বায়তুশ শরফের চাঁদ : আবদুল হালীম খাঁর অনন্য সৃষ্টি
- মুহাম্মদ ইসমাঈল
- ৩০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০৫
সবাই কবি নয়। কেউ কেউ কবি, কবি কেননা তাদের হৃদয় কল্পনার এবং কল্পনার ভেতরে চিন্তা ও অভিজ্ঞতার স্বতন্ত্র সারবত্তা রয়েছে এবং তাদের পশ্চাতে অনেক বিগত শতাব্দী ধরে এবং তাদের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক জগতের নব নব কাব্য-বিকিরণ তাদের সাহায্য করছে। সাহায্য করছে; কিন্তু সবাইকে সাহায্য করতে পারে না। যাদের হৃদয়ে কল্পনা ও কল্পনার ভেতরে অভিজ্ঞতা ও চিন্তার সারবত্তা রয়েছে, তারাই সাহায্য প্রাপ্ত হয়। নানা রকম চরাচরের সম্পর্কে এসে তারা কবিতা সৃষ্টি করার অবসর পায়।
কবিতা আমাদের জীবনের পক্ষে সত্যিই কি প্রয়োজন? কেন প্রয়োজন? কবিতা যে এত অল্প থেকে ভালোবাসে সেটা কি প্রকৃতিরই নিয়ম, না কি অধিকাংশের বিকৃত কী দূষিত শিক্ষার ফল? যদি আরো বেশি লোকে কবিতা ভালোবাসতে ও বুঝতে শেখে, তা হলে সেই অনুপাতে তারা ভালো করে বাঁচতে শিখবে কি না অর্থাৎ সেই অনুপাতে সমাজের মঙ্গল হবে কি না?
মানুষের সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনকে সর্বাঙ্গীণ ও সুখের করে গড়বার সংগ্রামে ও সাধনায় কবিতার কবিতার স্থান কোথায়? এ প্রশ্নগুলো কোনো হিতসাধনামণ্ডলীর কর্মসচিবদের প্রশ্ন বলে মনে হয়, কিন্তু তবুও জিজ্ঞাসাগুলো নিটোল ও আন্তরিক এবং বিশদভাবে নয়, সংক্ষেপে, হয়তো ইশারায়, এসব জিজ্ঞাসার উত্তর আমার উপরের কয়েকটি লাইনের ভেতর নিহিত রয়েছে।
কবিতাই আমার একমাত্র সম্বল ও সম্পদ। এ ছাড়া পরিচয় দেয়ার মতো আমার কিছু নেই। কথাটি বলেছেন কবি আবদুল হালীম খাঁ। তার মতো একজন গুণী মানুষ আমাদের দেশে জন্ম নিয়ে মনে হয় ভুলই করেছেন। আমরা তাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে আজ পর্যন্ত পারিনি।
কবিতা দিয়েই বায়তুশ শরফের মহান পীর আল্লামা শাহ আবদুল জব্বার রাহ:-এর মতো এত বড় একজন মানুষের কাছে যাওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছি। দেখা হওয়ার আগে তার জ্ঞানগর্ব কয়েকটি বই পড়েছিলাম। আর আল আসরারের তার সমাজসেবা ও সমাজ সংস্কারমূলক কাজের বিরাট ফিরিস্তি দেখছিলাম। ভেবেছিলাম এ কেমন পীর? পীর তো মানুষের সেবামূলক এত সব কাজের প্রয়োজন হয় না। মুরিদদের দোয়া দেয়াই যথেষ্ট।
পীর সাহেবের আকস্মিক মৃত্যুতে কবি ব্যথিত হয়ে শোকে লিখেছিলেন ৩৭টি কবিতা। প্রতিটি কবিতায় তার কর্ম, ন্যায়নীতি, শিষ্টাচার ও আধ্যাত্মিকতার কথা ফুটিয়ে তুলেছেন।
কবিতাগুলো পড়ে আমি বিস্মৃত হলাম। কতটা ভালোবাসলে এ ধরনের কবিতা তিনি জাতিকে উপহার দিয়েছেন। প্রথম কবিতায় ‘বায়তুল শরিফের চাঁদ’ এ কবিতায় কবি যথার্থই বলেছেন।
এই যে বসন্তের পাখি কোকিল
গাছে গাছে গাইছে গান
শীত এলেই সে চলে যাবে
আরেক বসন্তে ফিরে আসবে আবার।
আমরা এসেছি এ দুনিয়াতে সাময়িকের জন্য। কোকিলের সাথে তুলনা করেছেন। আমাদের আরেকটি জগৎ আছে। সেটা হলো পরকাল। এই বসন্ত থেকে পরকালের বসন্তে আমাদেরকে যেতেই হবে। আরেকটি কবিতায় কবি লিখেছেন-
এতিমরা এখন কার কাছে পাবে পিতৃ¯েœহ
বেকার ভাসমানরা কার কাছে পাবে জীবনের ঠিকানা
ভক্তরা কার কাছে শিখবে দ্বীনের মর্মকথা
মারেফাতের হাকিকত
কবিরা কার কাছে পাবে কাব্যের ভাষা।
আসলে আমরা অনেক পীরকেই দেখেছি। যাদের কথায় কাজে কোনো মিল নেই। কবি সব ধরনের মিল খুঁজে পেয়েছেন। সত্যতার স্পর্শকাঠিতে এ ধরনের রাহবার খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
‘মানুষের মতো মানুষ’ কবিতায় কবি বলেছেন-
মানুষের মতো মানুষ জন্ম নিলে
আকাশ বাতাস থেকে বরকত করে,
সমাজ সংসারে শান্তি আসে
আনন্দ হাওয়া বহে ঘরে ঘরে।
একজন পীর সাহেব যদি সত্যিকারে মানুষ হন। আকাশ, জমিন, বাতাসে বরকত ঝরে। সমাজ সংসারে শান্তি আসে। তথাকথিত পীরের মতো নয় বলে বায়তুশ শরফ আজ এত ঊর্ধ্বে। শান্তির বারতা বয়ে যাক সারা পৃথিবীতে।
কবি সত্য খুঁজে পেয়েছেন। শান্তি খুঁজে পেয়েছেন এবং আট-দশজনের মতো রাহবার না। রাহবারের কার্যকলাপে কবি সন্তুষ্ট। তাই তিনি রাহবারের কাছে দোয়া চেয়েছেন। এই দোয়ার মাধ্যমে আমরা যেন শান্তি ও সুখ দুনিয়াতে লাভ করতে পারি।
‘যে আলো জ্বলে গেছ’ কবিতায় সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন-
যে আলো জ্বলে গেছ / আঁধার চরাচরে / পথ প্রান্তরে / মানুষের অন্তরে / প্রতি ঘরে ঘরে /হে ধ্যানী দরবেশ / সে আলো হবে না কভু শেষ।
কবি আবদুল হালীম খাঁ সত্য ও সুন্দরের জন্য নীরব ও নিরন্তর সংগ্রামী জীবনের ৮৫টি বসন্ত পেরিয়ে এসেছেন। এখনো তিনি শ্রম ও মেধা দিয়ে যাচ্ছেন জাতির জন্য। কিন্তু জাতি, সমাজ, রাষ্ট্র তথা আমরা আজ পর্যন্ত তাকে সম্মান দিতে পারিনি। এটি আমাদের ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতার গ্লানি আমরা কতদিন টানব জানি না। পরিশেষে দোয়া করি মহান আল্লাহ যেন এই কবিকে তার সৃজন সাধনায় আমাদের সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়। আমাদের বিশ^াসী সাহিত্য ধরা গতিশীল ও বেগবান হয়। কবির দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
কবি হাসান লবিদ, কবি হাসান বিন সাবিত, কবি আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহ, কবি খানসার কাতারে আল্লাহ যেন কবুল করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা