০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

কেমন আছেন আল মাহমুদ

কেমন আছেন আল মাহমুদ - ছবি : সংগৃহীত

আল মাহমুদের মতো কবি যুগে যুগে জন্মায় না। বহু প্রতীক্ষার পর একজন বড় কবির আবির্ভাব ঘটে। একটি জাতির জন্য এটি গৌরবের। একটি দেশের জন্য সম্পদ। যদি সে জাতি এবং সে দেশ বোঝে। অনুভব করে। ব্যক্তি আল মাহমুদ নিয়ে কথা আছে। থাকতেই পারে। কিন্তু কবি আল মাহমুদ সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে। তার কবিতার মধুর শরাব পান করেননি বাংলাভাষী এমন শিক্ষিত মানুষ কমই আছেন

তিনি কবিতার জগতে এতটা উচ্চতায় নিয়েছেন নিজেকে যে, তাকে নিয়ে লিখতেই হয়। বলতেই হয়। আড্ডায় আসরে আলোচনায় তাকে উচ্চারণ করতে হয়। উপমা দিতে হয় তার কথা। তার কবিতা থেকে দিতে হয় উদাহরণ। তিনি নিজেকে নির্মাণ করেছেন তিলে তিলে। তার নির্মিত কাব্যিক প্রাসাদ বেশ উঁচু। তাকে অবহেলা করার কিছু নেই। অবজ্ঞারও নেই কিছু। তার যত নাম অনাম সুনাম বদনামÑ সবই কবিতা ঘিরে। প্রশংসা-নিন্দাও কবিতার জন্যই। তিনি কবি এবং একজন অসাধারণ কবি। তিনি আল মাহমুদ।

ক’দিন ধরে বেশ কিছু পত্রিকা, অনলাইন, নিউজ পোর্টাল এবং ফেসবুকে বেশ লেখালেখি দেখেছি আল মাহমুদকে ঘিরে। তিনি লেখার বিষয়। তাকে নিয়ে লিখতেই হয়। লিখতে হবে। কথায় আছে, মৃত্যুর পরও পৃথিবীতে বেঁচে থাকার উপায় দু’টি অথবা দু’টির যেকোনো একটি। হয় এমন কিছু লিখে যাও, যা মানুষ পড়বে। অথবা এমন কিছু করে যাও মানুষ লিখবে। তার মানে অক্ষরে জেগে থাকা ছাড়া বেঁচে থাকার আর কোনো পথ নেই। আল মাহমুদ শব্দের আনন্দে যা নির্মাণ করেছেন, তা মানুষকে পড়তে হয়। হয়তো পড়তে হবে আগামী প্রজন্মকেও। পাশাপাশি তার লেখালেখি কর্মের গৌরব নিয়ে লিখতেও হবে। সুতরাং তাকে নিয়ে লেখালেখি হবে এটা খুবই স্বাভাবিক।
কিন্তু বিভিন্নভাবে এ ক’দিন যেভাবে লেখালেখি হয়েছে তা স্বাভাবিক নয়। কোথাও মিথ্যের ছড়াছড়ি। কোথাও বিবেকহীনতা রয়েছে। একটি অনলাইন নিউজ করেছে- আল মাহমুদ গ্রামের বাড়িতে পড়ে আছেন নিঃসঙ্গ। তিনি অবহেলার শিকার। তাকে দেখাশোনার কেউ নেই। তার ছেলেরাও দেখছে না। কেউ নিউজ করেছেন- আল মাহমুদের অবস্থা করুণ। তার যথার্থ যত্ন নিচ্ছে না কেউ। অতি আবেগ থেকে কেউ কেউ বিছানায় শায়িত অথবা ঘুমন্ত আল মাহমুদের ছবি পোস্ট করেছেন ফেসবুকে। লিখেছেন- দেখুন, কী করুণ আল মাহমুদ! এসব মিথ্যা বানোয়াট ও উদ্দেশ্যমূলক খবর এবং অবিবেচক ও মাত্রাজ্ঞানহীন নিউজ একজন কবির পক্ষে অবশ্যই সম্মানজনক নয়।

আল মাহমুদের জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কাছাকাছি- যাকে বলি শহরতলিতে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের ঢেউ যখন বাংলাদেশের সর্বত্র জাগিয়েছিল প্রতিবাদের প্লাবন। সেই ঢেউ উদ্বেলিত করেছিল আল মাহমুদকেও। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে বের হলো একটি লিফলেট। ছবিসহ আল মাহমুদের একটি কবিতা ছাপা হলো লিফলেটে। যে কবিতার শরীরে জড়ানো ছিল ভাষা আন্দোলনের উত্তাপ। পরিণামে পুলিশ তাড়া করেছিল তাকে। খুঁজছিল নানান গলি-সন্ধিতে। তার সঙ্গে ছিলেন তারই সমবয়সী সম্পর্কে চাচা সাংবাদিক মুসা। দু’জনই পুলিশের অগ্নিচোখের শিকার।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন আল মাহমুদ। সেই যে বেরিয়ে গেলেন, বসবাসের জন্য আর কখনো ফেরেননি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ১৯৭১ সালে যখন আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলছিল, সরাসরি যুদ্ধে যোগ দিলেন আল মাহমুদ। চলে গেলেন কলকাতা। তখন কেবল তার পরিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফিরে গেল কিছু দিনের জন্য। স্বাধীনতার পর আবার ঢাকায় ফিরলেন সবাই। এরপর তার পরিবারও আর কখনো থাকতে যায়নি গ্রামের বাড়ি। এখন এই বৃদ্ধ-অসহায় বয়সে আল মাহমুদ নিঃসঙ্গ গ্রামের বাড়ি পড়ে আছেন, এমন সংবাদ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অথবা মূর্খের অন্ধ খবর।

আল মাহমুদ ১৯৫৪ সালে ঢাকায় আসেন। প্রথম পুরান ঢাকায় ছিলেন, তারপর বিভিন্ন সময় ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বসত করেন। ঢাকায় তার পরিবারসহ বাসা ছিল- নারিন্দা, শাহজাহানপুর, কমলাপুর, মুগদাপাড়া, মধুবাগ, মীরবাগ, মগবাজার পীর পাগলা গলি ও গুলশান। গুলশানে ছিলেন নিজের ফ্ল্যাটে। বেশ ক’বছর ছিলেন এখানে। ছিলেন বেশ আনন্দের সাথে। এর মধ্যে শাহজাহানপুর ও কমলাপুর দীর্ঘ সময় ছিলেন। আল মাহমুদের স্ত্রী সৈয়দা নাদিরা মাহমুদ মারা যাওয়ার পর নানা কারণে গুলশানের ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে দেন তিনি। ফ্ল্যাট বিক্রির পর কিছু দিন (প্রায় পাঁচ মাস) মেঝো ছেলের বাসায় ছিলেন। মেঝো ছেলের বাসাটি মগবাজার ওয়্যারলেস রেল গেট বেপারি গলি।

সেখান থেকে বড় ছেলে শরীফ আল মাহমুদের বাসায় স্থায়ীভাবে বসত করছেন। বড় ছেলের বাসা মগবাজার ওয়্যারলেসে। এটি বড় ছেলের নিজের ফ্ল্যাট। ২০১০ সাল থেকে এ ফ্ল্যাটেই আছেন তিনি। মাঝে মধ্যে দু-চার দিনের জন্য অন্য ছেলেদের বাসায় যেতেন। যেতেন বেড়াতে। বেড়িয়ে ফিরতেন এখানেই- বড় ছেলের বাসায়। এখানে তার স্থায়ী বসবাস। বড় ছেলের স্ত্রী শামীমা আক্তার বকুল আল মাহমুদের বেশ যতœ নেন। মেয়ের মতো আগলে রাখেন তাকে। খাওয়া-দাওয়া, গোসল, পোশাক-আশাক সবই দেখভাল করেন এই পুত্রবধূ। আল মাহমুদের সেবা করে কাজের মেয়ে খাদিজাও। ১২ বছরের বেশি এ মেয়েটি আল মাহমুদকে ছেড়ে কোথাও যায়নি। সুতরাং আল মাহমুদ অযত্ন-অবহেলায় আছেন, এ কথা বলার কোনো সুযোগ বা অবকাশ নেই। তবে অর্থনৈতিক টানাপড়েন আছে। থাকেই। এটি হয়তো সবার ভাগ্যে স্বাচ্ছন্দ্য হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সম্মান ও সম্পদ এক হয় না।

আল মাহমুদ গোটা জীবন কবিতার জন্য খরচ করে দিয়েছেন। তার যা অর্জন কবিতা ঘিরেই। তার সম্মান-সম্পদ যেটুকু কবিতাই দিয়েছে তাকে। বড় ছেলেটি সংবাদপত্রের সাথে ছিলেন। এখন নেই। আল মাহমুদের পাঁচ ছেলে। তিন মেয়ে তিনজনই সংসারী। ছেলেরা সবাই কম-বেশি প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু আহামরি বিত্তের মালিক কেউ নন। যার কারণে আর্থিক টানাটানি ছিল বরাবরই। এখনো আছে। আছে, কারণ আমাদের দেশের বিত্তবানদের চিত্ত নেই। একজন কবিকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার মতো মন তাদের বুকে থাকে না। দু-একজন উদার প্রকৃতির যদিও থাকেন, তারাও সব সময় পাশে থাকতে পারেন না বা থাকেন না। অথবা কিছুটা করে ভাবেন- অনেক করেছি, আর না। অকাতর একজন কবিকে ছায়া দেয়ার মানুষ কই!

অতি আবেগ কিংবা অতি ভালোবাসার কোনোটিই ভালো নয়। কাজের জন্য আবেগ জরুরি। তবে অবশ্যই তা নিয়ন্ত্রিত আবেগ চাই। অনিয়ন্ত্রিত আবেগ ব্রেকহীন গাড়ির মতো। যেকোনো সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। আবার অতি ভালোবাসাও মানুষকে বিপথে চালিত করতে পারে। লাগামহীন ভালোবাসাও বিবেকহীন হয়ে যেতে পারে। আল মাহমুদের ভক্তদের মধ্যে এমন কিছু দেখা যায়, আল মাহমুদের ঘুমন্ত ছবি অথবা বিছানায় শায়িত ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দিলেন, যারা অতি আবেগ এবং অতি ভালোবাসা থেকেই করেছেন এসব। কিন্তু তাদের মাত্রাজ্ঞান বা বোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়। একজন যুবকও যখন ঘুমের পোশাকে থাকেন, তখন কেমন পোশাকে থাকেন। তিনি কি খুব সেজেগুজে থাকেন? থাকেন কি বেশ দামি পোশাকে? আর আল মাহমুদ? কাগজে-কলমে তার বয়স ৮৩ বছর। কিন্তু বাস্তবে ৮৫। ৮৫ বছরের একজন অশীতিপর বৃদ্ধের জীবন কেমন স্বাভাবিক থাকে! বাংলাদেশে সামাজিক পারিবারিক জীবনযাত্রা এবং প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যে ৮০ বছর একজন মানুষের জন্য বিরাট বিষয়। সেখানে ৮৫ বছরের একজন মানুষ যখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ তখন তার দৃশ্যমান জীবন কেমন হতে পারে? কেমন হবে তার চাহনি? তার কথন? তার অনুভবের শক্তি? এটি বোঝার মতো বোধ কি থাকে না একজন যুবক কিংবা যুবতীর!

খুব কমসংখ্যক মানুষ আমাদের সমাজে ৮০ পেরিয়েও সচল থাকেন। লেখকদের মধ্যে সাম্প্রতিক বিদায় নেয়া মুখ ছিলেন সৈয়দ আলী আহসান, ড. কাজী দ্বীন মুহম্মদ, মোস্তফা-নূর-উল ইসলাম, কবীর চৌধুরী, সরদার ফজলুল করিম, রেহমান সোবহান, সৈয়দ শামসুল হকসহ হতেগোনা ক’জন লেখক কবি। এবনে গোলাম সামাদ এখনো লিখছেন। কবি শামসুর রাহমান ৮০ বছর বয়সেই চলে গেলেন। কবি ফজল শাহাবুদ্দীন বিদায় নিলেন আশির লাগোয়া। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বেঁচে ছিলেন ৮০ বছর। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ৮০ পেরিয়েছেন এবং এখনো সক্রিয় আছেন তার কর্মে, লেখালেখিতে।

আল মাহমুদের জীবন কোনোভাবেই আর্থিক সচ্ছলতায় দ্রষ্টব্য ছিল না। আজীবন একটি অনিশ্চয়তার ভেতর কেটেছে তার সময়। কবিতার জন্য তার ত্যাগ অপরিসীম। সেই ত্যাগের সেতু বেয়ে রচিত হয়েছে তার কবিতার সৌধ, কাব্যজীবন। এ জীবন তিনি রয়েছেন আশ্চর্য পরিশ্রমের যোগে। জীবনে কত রাত অঘুমো কেটেছে তার। বুঁদ হয়েছিলেন কবিতার ঘোরে। কত সকাল-দুপুর কিংবা বিকেল কেটেছে না খেয়ে, না দেয়ে। এত কিছুর পর একজন আল মাহমুদ। বিত্তবানদের অবহেলা, প্রতিষ্ঠিতদের তির্যক বাক্যবাণ এবং সাহিত্যের কিছু প্রফেসরদের অপব্যাখ্যার জটাজাল পেরিয়ে পরিণতি পেল আল মাহমুদের কাব্য জগৎ। কবিতার পক্ষে আজীবন এক লড়াকু তিনি। তার শ্রম ও ঘামের মিশেলে পুষ্ট তার কাব্যিক জীবন। সুতরাং তাকে বিবেচনা করার সাধ্য সবার না-ও থাকতে পারে। না থাকা দোষের কিছু নয়। কিন্তু তার বার্ধক্যের অসহায়তা দেখিয়ে দেয়ার আকাক্সক্ষা বড় বেমানান এবং অসম্মানজনকও বটে। এটা কেমন ভালোবাসা জানি না। কেমন দায়িত্বজ্ঞান জানি না এবং বুঝি না এর ভেতর কী মজা লুকিয়ে আছে এদের।

ডাক্তার বলেছেন, তার খুব বড় কোনো রোগ নেই। শারীরিক সমস্যাও নেই তেমন উল্লেখ করার মতো। বার্ধক্যের ভারই তার বর্তমান বড় সমস্যা। বয়সের দাঁত তাকে চিবিয়েছে সাঙ্ঘাতিকভাবে। সময়ের ছোবলে কাবু হয়ে গেছেন তিনি। ফলে তার অবস্থা একজন অসহায় শিশুর চেয়ে বেশি কিছু নয়। মুখে ভাষা নেই তেমন। কেউ ডাকলে বা কিছু জিজ্ঞেস করলে জবাব দেন না। আবার কখনো কখনো নিজে নিজে কথা বলেন। কিন্তু এসব কথার কোনো অর্থ বোঝা যায় না। খাওয়া-দাওয়ার মধ্যে জুস খান। সুপ খাওয়ানো হয়। ভাত দু-তিন লোকমা খেয়ে মুখে নেন না আর। কিছু ওষুধ আছে খাওয়ানো হয় ঠিক সময়। দিন-রাত, সকাল-দুপুর কিংবা তারিখের কোনো চেতনা নেই তার। মাঝে মধ্যে হাতের ইশারায় কিছু বোঝানোর চেষ্টা করেন। কখনো বোঝা যায়। বেশির ভাগই বোঝা যায় না। এই তো আজকের আল মাহমুদ। এই সময়ের আল মাহমুদ এবং একজন বার্ধক্যের ছোবলে কাবু আল মাহমুদ।

যৌবনের সৌন্দর্যগুলো খুবলে খায় বার্ধক্যের হাঙ্গর। মানুষের চিন্তা-চেতনা স্মৃতি-স্বপ্ন এবং সৃজনশক্তি কিছুই অবশিষ্ট রাখে না বার্ধক্য। সব খায়। সব। যৌবনের বাঁধনহারা গতি বার্ধক্যের ডোবায় এসে ডুবে যায়। তখন কী আর করার থাকে মানুষের। কিছুই থাকে না। কিছুই না। পৃথিবীর বাতাসে যে ক’টি নিশ্বাস নেয়ার অধিকার থাকে, তার বেশি একটিও গ্রহণ করার ক্ষমতা থাকে না কারো। এমনি নির্মম পৃথিবী! জীবনের যাবতীয় ঘনঘটার কোলাহল থেমে যায়। নিভে যায় মানুষের দৃষ্টির জ্যোতি। পৃথিবী বলতে থাকেÑ বিদায় হে মানুষ! বিদায় চিরদিনের তরে!

তবুও বোঝে না মানুষ। তবুও ভাবে না মানুষ। যৌবনের অহঙ্কারে বুঁদ হয়ে থাকার ঘোর মানুষকে অবিবেচক করে। মানুষ ভুলে যায় মানুষের পথ। ভুলে যায় পথের ঠিকানা। যার ফলে মানুষ কুৎসা রটায় মানুষের বিরুদ্ধে। অধিকার হরণ করে অন্যের। আল মাহমুদ এমন কুৎসার শিকার হয়েছেন আজীবন। জীবনের শেষ সময়েও অপতথ্যের শিকার তিনি।

আল মাহমুদের মতো কবি যুগে যুগে জন্মায় না। বহু প্রতীক্ষার পর একজন বড় কবির আবির্ভাব ঘটে। একটি জাতির জন্য এটি গৌরবের। একটি দেশের জন্য সম্পদ। যদি সে জাতি এবং সে দেশ বোঝে। অনুভব করে। ব্যক্তি আল মাহমুদ নিয়ে কথা আছে। থাকতেই পারে। কিন্তু কবি আল মাহমুদ সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে। তার কবিতার মধুর শরাব পান করেননি বাংলাভাষী এমন শিক্ষিত মানুষ কমই আছেন। তার কবিতার প্রশংসা করেননি এমন পাঠকের সংখ্যাও নেই বললেই চলে।
রাজনৈতিক দলাদলি আমাদের সাহিত্যে বিভাজনের দেয়াল তুলে দিয়েছে। শিল্প-সাহিত্যে রাজনৈতিক বিবেচনা বড় নির্মমতা। বড় নিষ্ঠুরতা। জাতি হিসেবে এটি আমাদের নীচতার পরিচয়। শিল্পের ভার রাজনীতি বহন করার ক্ষমতা রাখে না। শিল্পকে শিল্পের নিরিখেই বিচার করা জরুরি।

কিন্তু আমরা এক দুর্ভাগা জাতি। আমাদের শিল্পের বিচার হয় রাজনৈতিক বাটখারায়। আল মাহমুদ এর তীব্র শিকার হয়েছেন বারবার। তার এ বেদনা ছিল আজীবন। এখন হয়তো অচেতন বা অবচেতনভাবে এসব বেদনা জেগে উঠছে তার মনের গভীরে। নিজে নিজে কথা বলে ওঠার এটাও হতে পারে কারণ। কেননা মনের আঘাত অবচেতনে ফিরে আসে মনেই। এসব মাহাত্ম্য বুঝবে কে? একজন কবিকে বোঝার মতো মানুষ সত্যিই কম থাকে জগতে। তাই নিঃসঙ্গতাই সঙ্গী হয়ে ওঠে কবির। আল মাহমুদ তার নিজের ভেতর ডুবে থাকেন নিজে। হয়তো আপনার ভেতর খোঁজেন আপনাকেই। এভাবে খুঁজতে খুঁজতেই একদিন তার শেষ নিঃশ্বাস মিলিয়ে যাবে পৃথিবীর বাতাসে। তখন ব্যক্তি আল মাহমুদ উঠে যাবেন সব কিছুর ঊর্ধ্বে। আর কবি আল মাহমুদ থেকে যাবেন কালের অক্ষরে।
লেখক : কবি, সাহিত্যিক


আরো সংবাদ



premium cement

সকল