ঘূণিঝড় ‘মোখা’ : বাতাসের গতি ১৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৩ মে ২০২৩, ১৯:৩৭
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড় মোখা ক্রমশ উপকূলের দিকে এগিয়ে আসতে থাকায় এবং এর তীব্রতা বাড়তে থাকায় কক্সবাজারে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শনিবার দুপুর ২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র রোববার বিকেলে টেকনাফ এবং সেন্ট মার্টিনের আশপাশ দিয়ে অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। সেজন্য কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে।
এর আগে সকালে সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারির কথা জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো: এনামুর রহমান।
৮ থেকে ১০ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের সংকেতকে মহাবিপদ সংকেত বলা হয়ে থাকে।
এই সতর্ক সংকেতের মানে হলো বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতর এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়বে। বাতাসের গতিবেগ ১৭০ থেকে ১৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান।
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ এখন ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। সেই হিসাবে রোববার বিকেল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এর আগে আবহাওয়া অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ঝড়টি আঘাত করতে পারে।
সেই সময় উপকূলীয় এলাকায় ৮ থেকে ১২ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান। সেইসাথে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোয় ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
আজিজুর রহমান আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলের যত কাছাকাছি আসতে থাকবে, সেটির অগ্রসর হওয়ার গতি আরো বাড়তে থাকবে। তখন সেটি ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে এগোতে পারে।
‘ঘূর্ণিঝড় যখন উপকূলের কাছাকাছি আসে, তখন সেটির অগ্রসর হওয়ার গতি বেড়ে যায়,’ তিনি বলছেন।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি এখন যে গতিতে অগ্রসর হচ্ছে, সেটি পর্যালোচনা করে আবহাওয়া বিভাগ সকালে এই বিজ্ঞপ্তি জারি করে।
আবহাওয়াবিদ আজিজুর রহমান বলেছেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের পরিধি প্রায় ৭৪ কিলোমিটার। ফলে সেটি যদি সেন্টমার্টিনস দ্বীপ বা টেকনাফের দক্ষিণ দিক থেকেও অতিক্রম করে, তার প্রভাব ওই সেন্টমার্টিনস, টেকনাফ ও কক্সবাজার এলাকায় পড়বে।’
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শনিবার রাত থেকে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব পড়তে শুরু করবে।
সাধারণত ঘূর্ণিঝড় আঘাত করার কমপক্ষে ১০ ঘণ্টা আগে মহাবিপদ সংকেত জারি করা হয়ে থাকে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ শনিবার দুপুর ১২টা নাগাদ কক্সবাজার বন্দর থেকে ৬৩০ কিলোমিটার, চট্টগ্রাম সমুন্দ্র বন্দর থেকে ৭০৫ কিলোমিটার এবং মোংলা সমুন্দ্র বন্দর থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর ৬৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।
আবহাওয়া বিভাগ বলছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৬০ কিলোমিটার থেকে ১৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের আশপাশে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকায় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
এছাড়া ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও ভোলার উপকূলীয় এলাকায় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৮ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতরের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। যার প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধ্বস হতে পারে।
এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে সকাল থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এলাকায় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে বলে সেখান থেকে জানান বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা শাহনেওয়াজ রকি।
তিনি বলেন, খুব একটা ঝড়ো বাতাস নেই। শহরাঞ্চলে জীবনযাত্রা এখনো পর্যন্ত স্বাভাবিক লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
তবে বিভিন্ন দ্বীপ ও উপকূলীয় এলাকায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সেন্ট মার্টিন থেকে গতকাল পর্যন্ত অসংখ্য মানুষ নিজেদের উদ্যোগেই টেকনাফে আত্মীয়দের বাড়িতে চলে এসেছে বলে জানান সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আজিজ। কিন্তু আজ আর কেউ আসতে পারছেন না। কারণ ছোট বোট ও ট্রলার চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
তিনি বলেন, অনেকে এখন সরকারি উদ্যোগের আশায় আছেন। যদি তাদের নৌবাহিনীর সহায়তায় সরিয়ে আনা হয় সেন্ট মার্টিন থেকে।
তবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক শাহীন ইমরান জানান, ওখানে সকলেই আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করবে।
‘সেন্ট মার্টিনে যেসব সরকারি স্থাপনা যেগুলো শক্ত, মজবুত, দু’তলা, তিনতলা এরকম ৩৭টি স্থাপনা আমরা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছি। ওখানে ৭ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে,’ বলেন তিনি।
তবে বেশি আতঙ্ক মহেশখালীর দিকে। ওখানকার স্থানীয় সাংবাদিক বশির উল্লাহ জানান, মহেশখালিতে ৮টি জায়গায় বেড়িবাধ ভাঙ্গা, সেদিক দিয়ে জলোচ্ছাসে পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কায় আছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এদিকে গতকাল থেকেই মাইকিং করে জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসার যে আহ্বান জানাচ্ছিল প্রশাসন সেটি আজ সকাল থেকে আরো জোরদার করা হয়েছে বলে জানান কক্সবাজার জেলা প্রশাসক শাহীন ইমরান।
তাদের লক্ষ্য সন্ধ্যার আগেই যারা ঝুঁকিপূর্ণ তাদের সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার।
‘আশঙ্কা তো আছেই, ভূমিধস হওয়ার, জলোচ্ছ্বাসের। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে যারা ভালনারাবল তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা। সে কাজটি আমরা করে যাচ্ছি। আমরা দুপুরের মধ্যেই সবাইকে বলছি আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসার জন্য, কিন্তু সন্ধ্যার পর যাতে কোনোভাবেই কেউ কোনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় না থাকে সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই।’
জেলা প্রশাসক জানান, মোট ৫৭৬টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত আছে, যেখানে ৫ লাখের উপর মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এর বাইরে স্কুল, কলেজ ও কয়েকটি হোটেল-মোটেল আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা