২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বিদেশী কোম্পানি টাকায় ঋণ নিতে অনুমোদন লাগবে না

বিদেশী কোম্পানি টাকায় ঋণ নিতে অনুমোদন লাগবে না - সংগৃহীত

বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর নামে একের পর এক বৈদেশিক মুদ্রা নীতিমালা শিথিল করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সার্কুলারে বলা হয় স্থানীয় মুদ্রায় অর্থাৎ টাকায় ঋণ নিতে কোনো বিদেশী কোম্পানিকে আর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না। আগে টাকায় যেকোনো পরিমাণ ঋণ নিতে বিদেশী কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের প্রয়োজন হতো। 

বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, স্থানীয় মুদ্রায় বিদেশী কোম্পানিগুলো ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা না থাকলে দেদার ঋণ নেবে বিদেশী কোম্পানিগুলো। একপর্যায়ে বেশি হারে মুনাফা করে বৈদেশিক মুদ্রায় মুনাফা চলে যাবে কোম্পানিগুলোর নিজ দেশে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর চাপ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

জানা গেছে, বিদেশী কোম্পানিগুলো তাদের নিজ দেশ থেকে মূলধন এনে বাংলাদেশে ব্যবসা করে। কিন্তু স্থানীয় কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্য কেনার জন্য স্থানীয় মুদ্রা প্রয়োজন হয়। বিদেশ থেকে মূলধন এনে চাহিদা মেটানো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে বিদেশী কোম্পানিগুলোর চাহিদা অনুযায়ী একপর্যায়ে বিদেশী কোম্পানিকে স্থানীয় মুদ্রা অর্থাৎ টাকায় ঋণ নেয়ার অনুমোদন দেয়া হয়। তবে যে কোনো ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি থেকে ঋণ নিতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হতো। নীতিমালার আওতায় থাকা কোম্পানিগুলোও বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইচ্ছেমাফিক ঋণ দিতে পারত না।

এ দিকে বিদেশী কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ থেকে যে মুনাফা করে প্রতি বছর তার একটি অংশ নিজ দেশে পাঠিয়ে থাকে। সর্বশেষ নিয়মে চেক অ্যান্ড ব্যালান্স থাকবে না বলে দেদার স্থানীয় মুদ্রায় ঋণ নিয়ে প্রতি বছর বর্ধিত মুনাফার একটি অংশ নিজ দেশে পাঠাতে পারবে। স্থানীয় মুদ্রায় ঋণ নিয়ে মুনাফা করলেও নিজ দেশে মুনাফা পাঠানো হয় বৈদেশিক মুদ্রায়। এতে বর্ধিত মুনাফার একটি অংশ বৈদেশিক মুদ্রায় পাঠালে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর যেমন চাপ বাড়বে, পাশাপাশি বর্ধিত হারে মুনাফা পাঠাতে পাঠাতে এক সময় সংশ্লিষ্ট কোম্পানির মূলধনই থাকবে না। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ থেকে জারিকৃত সার্কুলার সম্পর্কে গতকালই সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকে অবহিত করা হয়েছে। সার্কুলারে বলা হয়েছে, বিদেশী কোম্পানিগুলো চলতি মূলধনী ঋণের ক্ষেত্রে আগে টাকায় ঋণ নিতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের প্রয়োজন হতো। এখন থেকে আর বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই বিদেশী কোম্পানিগুলোকে ঋণ দিতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এমনিতেই বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর চাপ বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলোতে টাকার সঙ্কটের কারণে স্থানীয় কোম্পানিগুলো বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নিচ্ছে দেদার। এতে প্রতি বছর মুনাফাসহ ওই সব ঋণের বড় একটি কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রায়। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) জ্বালানি তেল আমদানির ঝুড়িতে এলএনজি যুক্ত হয়েছে। এতে প্রতি মাসেই বৈদেশিক মুদ্রায় বড় অঙ্কের দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দায়ের একটি অংশ পরিশোধ করতে হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রায়। এর ওপর বিদেশী কোম্পানিগুলো বর্ধিত মুনাফা করার সুযোগ করে দিয়ে এই মুনাফা বৈদেশিক মুদ্রায় চলে গেলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর চাপ আরো বেড়ে যাবে।

প্রসঙ্গত, গত ৮ মে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে নীতিমালা শিথিল করে আরো একটি সার্কুলার জারি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে শুধু বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন হয় এমন শাখায় (এডি) বিদেশী বিনিয়োগকারীরা স্থানীয় মুদ্রায় অ্যাকাউন্ট খুলতে পারত। সার্কুলারের মাধ্যমে তফসিলি ব্যাংকগুলোর সবশাখায় বিদেশী বিনিয়োগকারীদের হিসাব খোলার সুযোগ দেয়া হয়। 


আরো সংবাদ



premium cement