রাজস্ব আদায় বাড়ানোর উপায় খুঁজছে বাংলাদেশ
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৫:২৩, আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৫:২৫
রাজস্ব আহরণ জোরদার করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে, যা রাজস্ব বৃদ্ধির ওপর সাম্প্রতিক সরকারি মূল্যায়নে তুলে ধরা হয়েছে। এটি একটি পরিমাপ, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে কর ও রাজস্ব কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় তা প্রতিফলিত করে।
রাজস্ব উচ্ছাস, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) রাজস্বের প্রতিক্রিয়াশীলতা, রাজস্ব ব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং রাজস্ব বৃদ্ধির পূর্বাভাস পরিমাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড।
একের বেশি একটি উচ্ছাস সহগ ইঙ্গিত দেয় যে যখন একের চেয়ে কম সহগ ধীর বৃদ্ধির পরামর্শ দেয়, তখন করের রাজস্ব জিডিপির তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
প্রকৃত জিডিপি এবং ২০১২ অর্থবছর থেকে ২০২৩ অর্থবছর পর্যন্ত প্রকৃত রাজস্ব বৃদ্ধির হার ব্যবহার করে এক বিশ্লেষণে শূন্য দশমিক ৯০-এর গড় রাজস্ব উচ্ছাস পাওয়া গেছে, যার অবস্থান একের নিচে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের নথিতে বলা হয়েছে, এই নিম্ন স্কোর বাংলাদেশে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর সুযোগকে তুলে ধরে।
সরকারি মূল্যায়নে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, কার্যকর করের হার রাজস্ব কর্মক্ষমতার আরেকটি পরিমাপ হিসাবে কাজ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ভ্যাটের কার্যকর হার বাস্তব খাত থেকে ভোগের তথ্যের সাথে তুলনা করে প্রাপ্ত করা যেতে পারে।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কার্যকর ভ্যাটের হার বেড়েছে, যা ২০২৩ অর্থবছরে সাত দশমিক এক শতাংশে পৌঁছেছে। তবে এটি বাংলাদেশের বেশিভাগ পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ১৫ শতাংশ ভ্যাট হারের মানের চেয়ে অনেক কম।
বাংলাদেশের রাজস্ব আদায় এখনো তুলনামূলক অর্থনীতির তুলনায় পিছিয়ে আছে।
২০২২ সালে সাধারণ সরকারের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত ছিল নেপালে ২৩ দশমিক এক শতাংশ, ভারতে ১৯ দশমিক আট শতাংশ এবং লাও পিডিআরে ১৪ দশমিক আট শতাংশ।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্তর এবং রাজস্ব সংগ্রহের মধ্যে একটি ইতিবাচক পারস্পরিক সম্পর্ক বিদ্যমান বলে বিস্তৃত ঐকমত্য রয়েছে।
দেশের উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে কর প্রশাসন ব্যবস্থার কার্যকারিতা, দক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং ন্যায্যতা বাড়াতে বড় ধরনের সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এই সুবিধাগুলো বৃহত্তর অর্থনীতিকে সমর্থন করে এবং স্বল্প আয়ের গোষ্ঠীর ব্যয়ে ধনী ব্যক্তিদের পক্ষে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে অনুকূল যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে নথিটি কর ছাড়ের পুনর্বিবেচনার ওপরও জোর দেয়। এভাবে রাজস্ব নীতির পুনর্বণ্টনমূলক লক্ষ্যকে ক্ষুন্ন করে।
ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেয়ার ক্ষেত্রেও উন্নতির উল্লেখযোগ্য সুযোগ রয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মাত্র ৩৩ দশমিক তিন শতাংশ টিআইএনধারী ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করেছেন, যা একই ধরনের দেশে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
অর্থ মন্ত্রণালয় রাজস্ব আহরণ জোরদার করার জন্য বেশ কয়েকটি আধুনিক সংস্কার কৌশলের রূপরেখা তৈরি করেছে।
এর মধ্যে রয়েছে করের ভিত্তি সম্প্রসারণ, একটি আধুনিক সম্পত্তি কর ব্যবস্থা গ্রহণ, সবুজ এবং কার্বন কর প্রবর্তন, কর সংগ্রহ সহজতর করা, ট্যাক্স ফাইলিং এবং পেমেন্ট প্রক্রিয়াগুলো সম্পূর্ণরূপে স্বয়ংক্রিয় করা এবং কর সংগ্রহকারী এবং করদাতাদের মধ্যে সরাসরি মিথস্ক্রিয়া হ্রাস করা।
অন্যান্য কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে নিরীক্ষাগুলোকে আরো নির্বাচনমূলক, উৎপাদনশীল এবং মানদণ্ডভিত্তিক করার পাশাপাশি কর নীতিনির্ধারণকে কর সংগ্রহ থেকে পৃথক করা।
মোট রাজস্বে আয়কর ও ভ্যাটের অংশ বৃদ্ধি করে সরকার এ লক্ষ্যে অগ্রগতি সাধন করেছে।
তবে এখনো পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে প্রত্যক্ষ করের ওপর বেশি নজর দিতে হবে।
মোট রাজস্বে প্রত্যক্ষ করের প্রকৃত অংশ ছিল ২০২১ অর্থবছরে ৩২ দশমিক তিন শতাংশ, যা অর্থবছর ২০২৩ এ সামান্য বেড়ে ৩২ দশমিক সাত শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
রাজস্ব প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য সরকার করের ভিত্তি প্রসারিত করার প্রচেষ্টা চালাবে, বাণিজ্য কর থেকে প্রত্যক্ষ করের দিকে নির্ভরতা স্থানান্তর করবে এবং আগামী বছরগুলোতে প্রত্যক্ষ করের প্রবৃদ্ধিকে আরো ত্বরান্বিত করবে।
সূত্র : ইউএনবি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা