‘আমি কী, আমার বাবাও এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেনি’
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৩ আগস্ট ২০২৪, ২০:৩২, আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০২৪, ২০:৩৪
বাংলাদেশে বন্যা উপদ্রুত বিভিন্ন জেলা থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের যেসব বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে তাতে বোঝা যাচ্ছে মানুষজন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বন্যার পানির তোড়ে বহু মানুষের সহায় সম্বল ভেসে গেছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা ফেনীর পরিস্থিতি নিয়ে এখনো ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না, কারণ ফেনীর সাথে গত তিন দিন ধরে যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
সরকারি হিসেবে বাংলাদেশে এখন মোট ১১টি জেলা বন্যায় আক্রান্ত। ভারতের সীমান্ত ঘেষা ফেনী জেলার বহু মানুষ উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন।
এই জেলার যেসব মানুষ দেশের অন্যান্য জায়গায় এবং বিদেশে অবস্থান করছেন, তারা জানেন না যে গ্রামে বসবাসরত তাদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়দের কী অবস্থা। যোগাযোগ না থাকায় উৎকণ্ঠা আরো বাড়ছে।
ফেনীর সাথে যোগাযোগ নেই
ফেনীর বাসিন্দা ও স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে বিবিসি বাংলার তরফ থেকে বহুবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক না থাকায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাদের সবার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
পড়াশোনার জন্য বছর দু’য়েক হলো- ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামে থাকছেন ফেনী জেলার আইনুল ইসলাম। পরিবার-পরিজনের তার যোগাযোগ হয় মোবাইল টেলিফোন কিংবা ইন্টারনেট-ভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে।
কিন্তু দু’দিন ধরে বন্যাকবলিত ফেনীতে আত্মীয়দের সাথে কথা বলতে না পেরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মাঝে দিন কাটছে তার।
শুক্রবার দুপুরে ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগ তো বন্ধ হয়েছেই, মামা বাড়ির সাথেও তারা যোগাযোগ করতে পারছেন না।
একই ধরনের উদ্বেগের সাথে দিন কাটাচ্ছেন ফেনীর সিলোনিয়া এলাকার দুবাই প্রবাসী সাইফুল হাসানও। তিনি শুক্রবার সকালের দিকে ফেসবুকে একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তার পরিবারকে উদ্ধার করার আকুতি জানান।
কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘আমার বউ, বাচ্চা, বাবা, মা…সবাই খাবার অভাবে মারা যাইতেছে।’
শেষে কথা হয়েছে হাননান মুহাম্মদ চৌধুরীর সাথে, তিনি একজন স্বেচ্ছাসেবক। ফেনীর বন্যাদুর্গতদের সাহায্য করার জন্য গতকাল রাতে তিনি চট্টগ্রাম থেকে ছুটে গেছেন।
কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও তিনি ফেনীতে পৌঁছাতে পারেননি। কোনোমতে ফেনীর লালপুর পর্যন্ত গেছিলেন।
পরে বাধ্য হয়ে রাত ১১টার দিকে তিনি ফিরে এসেছেন। রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নিকটবর্তী একটি আশ্রয়কেন্দ্রে তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন।
ফেনীর লালপুরে তিনি কী অবস্থা দেখেছেন? জানতে চাইলে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘ম্যাসাকার অবস্থা ওখানে। কাল যখন গেছি, অনেক পানির স্রোত ছিল। পরে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছি।’
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ওই জেলায় তিন লাখ মানুষ বন্যা আক্রান্ত এবং এ পর্যন্ত ২০ হাজার মানুষকে উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
নোয়াখালীতে দুর্দশা
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, নোয়াখালীতে আজ আট দিন পর সূর্য উঠেছে। সেখানকার স্থানীয় সাংবাদিক হাসিব আল-আমিন বলেন, ‘সূর্য ওঠাতে পরিবেশ আগের চেয়ে স্বাভাবিক। তবে পানি নাম্বার ফ্লোটা ধীরে।’
তিনি জানান, ‘ফেনী থেকে যে পানি নোয়াখালী হয়ে মেঘনা নদী ও সাগরে নামবে, এতে সময় লাগবে।’
‘পানিটা স্লুইস গেট দিয়ে নামতে হয়। কিন্তু জোয়ারের সময় উল্টো দিক থেকে পানি ঢোকার চেষ্টা করে বিধায় তখন স্লুইস গেট বন্ধ থাকে। সকাল থেকে পানি নামা শুরু হয়েছে। দুপুর ১২টায় গেট বন্ধ হয়েছে। জোয়ার নেমে গেলে আবার গেট খোলা হবে, তখন আবার পানি নামবে,’ তিনি ব্যাখ্যা করেন।
তার মতে, বিগত ২০-২৪ বছরে নোয়াখালীতে এমন বন্যা হয়নি। ২০০৪/১৯৯৮ -এর বন্যাকেও হার মানিয়েছে এটি। এর আগে ফেনীর পানি সরাসরি মাইজদীতে আসেনি।’
তিনি বলেন, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, বেগমগঞ্জ, সেনবাগে মুহুরি নদীর পানিতে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু অনেক উপজেলায় যা হয়েছে, তা কেবল জলাবদ্ধতা।
‘নোয়াখালী নদীবেষ্টিত এলাকা, উপকূল দিয়ে পানি নামা সহজ। কিন্তু পানি নামবে কিভাবে? দখলের কারণে পানি নামার পথ বন্ধ। তাই বন্যার রূপ ধারণ করেছে জলাবদ্ধতা।’
তিনি জানান, নোয়াখালীর হাতিয়া বাদে বাকী সব উপজেলা এখন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
পুরো নোয়াখালীতে এখন ২০ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দী এবং ৮৭টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত।
চলমান পরিস্থিতিতে সেখানে ৫০২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো লক্ষাধিক মানুষ এবং ১৫-২০ হাজার গবাদি পশু আশ্রয় নিয়েছে বলেও তিনি জানান।
এছাড়া, মানুষের সেবা করার জন্য সেখানে ৮৮টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে।
ফটিকছড়ির অবস্থা কেমন?
ফেনী জেলার লাগোয়া চট্টগ্রাম জেলার একটি উপজেলা হলো ফটিকছড়ি। চট্টগ্রামের স্থানীয় সাংবাদিক শ্যামল নন্দীর সাথে কথা হলে তিনি সেখানকার অবস্থাকে ‘ভয়াবহ’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেন।
তার নিজের ঘরেও বর্তমানে হাঁটু সমান পানি আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হালদার বাঁধ, বারোমাসিয়া খাল- দু’টোই ভেঙেছে। ফটিকছড়ির ২১টি ইউনিয়নের ১৮টিতেই এখন পর্যন্ত পানি আছে।’
তিনি জানান, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পানি কমছে, কিন্তু ‘তাও একটু একটু করে’।
ফটিকছড়ির গ্রামগুলোর রাস্তায় এখনো কোমর সমান পানি। তবে আশার কথা যে গতকাল রাত থেকেই এখানে বৃষ্টি নাই, বৃষ্টি থাকলে অবস্থা আরো ভয়াবহ হতো বলে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন।
এই উপজেলায় কোনো মানুষের মৃত্যুর খবর এখনো কানে আসেনি নন্দীর। বন্যার জন্য যেসব আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে, সেগুলোতে খুব বেশি মানুষ আশ্রয় নিতে পারেননি।
কারণ হিসেবে নন্দী বলেন, ‘যেমন, আমাদের এখান থেকে গেলে…মাঝখান থেকে খাল আছে। কিন্তু যেহেতু আমাদের কাছে নৌকা ছিল না, তাই আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সুযোগ হয়নি।’
তিনিও বলেন যে- তিনি তার জীবদ্দশায় এত ভয়াবহ বন্যা দেখেনি। এমনকি তার বাবাও না।
ফটিকছড়ির মানুষেরা প্রায় অনাহারে আছেন এখন এবং সেখানকার গ্রামগুলোতে এখনো ত্রাণ যায়নি।
‘যাদের বাড়িতে গ্যাস আছে, তারা খাটের ওপর রেখে খেতে পারছে কিছু করে। যাদের কাছে শুকনা খাবার আছে, তারাও সেগুলা খেতে পারছেন। এখনো সেভাবে কোনো সহায়তা আসেনি এখানে,’ বলেন তিনি।
কুমিল্লায় বানভাসীদের অবস্থা
ফেনীর পাশের জেলা কুমিল্লা। বলা হয়ে থাকে, কুমিল্লার দুঃখ গোমতী। কারণ এই গোমতীর কারণেই বন্যার মুখোমুখি হয় কুমিল্লাবাসী।
কিন্তু ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে গতকাল রাত পৌনে ১২টার দিকে কুমিল্লার বুড়িচংয়ে ভেঙে গেছে গোমতী নদীর উত্তরাংশের প্রতিরক্ষা বাঁধ।
‘পৌনে ১২টার দিকে ঘূর্ণির মতো হয়ে বাঁধটা ভেঙ্গে গেল। প্রথমে ১০ ফিট, এখন ৫০ ফিটের কাছাকাছি ভাঙ্গা। এটি গোমতী নদীর উত্তরাংশের বাঁধ। দক্ষিণাঞ্চলের বাঁধ ভাঙ্গলে শহর, সদর, ক্যান্টনমেন্ট সব পড়ে যায়’, জানান স্থানীয় সাংবাদিক মাসুক কামাল।
বুড়িচং উপজেলার ১৫টি গ্রাম এখনো ডুবে আছে। তবে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় এবং কুমিল্লা ও ত্রিপুরাতে বৃষ্টি না হওয়া পানি ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে। মেঘনা পর্যন্ত গেলেই পানি কমে আসবে।’
এই এলাকার সব মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারেনি। কারণ ‘আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পরিবেশ নাই।’
‘অধিকাংশ মানুষ এখনো বেড়িবাঁধে, সেখানের দোতলা বাড়িগুলোতে অবস্থান নিয়েছে। কাল সারারাত এখানেই ছিল,’ বলেন তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, এ বছর বুড়িচং এলাকায় পানি বিপৎসীমার ১৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। এর আগে ১৯৯৭ সালে ৯৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উঠেছিল।
বুড়িচং-এর বাইরে কুমিল্লার দক্ষিণ অংশের মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট, চৌদ্ধগ্রাম উপজেলায়ও দুই দিন ধরে বন্যা হচ্ছে। ‘মুহুরি নদি, ফেনি নদী ওই অঞ্চলের সাথে জড়িত। দুই লাখ লোক পানিবন্দী ওখানে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
কুমিল্লার পাশে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাও বন্যাকবলিত। এবারের বন্যার ভয়াবহতা বোঝা যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ার নয়াদিল গ্রামের বাসিন্দা সাজ্জাদ মাস্টারের কথায়।
তিনি বলেন, ‘পানি আসার পর কোনো ঘর থেকে কিছু লওয়ার মতন সময় পাইছে না। খালি মোবাইলডি লইছে হাতে, এতটুকুই।’
একই এলাকার বাসিন্দা ইয়ার হোসেন বিবিসিকে জানিয়েছেন, গত ২০ বছরে তিনি তার এলাকায় এত পানি আর দেখেন নাই। তার ভাষ্য, ‘২০০৪ সালের পর বন্যার পানি এদিক দিয়া আসেনাই।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংবাদিক মাসুক হৃদয় জানিয়েছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় আরো একটি সেতুর অংশ ধসে পড়ায় কসবা উপজেলার সাথে আখাউড়ার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
আখাউড়ায় এখনো ১০০টির মতো পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে আছে এবং ৫০০ পরিবার পানিবন্দী। আখাউড়ার পৌর শহরের দেবগ্রাম এলাকার একটি সেতুও ঝুঁকির মাঝে আছে।
এটি ধসে পড়লে দেবগ্রামের বাসিন্দাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারে অচল হয়ে পড়বে। এছাড়া, সেখানকার কয়েকটি এলাকা এখন সম্পূর্ণ বিদ্যুৎহীন অবস্থার মাঝ দিয়ে যাচ্ছে।
খাগড়াছড়িতে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে
খাগড়াছড়ি জেলায়ও বন্যা হলেও তা খুব বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি এবং বৃষ্টি না থাকায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিক আবু দাউদ।
শুক্রবার দুপুরে তিনি বলেন, ‘খাগড়াছড়িতে বন্যা হুট করে আসে এবং চলে যায়। কালকে রাতে পানি আসছিল। আজকে সকালে পানি নেমে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে যারা ছিল, ওরাও নেমে এসেছে।’
তবে খাগড়াছড়ির দিঘীনালা এলাকার ৮-১০ হাজার লোক এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে আছে বলে জানিয়েছেন তিনি। ‘দীঘিনালার পানি নামতে কিছুটা সময় লাগে…মেরুং ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা নিমজ্জিত।’
মেরুং ছাড়া কবাখালি ও বোয়ালখালি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি নিচু গ্রামও এখনো প্লাবিত। এছাড়া, সড়ক থেকে পানি না নামায় খাগড়াছড়ির সাথে বাঘাইছড়ি ও লংগদুর সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
আগস্ট মাসে এই নিয়ে খাগড়াছড়িতে তিনবার বন্যা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছরও এই বন্যা অল্প-বেশি হয়, এবার বেশি হয়েছে। এই আগস্টেই তিনবার হয়েছে।’
দুর্গত এলাকায় সেনাবাহিনী, প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠন ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে। বন্যার্তদের জন্য সেখানে মোট ৪০০ টন খাদ্য শষ্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
ধীরে কমছে খোয়াই নদীর পানি
সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার ‘খোয়াই নদীর পানি অল্প অল্প করে কমছে’ বলে জনিয়েছেন সেখানকার স্থানীয় সাংবাদিক প্রদীপ দাশ সাগর।
এই জেলার বন্যায় আক্রান্ত উপজেলাগুলো হলো- চুনারুঘাট, মাধবপুর, শায়েস্তাগঞ্জ, হবিগঞ্জ সদর ও নবীগঞ্জ। এসব জায়গার ‘প্রায় ৩৩ হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দী আছে।’
গতকাল রাত থেকে ওইসব উপজেলার পানি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু এক্ষেত্রেও ‘গতি খুবই কম।’
বৃষ্টি নাই বলে পানিটা ধীরে হলেও কমছে। বৃষ্টি হলে আবার আশঙ্কা তৈরি হবে।
‘হবিগঞ্জ শহরের মাছুলিয়া পয়েন্টে গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় পানি বিপৎসীমার ১৮১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আজ দুপুর ১২টায় সেটি ১৬৫ সেন্টিমিটার।’
সুতরাং, হবিগঞ্জের কোনো কোনো এলাকায় এখনো হাঁটু সমান পানি আছে।
মানুষের বাড়িঘর এখনো জলমগ্ন অবস্থায় থাকায় অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার একটি প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, হবিগঞ্জ জেলার ওই পাঁচ উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের ৮ হাজার ২৪০টি পরিবার বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়েছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য এখন পর্যন্ত মোট ১১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।
তবে বন্যার কারণে হবিগঞ্জে কোনো প্রাণহানি ঘটেছে বা কেউ নিখোঁজ হয়েছে, এমন তথ্য পাননি তিনি।
বানভাসী মানুষের সংখ্যা কত?
ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ- এই ১১ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৪৪ লাখ ৯৭ হাজার ৫৩৫ জন।
বর্তমানে ওইসব জেলায় মোট আট লাখ ৮৭ হাজার ৬২৯ পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় আছেন এবং এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন এক লাখ ৮৮ হাজার ৭৩৯ মানুষ।
শুক্রবার দুপুর ১২টার পর সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: কামরুল হাসান এসব তথ্য জানান।
এছাড়া, মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত, এই সময়ের মাঝে সাত জেলায় মোট ১৩ জন মারা গেছেন। এর মাঝে কুমিল্লায় ৪ জন, ফেনীতে ১ জন, চট্টগ্রামে ২ জন, নোয়াখালীতে ১ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ জন, লক্ষ্মীপুরে ১ জন ও কক্সবাজারে ৩ জন রয়েছেন।
বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয় এখন পর্যন্ত তিন কোটি ৫২ লাখ নগদ টাকা, ২০ হাজার ১৫০ টন চাল, ১৫ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
উল্লেখ্য, ওই ১১টি জেলার অনেক জায়গাতেই ইন্টারনেট সংযোগ নাই এখন। মোবাইল নেটওয়ার্কও প্রায় নাই নাই অবস্থা। এর মাঝেও ওই প্রতিটি জেলার খোঁজ-খবর জানার চেষ্টা করেছে বিবিসি বাংলা।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা