২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯ মাঘ ১৪৩১, ২২ রজব ১৪৪৬
`

আয়করের ভীতি : সঠিক তথ্য পেতে হিমশিম অর্থনৈতিক শুমারির মাঠকর্মীদের

গাজীপুরে অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪-এর তথ্য সংগ্রহ চলছে - ছবি : নয়া দিগন্ত

আয়কর ও ভ্যাট প্রদানের ভয় কাজ করছে বড় শিল্পমালিকরা ছাড়াও শহরের বাইরের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের। ছোট টং দোকান থেকে শুরু করে শিল্পমালিকরা তাদের ব্যবসার আয়-ব্যয়ের সঠিক তথ্য দিতে গড়িমসি করছেন। ফলে অর্থনৈতিক শুমারি-২০২৪-এর মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে গণনাকারীদের। ফলে তথ্য সংগ্রহের সুপারভাইজার ও পরিসংখ্যান কর্মকর্তাদেরকে প্রশাসনের সাহায্য নিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।

আর তথ্যদাতাদের অভিমত, আমাদের আয়ের খবর পেলে আয়কর থেকে চাপ সৃষ্টি করা হবে। এখানে তথ্য গোপন থাকবে না।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) গাজীপুরের কালিগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।

সরেজমিনে গাজীপুরের কালিগঞ্জ এলাকার মুরকী, নাওটানার মোড়, পানজোড়া ও শুকপাড়া গ্রামে শনিবার পরিসংখ্যান ব্যুরোর অর্থনৈতিক শুমারির তথ্য সংগ্রহের সময় এসব দেখা যায়। তথ্য সংগ্রহে ছিলেন সুপারভাইজার রিনথী রানী রায়।

উল্লেখ্য, অর্থনৈতিক শুমারি-২০২৪ তে সারাদেশে ৯৫ হাজার তথ্য সংগ্রহকারী এবারের শুমারিতে তথ্য সংগ্রহ করছেন। টানা ১৫ দিন অর্থাৎ ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে শুমারির তথ্য সংগ্রহের কাজ। এবারই প্রথম ট্যাবের মাধ্যমে ক্যাপি পদ্ধতিতে এই শুমারির তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক শুমারিতে ৭০টি প্রশ্ন উঠে আসবে। ইতোমধ্যে লিস্টিংয়ের মাধ্যমে ১ কোটি ২২ লাখ ইউনিট চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখান থেকে এবং এর বাইরে থেকেও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হবে।

এবার শুমারিতে প্রথমবারের মতো দেশে কতজন বিদেশী কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন, তারা কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানে কোন পদে কর্মরত আছেন এবং নারী-পুরুষ কতজন– সেসব তথ্য তুলে ধরা হবে। সারাদেশে ৯৫ হাজার তথ্য সংগ্রহকারী এবারের শুমারিতে তথ্য সংগ্রহ করবেন। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে প্রতি ১০ বছর পর এমন শুমারি করছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

কালীগঞ্জের স্বাধীনতা চত্বরের (সাবেক ময়েজ উদ্দিন চত্বর) নিশাদ স্টোরে দেখা হয় গণণাকারী মো: হাসমত উল্লাহর সাথে। তিনি ওই স্টোরের মালিক (মুদি সামগ্রী ও চা বিক্রেতা) আসলামের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছেন। প্রথম দিকে আসলাম তথ্য দিতে গড়িমসি করছিলেন। তার আয়ের ওপর আয়কর ধার্য করা হবে কি না, এমনই ভাবছিলেন। শুমারির তথ্য সংগ্রহকারী তাকে বোঝাতে সক্ষম হন যে এসব তথ্য সরকারি নীতি নির্ধারণের কাজে ব্যবহার হবে। এর সাথে রাজস্ব বোর্ডের কোনো সম্পর্ক নেই। পরে সুন্দরভাবে সব তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন তিনি। এ সময় আসলাম বলেন, ‘আমরা ছোট ব্যবসা করি। এর হিসাব সরকারের কাছে থাকলে আমাদেরই ভবিষ্যৎ ভালো হবে। অবশ্যই চাই দেশের স্বার্থে সরকারকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে।’

একই ইউনিয়নের নাওটানা মোড়ের মাসুক স্টোরের মালিক মাসুকের কাছ থেকে তথ্য নেন গণনাকারী জুয়েল সিকদার। সাথে ছিলেন সুপারভাইজার রিনথী রানী রায়। মাসুক তথ্য সংগ্রহকারীকে তার ব্যবসার সমস্যা, সুবিধা, আয়- সব বিষয়েই তথ্য দেন। তিনি বলেন, দেশের কাজে সামান্য অবদান রাখতে পারলেই খুশি। মানুষকে সহজে বুঝাতে পারলে তারা অবশ্যই রাষ্ট্রকে তথ্য দেবে।

পানজোরা দক্ষিণ পাড়া গ্রামের অটোচালক কাদের শেখ পেশায় অটোরিকশাচালক। তার বাড়িতে তথ্য সংগ্রহ করেন গণণাকারী নুশরাত জাহান। তিনি অটোচালকের স্ত্রীর সাথে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করেন।

কাদেরের স্ত্রী শিউলী নয়া দিগন্তকে জানান, ২০২২ সালে তার স্বামী ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় পুরাতন অটোরিকশা কিনেন। ওই অটো নতুন কিনতে গেলে পৌনে ২ লাখ টাকা লাগে। দুই সন্তান নিয়ে তারা বেশ কষ্টেই আছেন। যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার ও একটি ছেলের অষ্টম ও আরেকটির পঞ্চম শ্রেণীর পড়াশোনা চালানো কষ্টকর। সকাল ৮/৯টায় তার স্বামী অটোরিকশা নিয়ে বের হন। দুপুরে খেতে আসেন। তবে তিনি রিজার্ভেই বেশি চালান।

আর গণণাকারী নুসরাত জানান, এই রিকশা চালাতে প্রতিদিন তাকে ১০০ টাকার বিদ্যুৎ খাতে খরচ করতে হয়। ফলে বিদ্যুতের বিল দেয়ার পর তেমন আয় থাকে না।

আর সুখপাড়া গ্রামের শামসুন নাহার নয়া দিগন্তকে বলেন, পাট সুতা ও কটন সুতা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সিঁকে তৈরি করছেন। সমিতির মাধ্যমে তারা ৩০ জন নারী সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে এ কাজ করছেন। তিনি জানান, তারা সবাই মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন। এসব পণ্য আমেরিকা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ রফতানি হয়। তারা শুধু শ্রম দেন। এসবের মালিক অন্যজন।

তিনি বলেন, এই কাজের উপর তিন মাসের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। প্রতিটি সিকা তৈরিতে তিন থেকে ১০ টাকা দেয়া হয় মজুরি। তারাই সুতা দেন। আমরা শুধু কাজ করে দেই। তিনি বলেন, আট বছর ধরে এই কাজ করছেন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। স্বামী রাজমিস্ত্রীর পেশায় আছেন।

গাজীপুর-৪ জেলা অর্থনৈতিক শুমারি সমন্বয়কারী (কালিয়াকৈর, কালিগঞ্জ ও পুবাইল এলাকার) ও পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মুর্শিদা ইয়াসমিনের সাথে কথা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে জানান, তার এলাকায় এই কাজের জন্য মোট ৭৬৯ জন গণনাকারী কাজ করছেন। শনিবার পর্যন্ত তাদের কাজের ৬০ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে।

তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে তথ্য পেতে বেগ পেতে হয়। কারণ আয়করের ভয়ে অনেকে সঠিক তথ্য দিচ্ছেন না। তবে কৌশল করে ভয় ভাঙ্গিয়ে তথ্য আনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, তার এলাকাতে খানা ও প্রতিষ্ঠান মিলে এক লাখের তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। শনিবার পর্যন্ত ৬০ শতাংশের বেশি তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সমস্যা হলো কিছু কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠানের তথ্য প্রথম যাওয়াতে পাওয়া যায় না। তারা বলে, তাদের হেড অফিসের অনুমতি লাগবে। আবার কেউ কেউ বলছে, তাদের কাছে তথ্য নেই। হেড অফিস থেকে আনতে হবে। তবে এক্ষেত্রে আমরা জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সাহায্য নিয়ে তথ্য পাচ্ছি।

তিনি বলেন, ২৬ তারিখে তথ্য সংগ্রহ শেষ হলে আমরা আবার মাইকিং করবো। কেউ যদি বাদ গিয়ে থাকে তাদেরকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে।

সুপারভাইজিং অফিসার উপপরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, গ্রামে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে বড় কারখানায় মাঝে মধ্যে তথ্য সংগ্রহকারীদের ঢুকতে সমস্যা হয়। আমরা তখন সিটি করপোরেশনের সহায়তা নেই। তবে এখন পর্যন্ত সমস্যার কারণে তথ্য না পাওয়ার ঘটনা ঘটেনি।


আরো সংবাদ



premium cement
আমেরিকার সন্ত্রাসবাদের তালিকাভুক্ত হওয়ায় ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ’র প্রতিক্রিয়া দেশের সুবিধা বঞ্চিত শিশুকে আমরা সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলব : দেলাওয়ার হোসেন আ’লীগকে রাজনৈতিক ব্ল্যাঙ্ক চেক দিতে চায় বিএনপি : হাসনাত আব্দুল্লাহ মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের সাহায্য করছে যে ‘তরমুজ‘ গুপ্তচররা পটুয়াখালীতে আজহারীর মাহফিল ২৫ জানুয়ারি, ব্যাপক প্রস্তুতি বনশ্রীর স্কুল অফ দ্য নেশনে অনুষ্ঠিত হলো পিঠা উৎসব সিরাজগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতপন্থী পূর্ণপ্যানেল জয়ী হারানো সম্মান, চাকরি ও ক্ষতিপূরণ চান মুক্তিপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্যরা বিএনপি মহাসচিবের দাবি আরেকটা ১/১১ এর ইঙ্গিত : উপদেষ্টা নাহিদ ভোরের কাগজ খুলে দেয়ার দাবিতে কর্মীদের অবস্থান কর্মসূচি মালয়েশিয়ায় ৭১ বাংলাদেশীসহ ১৭৬ অভিবাসী আটক

সকল