০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আদানিকে বিদ্যুতের দাম কমাতে বলবে বাংলাদেশ

আদানিকে বিদ্যুতের দাম কমাতে বলবে বাংলাদেশ - সংগৃহীত

আদালত আদানির সাথে চুক্তি বাতিল না করলে বিদ্যুতের দাম কমাতে দরকষাকষিতে যেতে চায় বাংলাদেশ। এ সম্পর্কে অন্তর্বর্তী সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, চুক্তিতে কোনো অসংগতি থাকলে তা নিয়ে পুনরায় আলোচনা করা হবে। দুর্নীতি বা ঘুষের মতো অনিয়ম পাওয়া গেলেই কেবল চুক্তি বাতিল বিবেচনা করা হবে।

তবে তা আদালতের নির্দেশে যে তদন্ত চলছে তার ভিত্তিতেই হবে বলে জানান তিনি।

রোববার (১ ডিসেম্বর) ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

জ্বালানি উপদেষ্টা জানান, আদালত আদানি গ্রুপের সাথে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিটি বাতিল না করলে বাংলাদেশ এর আওতায় বিদ্যুতের দাম অনেকটা কমাতে চায়।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ভারত সরকারের কাছ থেকে কিছু করছাড় পেলেও বাংলাদেশ তা থেকে উপকৃত হচ্ছে না। বিষয়টি ইতোমধ্যে আদানি গ্রুপকে জানানো হয়েছে। চুক্তি পুনর্বিবেচনার একাধিক কারণের মধ্যে এটিও একটি হতে পারে।

আদানির বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতে দুর্নীতির অভিযোগ বাংলাদেশের সাথে চুক্তিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেও মনে করেন ফাওজুল কবির।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আদানি গ্রুপ বাংলাদেশের কাছ থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম নিয়েছে ১৪.০২ টাকা। ভারতীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের মধ্যে আদানিই বিদ্যুতের দাম রেখেছে সবচেয়ে বেশি। অন্যান্য উৎপাদনকারীরা গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম রাখে ৮.৭৭ টাকা।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে আদানির বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ১২ টাকায় নেমে এলেও তা ভারতের অন্যান্য বেসরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের তুলনায় যথাক্রমে ২৭ শতাংশ ও ৬৩ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের খুচরা মূল্য ৮.৯৫ টাকা। এর ফলে ভর্তুকি বাবদ সরকারের বছরে ব্যয় ৩২০ বিলিয়ন টাকায় দাঁড়ায় বলে জানান ফাওজুল কবির।

তিনি বলেন, ‘দাম বেশি দাম হওয়ায় সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আমরা চাই শুধু আদানির ক্ষেত্রে নয়, বিদ্যুতের দাম সামগ্রিকভাবেই গড় খুচরা মূল্যের নিচে নেমে আসুক।’

তবে আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় অব্যাহত থাকবে বলে জানান ফাওজুল কবির। বিল পরিশোধে বিলম্ব হওয়ায় আদানি সম্প্রতি বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে এনেছিল।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের নিজস্ব চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট স্থানীয় সক্ষমতা রয়েছে। যদিও গ্যাস সঙ্কট বা অন্যান্য সমস্যায় কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে রয়েছে অথবা সক্ষমতার চেয়ে কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।

তিনি বলেন, ‘আদানি সরবরাহ কমিয়ে অর্ধেক করে দেয়ার পরও কোনো সমস্যা হয়নি। কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী যেন আমাদের ব্ল্যাকমেইল করতে না পারে, সেই সুযোগ আমরা দেবো না।’

২০১৭ সালে আদানি গ্রুপের সাথে চুক্তি করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডায় অবস্থিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ। দীর্ঘমেয়াদি এই চুক্তিতে রয়েছে অসমতা। চুক্তিতে এমন অনেক শর্ত আছে, যেগুলোর কারণে ২৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় তিন লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা বাড়তি নিয়ে যাবে আদানি।

এদিকে রয়টার্সে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশের পরদিন সোমবার আদানি গ্রুপ এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে চুক্তি বিবেচনার কোনো ইঙ্গিত তারা এখনো পায়নি।

বিবৃতিতে আদানি গ্রুপের এক মুখপাত্র বলেন, আদানি পাওয়ার ক্রমবর্ধমান বকেয়া থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে, যা বেশ উদ্বেগের বিষয়।

তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) এবং বাংলাদেশ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে ক্রমাগত সংলাপ করছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে যে আমাদের বকেয়া শিগগিরিই পরিশোধ করা হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement