ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন আইন বাস্তবায়নেই ব্যয় ৮.৩১ কোটি টাকা
- হামিদ সরকার
- ০৬ মার্চ ২০২০, ০৯:৩৬, আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২০, ০৯:৪৫
নির্বিচারে ক্ষতিকর বৈধ জাল এবং সরঞ্জাম নিয়ে জাটকা ও মা ইলিশ ধরা হচ্ছে। আর ইলিশ সম্পদ রক্ষায় মৎস্য সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়নে চার বছরে খরচ হবে আট কোটি ৩১ লাখ টাকা। প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট উভয় কারণেই ইলিশের উৎপাদন কমছে। অথচ বিশ্বের প্রায় ৬০ শতাংশ ইলিশ উৎপাদন হয় বাংলাদেশের নদ-নদীতে। এখন উৎপাদন বৃদ্ধিতে দেশের ছয়টি অভয়াশ্রমের ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতা আনার পদক্ষেপ নিতে ২৩১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প প্রস্তাব করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, ২০১৭ সালের জুলাইতে ডিপিপি সংশোধনের জন্য বলা হয়। সেই সংশোধন আসে এক বছর চার মাস পর। এর কারণও প্রস্তাবনাতে উল্লেখ করেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনার তথ্যানুযায়ী, ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ এবং নবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানে এর যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশের অবদান সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ, যা জিডিপির এক শতাংশ। পাঁচ লাখ লোক ইলিশ আহরণের সাথে সরাসরি নিয়োজিত। আর ২০ থেকে ২৫ লাখ লোখ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। আশির দশকের আগে মোট মৎস্য উৎপাদনের ২০ শতাংশ ছিল ইলিশের অবদান। ২০০০-০১ সালে ইলিশের উৎপাদন ২.২৯ লাখ মেট্রিক টন, ২০০১-০২ সালে কমে ২.২০ লাখ মেট্রিক টন, ২০০২-০৩ সালে আরো কমে ১.৯৯ লাখ মেট্রিক টন। তবে ২০১৭-১৮ সালে উৎপাদন বেড়ে হয় ৫.১৭ লাখ মেট্রিক টন, যা এই প্রকল্প শেষে ছয় লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হবে।
আর কমে যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের পরিবেশগত পরিবর্তনের ফলে বিশেষ করে বিভিন্ন নদ-নদীতে বাঁধ ও ব্রিজের কারণে। এ ছাড়া উজান থেকে পরিবাহিত পলি জমার জন্য পানিপ্রবাহ ও নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে। দূষিত হয়ে পড়ছে জলজ পরিবেশ। ফলে ইলিশের পরিভ্রমণ পথ, প্রজননক্ষেত্র, বিচরণ ও চারণক্ষেত্র দিন দিন পরিবর্তিত এবং বিনষ্ট হচ্ছে। এ জন্য উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। ইলিশের জন্য খ্যাত একসময়ের পদ্মা, ধলেশ্বরী, গড়াই, চিত্রা, মধুমতি ইত্যাদি নদীতে বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে ইলিশ মাছ প্রায় পাওয়াই যায় না।
মৎস্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্টরা জানান, যদি এই ক্ষতিকর অবৈধ জাল ও সরঞ্জাম নির্মূল করা না যায় তাহলে ইলিশের কাক্সিক্ষত উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে। তাই ২৩১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার এই প্রকল্প প্রস্তাবনা, যার মাধ্যমে জাটকা ও মা ইলিশ সংরক্ষণের মাধ্যমে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পে জাটকা ধরা নিষিদ্ধ সময়ে এবং জেলেদের অবৈধ মাছ ধরা বন্ধে বিভিন্ন ধরনের কম্বিং অপারেশন, ক্র্যাশ প্রোগ্রাম এবং অভিযান পরিচালনার সংস্থান রাখা হয়েছে। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে দু’দফায় ভোলা, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলায় অভিযানে ২২৫টি মোবাইল কোর্ট ও ৪৩৩টি অভিযান চালিয়ে এক হাজার ৩২৬টি বেহন্দি জাল এবং এক হাজার ৭১টি অন্যান্য জাল যেমন- বেড় জাল, চর ঘড়া জাল, মশারি জাল, পাইজাল ইত্যাদি আটক করা হয়।
প্রকল্পের মাধ্যমে উপকূলীয় এলাকার ৪০ হাজার জেলে পরিবারকে স্বাবলম্বী করা হবে। ১৫ হাজার জেলের আইডি কার্ড হালনাগাদ করতে হবে। সাত জেলায় নির্বাচিত গ্রামে বৈধ জাল বিতরণের মাধ্যমে আদর্শ মৎস্যজীবী গ্রাম সৃষ্টি করা। ২৯ জেলার ১৩৪টি উপজেলায় প্রকল্পের এলাকা বিস্তার লাভ করায় পদ্মাসহ অন্যান্য নদীতে ইলিশের পরিমাণ বৃদ্ধি করা। ছয় জেলার ২৩টি উপজেলার ৪৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীতে ছয়টি অভয়াশ্রম স্থাপিত হয়েছে।
প্রকল্পের ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৭৪ জনের জন্য ভ্রমণ ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় কেটি ৯৯ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এখানে মাথাপিছু ব্যয় চার লাখ দুই হাজার টাকা। ২৯টি বোট কেনা হবে। এতে ব্যয় হবে ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রতিটি বোটের দাম ৩২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। জাটকা মাছ ও মা ইলিশ সংরক্ষণে মৎস্য সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়নে মোট ১৬ হাজার ৬১৬টি অপারেশন করা হবে, যার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে আট কোটি ৩০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সম্মিলিত বিশেষ অভিযানে ব্যয় হবে ২১ কোটি আট লাখ ৭০ হাজার টাকা। এখানে তিন বছরে এক হাজার ২৭৮টি অভিযান পরিচালনা করা হবে। অবৈধ ও ধ্বংসাত্মক জাল নির্মূলে জাল বিনিময়ে খরচ ৬০ কোটি টাকা। প্রতি পরিবার পাবে ৬০ হাজার টাকা। বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য ব্যয় ৭৫ কোটি টাকা। ৫০টি নিখোঁজ জেলে পরিবারকে সহায়তা। ১৫ হাজার জেলেকে আইডি কার্ড দিতে ব্যয় হবে সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের যুগ্ম প্রধান ড. মো: শাহজাহান আলী খন্দকারের অভিমত হলো, সর্বপ্রথম ২০১৭ সালে এই প্রস্তাব পাঠানো হয়। এটা ২০১৭ সালের পরিপ্রেক্ষিতে করা হয়। বর্তমান বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে তা কতটা যৌক্তিক তা দেখতে হবে। এখানে আদর্শ মৎস্যজীবী গ্রাম প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব বাদ দিতে হবে। কারণ আদর্শ মৎস্যজীবী গ্রাম বলতে শুধু বৈধ জাল ব্যবহারকারী জেলেদের গ্রাম বুঝায় না। এখানে অবকাঠামোগত সুবিধাদিও বুঝায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা