২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১, ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

ব্যাংকিং খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা

- ছবি : নয়া দিগন্ত

এক সময় তারল্য সঙ্কটে ভুগতে থাকা বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে এখন উদ্বৃত্ত দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা।

দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরে আমানতকারীদের আস্থা বৃদ্ধির কারণেই এই পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

নতুন করে আস্থা ফিরে আসা সত্ত্বেও ২০২৪ সালের আগস্টে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি বছরে ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশে নেমে এসেছে। আর এটিই ব্যাংকগুলোর মধ্যে তারল্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, বর্তমানে ৪৬টি ব্যাংকে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। যার মধ্যে চারটি শরিয়াহভিত্তিক এবং ৪২টি প্রচলিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

এর মধ্যে উদ্বৃত্ত তহবিলের শীর্ষে রয়েছে সোনালী ব্যাংক। এরপর রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল)।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, আমানতকারীরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। কারণ তারা মনে করেন তাদের কষ্টার্জিত অর্থের জন্য বেশি নিরাপত্তা দেয়া হয় এসব প্রতিষ্ঠানে।

এই পরিবর্তনের ফলে সরকারি ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে।

বিপরীতে শরিয়াভিত্তিক বেশ কয়েকটি ব্যাংকের অবস্থা কম অনুকূলে রয়েছে।

এস আলম গ্রুপের মতো বড় শিল্পগোষ্ঠী একাধিক ব্যাংক অধিগ্রহণের পর বেশ কয়েকটি আমানতকারী এই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তাদের তহবিল তুলে নিয়েছলেন।

এস আলম, বেক্সিমকো ও সিকদার গ্রুপের মতো গ্রুপের বিরুদ্ধে বড় আকারের ঋণ খেলাপির কারণে শরিয়াহভিত্তিক ও প্রচলিত কিছু ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, বৃহত্তর ব্যাংকিং খাত স্থিতিশীল রয়েছে। বেশিরভাগ ব্যাংক বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত তারল্য ধরে রেখেছে।

বেসরকারি ঋণে নীতিগত প্রভাব
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাহাদ আবদুল মান্নান বলেন, বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি কমার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিকে দায়ী করা যেতে পারে, যার লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ।

উচ্চ সুদের হার এবং স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় হারের ওঠানামাও উদ্যোক্তাদের নতুন বিনিয়োগের সুযোগ সন্ধানে নিরুৎসাহিত করেছে। এর ফলে অনেক ব্যাংক তাদের অতিরিক্ত তার‌ল্য সরকারি বন্ড ও বিলে পুনর্নির্দেশিত করেছে।

২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক অধিগ্রহণের আগে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা মান্নান বলেন, বেসরকারি খাতের ঋণ বিতরণে স্থবিরতার কারণে ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল ও বন্ডে নিরাপদ বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছে।

ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের অধিকাংশ ব্যাংকে পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে। বেসরকারি খাতের ঋণের চাহিদা কমে যাওয়ায় অনেকেই মানসম্মত ব্যাংকিং পদ্ধতি অনুসরণ করে ট্রেজারি ইনস্ট্রুমেন্টে বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছেন।

মাহবুবুর রহমান আরো বলেন, ব্যাংকের বাইরে প্রচলিত নগদ অর্থ যেমন কমছে, তেমনি প্রতিযোগিতামূলক সুদের হার বেশি হওয়ায় আমানত বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনেয়ারা শিখা বলেন, শক্তিশালী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল ব্যাংকগুলোকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। ফলে ধুঁকতে থাকা ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা ছাপানো বন্ধ করে দিয়েছে। এ কারণেই এ খাতের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে।

সূত্র : ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement