতীয় স্পিনিং মিলগুলো মজুদ সুতা বিক্রি করতে ডাম্পিং মূল্যে বাংলাদেশে রফতানি করছে দাবি করে এতে বলা হয়, ভারতীয় ৪০ কাউন্টের সুতা বর্তমানে যে মূল্যে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের দিচ্ছে তা বর্তমান তুলার মূল্যসহ উৎপাদনের অন্যান্য অনুসর্গ বিবেচনায় নিলে কখনই সম্ভব হবে না। এতে আমাদের বস্ত্রকলগুলো অসম মূল্য প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। মিলগুলোতে সুতার মজুদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান সঙ্কট থেকে বস্ত্র খাত ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য একটি পরিকল্পিত টেকসই ব্যবস্থা নিতে হবে জানিয়ে এতে আরো বলা হয়, এক্ষেত্রে বিকল্প নগদ সহায়তার হার বৃদ্ধি, সুতার আমদানির ওপর অ্যান্টিডাম্পিং ডিউটি আরোপ, সুতা আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি কাউন্ট সুতায় ট্যারিফ ভ্যালু ধার্যসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আইন অনুযায়ী, উৎপাদনকারী দেশ যখন স্বাভাবিক দামের চেয়ে কম দামে অন্য দেশে পণ্য রফতানি করে, তখন সেটাকে বলা হয় ডাম্পিং। তখন আমদানিকারক দেশ ওই পণ্যের ওপর অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে। এ জন্য দেশটিকে নিজস্ব শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রমাণ দেখাতে হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা