২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে পাশ্চাত্যের দেশগুলো কি সহায়তা করতে পারে?

মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছেন - ছবি : সংগৃহীত

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় জেলা কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছেন লাখ লাখ রোহিঙ্গা। গত কয়েক মাসে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া আবারো বেড়েছে।

বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া এই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গাদেরকে দ্রুত তৃতীয় কোনো দেশে পুনর্বাসনে করার কথাও বলেছেন।

২০১৭ সালে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর হামলা, নির্যাতনের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এরপর ২০২১ সালে দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান হলে আবারো বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আগমন বাড়তে থাকে। সম্প্রতি প্রায় আট হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখের বেশি।

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর দেয়া বক্তৃতায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করতে বাংলাদেশের প্রত্যয়ের কথা ব্যক্ত করেন। এ সময় তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে এবং তাদেরকে নিরাপদে, মর্যাদার সাথে এবং পূর্ণ অধিকার প্রদানের মাধ্যমে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে আমাদের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন।’

এরপর চলতি মাসে এক বক্তৃতায় ড. ইউনূস জাতিসঙ্ঘের অভিবাসনবিষয়ক সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি রোহিঙ্গাদের জন্য সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান। একইসাথে তিনি আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহকে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানান।

মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোয় অনিশ্চয়তা
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আহ্বানে এরই মাঝে সাড়া দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ২০২৪ সালে মানবিক সহায়তার কাজে বাংলাদেশকে তিন কোটি ৯০ লাখ ডলারের সহযোগিতা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে ইইউ। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে বন্যা দুর্গতদের জন্য এবং রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় প্রায় ৫০ লাখ ডলারের অর্থ ছাড় করেছে জোটটি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইইউর এক মুখপাত্র জানান, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মনযোগ ধরে রাখা এই মুহূর্তে ইউরোপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে এমন এক সময়ে, যখন দেশটিতে (বাংলাদেশে) এক জটিল রাজনৈতিক পটপরিবর্তন চলছে।

তবে দীর্ঘমেয়াদী কোনো সমাধান, যেমন মিয়ানমারে অবস্থার উন্নতি ঘটলে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে পারে। যদিও বড় পরিসরে এমন প্রত্যাবাসন সম্ভব হবে কিনা সে বিষয়ে শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা।

তবে তিনি আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠানোর পরিস্থিতি নেই। আর অদূর ভবিষ্যতে যে এটি হবে, তাও অনিশ্চিত।’

নিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র, কিন্তু সংখ্যায় কম
মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশই আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে। অনেকে আবার বাংলাদেশ থেকে সাগর পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও আশ্রয় নিয়েছেন। জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার তথ্য মতে, ভারত, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডে প্রায় তিন লাখ ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন।

এদিকে ২০২২ সালে কিছু রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার কথা জানায় যক্তরাষ্ট্র। তবে পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা কয়েক শ’র বেশি নয়।

চলতি মাসে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের সহায়তার জন্য বড় পরিসরে আহ্বান জানানোর সুযোগ পাবেন।

ইউরোপে সুযোগ কম
বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে এ বিষয়ে যুক্ত হওয়ার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী দেশ হতে পারে মালয়েশিয়া। দেশটি ২০২৫ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের সভাপতির দাযিত্ব নেবে। বাংলাদেশ সরকারের আশা, আসিয়ানে মালয়েশিয়ার নেতৃত্বের সুযোগে বাংলাদেশ ওই অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানোসহ রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবিলায় সহযোগিতা পাওয়ার চেষ্টা করতে পারে।

তবে রোহিঙ্গাদের বড় পরিসরে ইউরোপরে দেশগুলোতে পুনর্বাসনের সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা নেই। রোহিঙ্গাদের জন্য ইউরোপ হয়তো অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রদানেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান বিশ্বিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসরিয়াল লেকচারার তাজরীনা সাজ্জাদ বলেন, ‘ইইউর মতো তৃতীয় কোনো দেশে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন একটি ধীর এবং নির্বাচনিক প্রক্রিয়া।’

তবে তৃতীয় কোনো দেশে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের আগ্রহ থাকলেও অনেকেই মনে করেন, এই রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রকৃত সমাধান হতে পারে তাদেরকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো। যদিও দেশটির বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, এটি এই মুহূর্তে সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে তাজরীন বলেন, ‘রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব চায়, তাদের ভিটেমাটি ফেরত পেতে চায়, নির্যাতন থেকে সুরক্ষা চায় এবং পরিস্থিতি অনুকূলে এলে স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে চায়।’
সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement