রফতানিকারকদের জন্য চালু হচ্ছে পেপারলেস সেবা
বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধার অপব্যবহার বন্ধ হবে- শাহ আলম
- ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০, আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫১
দেশের রফতানিকারকদের মধ্যে অনেকেই রফতানির নামে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধা নিয়ে পণ্য আমদানি করে তা খোলা মার্কেটে বিক্রি করে দিচ্ছেন এমন অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। অর্থাৎ অনেকেই বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধার অপব্যবহার করেন। এবার এসব রফতানিকারকের ওয়্যারহাউজ সুবিধা অপব্যবহার বন্ধে চালু করা হচ্ছে পেপারলেস সেবা। এর মাধ্যমে এক দিকে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধার অপব্যবহার বন্ধ হবে। অপর দিকে সরকারের সাশ্রয় হবে হাজার কোটি টাকার রাজস্ব। এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের রফতানিকারকরা আগামী জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধা ভোগ করবেন। এ সেবা চালুর মাধ্যমে রফতানিকারকরা কাগজবিহীন বা পেপারলেস পরিষেবা গ্রহণ করবেন। এতে এক দিকে যেমন সাশ্রয় হবে সময় অপর দিকে আর্থিক খরচও কমবে। এতে রফতানিকারকদের কাজে আরো গতি আসবে বলে এনবিআরের কর্মকর্তারা মনে করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পেপারলেস সেবা চালু করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সম্পূর্ণ করেছে। এ জন্য চালু করতে যাচ্ছে নতুন মডিউল। নতুন পদ্ধতি চালু করতে সাত বছরমেয়াদি একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে এনবিআর। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ৩১ ডিসেম্বর।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, কাগজবিহীন বা পেপারলেস পরিষেবা চালুর মাধ্যমে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ-ব্যবস্থার সুবিধার অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব হবে। একই সাথে রফতানিকারকদের আর যেতে হবে না কাস্টমস বন্ড অফিসে। এ দিকে নতুন এ সেবা চালুর মাধ্যমে রফতানিকারকদের লাইসেন্সসহ অন্যান্য পরিষেবা গ্রহণ করবেন নিজের অফিসে বা বাসায় বসে।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো: আবদুর রহমান খান নয়া দিগন্তকে বলেন, নতুন সেবার মাধ্যমে এনবিআরের কার্যক্রমে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এ সেবার মাধ্যমে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধার অপব্যবহার যেমন বন্ধ হবে। গতি আসবে সেবায়। নতুন এই সেবা চালুর মাধ্যমে বন্ড লাইসেন্স ইস্যু করার প্রক্রিয়াকে সহজ করবে এবং বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধার সম্ভাব্য অপব্যবহার হ্রাস করবে।
তিনি বলেন, রাজস্ব বোর্ড রফতানিকারকদের জন্য ডাটাবেজ তৈরির পরিকল্পনা করছে। কারণ রফতানিকারকদের বেশির ভাগই ম্যানুয়াল বন্ড লাইসেন্স সুবিধা ভোগ করছে। ডাটাবেজ করতে পারলে সবাইকে সফটওয়্যারের মাধ্যমে সেবা দেয়া সম্ভব হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমরা চেষ্টা করছি ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে। তিনি বলেন নতুন এ সেবা চালু করতে পারলে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে রফতানিকারকদের যেকোনো ধরনের সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে, এতে সময় এবং শ্রম দ’টিই সেফ হবে।
এ দিকে এনবিআর কর্মকর্তারা বলেছেন, নতুন সেবা চালুর পর ম্যানুয়াল সিস্টেমে কোনো রকমের সেবা প্রদান করা হবে না। শেষ এবার মাধ্যমে রফতানিকারকদের সব ধরনের সেবা ডিজিটাল সিস্টেম বা সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রদান করা হবে।
বাংলাদেশের রফতানিকারকদের মধ্যে সাত হাজার বন্ড লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী রয়েছেন। এসব ব্যবসার মধ্যে বেশির ভাগই শুল্কমুক্ত আমদানি-রফতানি কার্যক্রম পরিচালনা করতে ম্যানুয়াল পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।
এনবিআর চেয়ারম্যানের মতে, নতুন সেবার মাধ্যমে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধার অপব্যবহার সম্পর্কে অভিযোগ কমে যাবে। কারণ স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানি, অপচয় এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্যের ডাটা সহজেই তৈরি করা সম্ভব হবে। নতুন সেবা চালুর মাধ্যমে বন্ড লাইসেন্সধারীদের রফতানি, আমদানি কার্যক্রম অডিট ঝামেলামুক্ত হবে। এর মাধ্যমে কাস্টমস বন্ড অফিসে শারীরিক উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা দূর হবে।
তথ্যে দেখা যায়, বন্ড ম্যানেজমেন্ট অটোমেশন প্রজেক্ট, ১ জুলাই ২০১৭-এ চালু চালু হয়। এ সময় জানানো হয়, ৩০ জুন ২০২১-এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি হয়। এরপর প্রকল্পটির কাজ একাধিকবার এক্সটেনশন বা সময় বৃদ্ধি করা হয়। প্রকল্পের ব্যয়, প্রাথমিকভাবে ৯৩ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়।
ঢাকা দক্ষিণ অঞ্চলের ভ্যাট কমিশনার ও প্রকল্প পরিচালক মো: ফয়জুর রহমান বলেন, শুল্কমুক্ত আমদানিকৃত পণ্য ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে অবৈধভাবে বিক্রি করা হচ্ছে। যার ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। এই স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার লক্ষ্য এই ধরনের সমস্যাগুলো সমাধান করা। নতুন এই সিস্টেমের সব ২৪টি মডিউল পর্যায়ক্রমে কার্যকর হবে। তিনি সফ্টওয়্যার কোম্পানি থেকে প্রযুক্তি স্থানান্তরের মতো চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন এবং সিস্টেমটি কার্যকরভাবে পরিচালনা করার জন্য এনবিআর-এর আইসিটি টিমকে সজ্জিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম অটোমেশন এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে নয়া দিগন্তকে বলেন, নতুন এ সেবা শুধু চালু করলে হবে না। এটির বাস্তবায়নও করতে হবে। স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার সাফল্যের জন্য কাস্টমস কর্মকর্তাদের মানসিকতা পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূণ বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, যদি কারো খারাপ উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে ডিজিটাল সিস্টেমকে বাইপাস করার উপায় খুঁজে পেতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা