শিশুসাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলাম
- বারী সুমন
- ২৬ মে ২০২৩, ০০:০৫
স্বর্গের লীলাভূমি আমার এই দেশ। এই দেশ ধানের দেশ, গানের দেশ, কবির দেশ। সবুজ শ্যামল বাংলার রূপ প্রত্যেক কবিকেই হাতছানি দিয়ে ডেকেছে প্রতিনিয়ত। তেমনি একজন আমাদের জাতীয় কবি, বিদ্রোহী কবি, প্রেমের কবি, ছোটদের কবি, কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ, ইংরেজি ১৮৯৯ সালের ২৪ মে বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর থেকেই নানান দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন। কখনো রুটির দোকানে কাজ করেছেন, কখনো বা লেটোর দলে কাজ করেছেন। বিচিত্র এই জীবনে কবি প্রতিভার যে উন্মেষ ঘটেছে তা আমরা তার রচনাবলিতেই দেখতে পাই। বড়দের পাশাপাশি তিনি ছোটদের জন্য লিখেছেন দু’হাত ভরে। কবির হাতের ছোঁয়ায় শিশুসাহিত্যের সম্ভার পূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ছোটদের জন্য তিনি বেশ কিছু কাব্যগ্রন্থ এবং একটি নাটক রচনা করেন। তন্মধ্যে ঝিঙে ফুল, পুতুলের বিয়ে, ঝড় এবং পিলে পটকা, পুতুলের বিয়ে উল্লেখযোগ্য। তিনি ছোট-বড় সকলের প্রিয় কবি। সবার জন্যই লিখেছেন। ছোটদের মেধা ও মনন উপযোগী মজার মজার অনেক লেখায় সমৃদ্ধ করেছেন শিশুসাহিত্যকে । শিশুদের ভেতরের সুপ্ত ইচ্ছা জাগিয়ে তুলেছেন কবি নজরুল। তাদের মনের কথা, মান অভিমানের কথাগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন সুনিপুণভাবে।
শিশুদের চঞ্চল মন কী চায় তার একটি পরিষ্কার ছবি বিদ্যমান কবির কবিতায়। কাব্যিকশৈলীতে কবির শিশুতোষ কবিতাগুলো ছোট বড় সবারই মন কাড়ে।
সকালবেলা বা প্রভাতে ঘুম থেকে ওঠা একটি ভালো অভ্যাস। সেই সকালবেলা উঠা নিয়ে কবি লিখেছেন প্রভাতী নামক কবিতা। এই কবিতার মধ্য দিয়ে শিশুদের কথা, বা শিশুদের অভিভাবকদের কথা ফোটে ওঠে। তিনি এইভাবে বলেছেন :
ভোর হলো দোর খোলো খুকুমণি ওঠ রে!
ঐ ডাকে জুঁই-শাখে ফুল-খুকী ছোট রে!
খুলি হাল তুলি পাল ঐ তরী চলল
এই বার এই বার খুকু চোখ খুলল।
খোকা সকালবেলার পাখি হতে চায়, কিন্তু সেখানে বাদ সাধে তার মা। তার মা সকালে খোকাকে উঠতে দিতে চায়না, মা বলে এখনো সকাল হয়নি ঘুমিয়ে থাকো। আরো পরে ঘুম থেকে ওঠো। তাই খোকা মাকে আলসে মেয়ে বলেছে। খোকা তার মাকে এও বোঝানোর চেষ্টা করেছে আমরা জাগলেই তবে
সকাল হবে। তাই কবি লিখেছেন :
আমি হব সকাল বেলার পাখি
সবার আগে কুসুম-বাগে উঠব আমি ডাকি।
সূয্যিমামা জাগার আগে উঠব আমি জেগে,
‘হয়নি সকাল, ঘুমো এখন’ মা বলবেন রেগে।
বলব আমি, ‘আলসে মেয়ে ঘুমিয়ে তুমি থাক,
হয়নি সকাল-তাই বলে কি সকাল হবে না ক?
আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?
তোমার ছেলে উঠলে গো মা রাত পোহাবে তবে!’
কিশোর মনে নানান কিছুর ভাবনা আসে। কিশোর মনে নানান ভাবের উদ্রেক হয়। শিশুদের অদম্য ইচ্ছাকে সুন্দররূপে ফুটিয়ে তুলেছেন সঙ্কল্প কবিতায়। তিনি লিখেছেন:
থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে,
কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে।
দেশ হতে দেশ দেশান্তরে ছুটছে তারা কেমন করে,
কিসের নেশায় কেমন করে মরছে যে বীর লাখে লাখে,
কিসের আশায় করছে তারা বরণ মরণ-যন্ত্রণাকে।
ছোট্ট খুকী অনেক সুন্দর করে একটি পাখি, বিড়াল কে আপন করে নেয়, কথা না শুনলে চলে মান-অভিমান। এমন একটি মান অভিমানের বিষয় লক্ষ্য করি আমরা খুকি ও কাঠবিড়ালি এই কবিতার মাধ্যমে:
কাঠবেড়ালি! কাঠবেড়ালি! পেয়ারা তুমি খাও?
গুড়-মুড়ি খাও? দুধ-ভাত খাও? বাতাবি নেবু? লাউ?
বেড়াল-বাচ্চা? কুকুর-ছানা? তাও?
ডাইনি তুমি হোঁৎকা পেটুক,
খাও একা পাও যেথায় যেটুক!
বাতাবি-নেবু সকলগুলো একলা খেলে ডুবিয়ে নুলো!
তবে যে ভারি ল্যাজ উঁচিয়ে পুটুস পাটুস চাও?
ছোঁচা তুমি! তোমার সঙ্গে আড়ি আমার! যাও!
কাজী নজরুল ইসলাম ছোটদের জন্য অনেক লিখেছেন। বাংলা-সাহিত্যের শিশুতোষ শাখাটি কাজী নজরুল ইসলামের কোমল হাতের স্পর্শে পূর্ণ হয়েছে। শিশুদের জন্য রচিত তাঁর ছড়া, কবিতা, গল্প, গান ও নাটক আজো সমান জনপ্রিয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার কবিকে সপরিবারে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন এবং সরকারিভাবে এখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করেন। ১৯৭৬ সালে কবিকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয় এবং তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়।
কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি, বিদ্রোহী কবি, প্রেমের কবি, শিশুদের কবি। তিনি আমাদের জন্য সাহিত্য যে অমূল্য সম্ভার রেখে গেছেন তা আমাদের জন্য সত্যিই গর্বের। কাজী নজরুল ইসলামকে জানার জন্য উনার লেখা বইগুলো আমাদের বেশি করে পড়তে হবে। পাঠক মনের চেতনায় কবি বেঁচে থাকবেন চিরকাল।
আমাদের জাতীয় ও প্রিয়কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি লিখেছিলেন :
মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই,
যেন গোরে থেকে মুয়াযযিনের আযান শুনতে পাই।
শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে দাফন করা হয়। আমাদের প্রিয় কবির প্রতি রইল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা