২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ শাবান ১৪৪৬
`

অপ্রতিদ্বন্দ্বী আল মাহমুদ

মৃত্যু : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, জন্ম : ১১ জুলাই ১৯৩৬ -

‘জন্মেছিলাম এক দ্বীপদেশে। মনে হতো যেন
নগ্ন এশিয়ার লতাগুল্ম ঘেরা সপ্রতিভ নাভিতে
একটি সোনালি পাখি আমি। কিংবা একটি
রূপালী মাছ। যে স্বাদুজলে সাঁতার কাটতে কাটতে
এখন কানকোতে নুনের স্বাদ লাগাতে
লাফিয়ে পড়বে সমুদ্রে।’
কিংবা
‘হাতির পালের মতো মেঘের গম্বুজ নিয়ে কাঁধে
নগ্ন হয়ে নেমে আসে আষাঢ়স্য প্রথম দিবস
বাংলার আকাশ জুড়ে মেঘ আর রোদের বিবাদে
বাতাসও বুঝতে নারে, এ কামিনী কবে কার বশ;’
এমন অজস্র স্মরণীয় স্বর্ণালি পঙক্তির রচয়িতা কবি আল মাহমুদ। যাকে মোটা দাগে বলা হয়ে থাকে ‘সোনালি কাবিনের কবি’। তার সাফল্যের খাতায় শুধু সোনালি কাবিন নয়, আছে অঢেল সৃষ্টি সম্ভার। একজন প্রখ্যাত সমালোচক বলেছেন ‘তিনি এক বিরলপ্রজ প্রতিভা।’ তার কবিতা মন্ত্রের মতো পাঠ করা যায়। ‘আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে / হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে’ কিংবা ‘ ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ / দুপুর বেলার অক্ত / বৃষ্টি নামে বৃষ্টি কোথায় / বরকতের রক্ত’ কিংবা ‘গ্লোবের পেটে কান লাগিয়ে খোকন শোনে কান্না / বিশ্বগোলক ফুঁপিয়ে ওঠে আর পারি না আর না’ এই স্বভাব সৌন্দর্যের কবিতা শুধুমাত্র আল মাহমুদের দ্বারাই লেখা সম্ভব!
আল মাহমুদ বাংলা সাহিত্যের একটি পরিপূর্ণ যুগ। সাহিত্যের একজন ছাত্র হিসেবে আমি উপলব্ধি করি, মাত্র অল্পকয়েকজন কবি এরকম পরিপূর্ণ যুগ তৈরি করতে সমর্থ হয়েছেন। যারা ধারাবাহিকভাবে বাংলা কবিতা অধ্যয়নের সাথে যুক্ত তারা জানেন, শিল্পসফল কবিতার জগৎটি খুব পরিসর স্থান নয়। বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে একথাটি আরো বেশি সত্য। আধুনিক নন্দনতত্ত্বের বিবেচনায় যে স্বল্পসংখ্যক কবিকে শিল্প সাফল্যের গৌরব প্রদান করতে হয়- আল মাহমুদ তাদের মধ্যে অন্যতম।
বাংলা সাহিত্যে আল-মাহমুদের আগমন বিশ শতকের পঞ্চাশের দশকে। সূচনাতেই তাকে দেখা যায় প্রবল প্রতিশ্রুতিশীল ও সপ্রতিভ। তিনি একটি অসাধারণ ভাষা ভঙ্গিতে তার কবিতার অবয়ব গড়ে তোলেন। বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বলতম অধ্যায় ত্রিশ ও চল্লিশের দশকের কবিদের সাফল্যের পর আল মাহমুদের এই স্বতন্ত্র অবদান প্রকৃতপক্ষে অসম্ভবকেই সম্ভব করে তোলা। যাকে অনেকে বলেছেন বাংলা কবিতায় অসাধ্যসাধন।
লোকায়ত প্রাঞ্জল সতেজ ভাষা সমেত আল মাহমুদের কবিতা যে ভিন্ন স্বাদ নিয়ে এলো তাকে অনেকে বলেছেন ত্রিশোত্তর আধুনিকতার পরিপূর্ণ রূপায়ণ। বহুদিক থেকে আল মাহমুদের কবিতার ব্যাপক বিশ্লেষণ হয়েছে। এ কথা সবাই স্বীকার করেছেন তার কবিতা ত্রিশোত্তর সাফল্যের সূচক। তিনি আধুনিকতার সাথে তার নিজস্ব দক্ষতায় দেশজ চেতনার মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। শুধু তাই নয়, পূর্ববঙ্গের আবহমান প্রকৃতি, জন-মানুষ, সম্ভাবনাময় লোকায়ত সংস্কৃতিকে আত্মস্থ করে আধুনিকতম ধারায় বাংলা কবিতায় এক অসাধারণ পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন। এই সাফল্য বাংলা কবিতার একনিষ্ঠ পাঠকদের দৃষ্টিকে মুগ্ধ করেছে, শৈল্পিক আস্বাদে উদ্বেলিত করেছে।
১৯৭৩ সালে তার বহুল আলোচিত কবিতাগ্রন্থ ‘সোনালি কাবিন’ প্রকাশিত হয়। বাংলা সাহিত্যে যে বইটিকে আল মাহমুদের অবিস্মরণীয় সাফল্যের স্মারক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাহিত্যের আগ্রহী পাঠকদের কাছে ‘সোনালি কাবিন’ অবশ্য পাঠ্য হয়ে উঠে। নির্ভার, প্রাঞ্জল ভাষা ও ছন্দে রচিত এমন অসাধারণ কাব্যভুবন, বাংলা কবিতার প্রতি পাঠকের আস্থাকে বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে। কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘দেশ’ পত্রিকায় গোলাম মুরশিদ লেখেন- ‘আল মাহমুদের ভাষা একান্তভাবে তার নিজস্ব। যে মগ্নচৈতন্য থেকে ভোরের সহজ আলোর মতো তার অনুভূতি ঝরে পড়ে, তারই উপযোগী ভাষা তার আয়ত্তাধীন। আলো আঁধারি ভাষায়, আভাসে ইঙ্গিতে তিনি তার হৃদয়ের কথা আধখানা ব্যক্ত করেন ... পল্লীর শব্দ ও প্রবাদ প্রবচনকে আধুনিক কোনো কবি সম্ভবত এমন নিপুণ ও ভাষা শৈল্পিক ভঙ্গিতে ব্যবহার করেননি। ...প্রকৃতপক্ষে, তিনি কাব্যের ক্ষেত্রে এক অপূর্ব সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছেন। ...আল মাহমুদ অত্যন্ত সংবেদনশীল, সচেতন ও বিদগ্ধ শিল্পী, তার উপলব্ধির গভীরতা জসীমউদ্দীনের তুলনায় অতলস্পর্শী। তদুপরি অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত, স্বরবৃত্ত- ছন্দের এই ত্রিবিধ চলনেই আল মাহমুদের স্বচ্ছন্দ বিহার অনেকের কাছেই ঈর্ষার বস্তু হতে পারে। (পূর্ববাংলার সাহিত্য : কবিতা ‘দেশ, ১০ জুলাই-১৯৭১)
কার্যত হয়েছেও তাই। আল মাহমুদের সপ্রতিভ উত্থান শুরু থেকেই একটি মহল স্বাভাবিকভাবে নেননি। তিনি প্রবলভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের ঈর্ষাদ্বারা আক্রান্ত হন। কিন্তু প্রকৃত কবিকে কোনো কিছুই দমিয়ে রাখতে পারে না। যেমন- পরগাছা পারে না কোনো মহীরুহকে দমিয়ে রাখতে। আল মাহমুদের স্বাভাবিক বিকাশ ঘটেছে। প্রবল বৈরিতাকে ঠেলে তার একাকী এগিয়ে চলা, শুদ্ধ কবিতার স্বার্থে আর নতুন শিল্পের প্রয়োজনে। তিনি বাঁক নিয়েছেন। কিন্তু আপস করেননি। বাংলার স্রোতবাহী নদীর মতো গতিশীল প্রাণবন্ত এক ভাষায়, সজল সবুজ মায়াবী এক কাব্যভুবন গড়ে নিয়েছেন তিনি। আল মাহমুদ লিখেছেন- ‘পরাজিত নই নারী পরাজিত হয় না কবিরা।’ কবির এমন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তৈরি হয়েছে নতুন মিথ। বাঙালি পাঠকমাত্রই খুঁজে পেয়েছেন জাতির সংগ্রামী সত্তাকে। যা আবহমান এবং মুক্তিকামী। সমৃদ্ধ লোকজ ঐতিহ্যে মোড়ানো যার জীবন বিশ্বাস।
আল মাহমুদের দুঃসময়ে যারা তার পক্ষে কলম ধরে ছিলেন, ওপার বাংলার বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, লেখক, চিন্তাবিদ ড. শিবনারায়ণ রায় তাদেরই একজন। তিনি তার ‘জিজ্ঞাসা’ পত্রিকার মাধ্যমে আল মাহমুদের পক্ষে একটি বড় অবস্থান গ্রহণ করেন। তিনি কবি ও কবিতার স্বার্থে আল মাহমুদের কবিতা নিয়ে অনেক সমালোচনারও জবাব দেন। আল মাহমুদের কবিতা প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন- ‘আল মাহমুদ শুধু শক্তিমান কবি নন, এদিক থেকেও তার কাব্য সাধনার একটি বিশেষ তাৎপর্য আছে। তার উপজীব্যে বাক প্রতিমা সংযুক্তিতে নাগরিকতা এবং আঞ্চলিকতার টানাপড়েন অনেক সময় জামদানি শাড়ির কথা স্মরণে আনে। তিনি বোদলেয়ারের অনুরাগী, কিন্তু মাটি তার কাছে সেই নারী যে জলসিক্ত সুখদলজ্জায় নিজেকে উদাম করে। তিনি শুনতে পান মেঘনার জলের কামড়ে ফসলের আদিগন্ত সবুজ চিৎকার। অভাবের অজগড় তাঁর টোটেম। ... পঁচাত্তর সালে আল মাহমুদের সাথে প্রথম চাক্ষুষ পরিচয় হওয়ার আগে থেকেই আমি তার কবিতার একজন মুগ্ধ পাঠক। ...আমার মনে হয়েছে যে বাংলা কবিতায় তিনি নতুন সম্ভাবনা এনে দিয়েছেন। পশ্চিম বাংলার কবিরা যা পারেননি তিনি সেই অসাধ্য সাধন করেছেন, আঞ্চলিক ভাষা, অভিজ্ঞতা, রূপাবলীকে তিনি নাগরিক চেতনায় সন্নিবিষ্ট করে প্রাকৃত অথচ ব্যঞ্জনাসমৃদ্ধ এক কাব্যজগৎ গড়ে তুলেছেন। জসীমউদদীন এবং জীবনানন্দ উভয়ের থেকেই তিনি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির কবি। কারও প্রতিধ্বনি নয়, নির্মীয়মাণ স্বকীয়তাই তাকে আধুনিক কবিতার জগতে বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী করেছে।’ ( একজন খাঁটি কবি/ শিবনারায়ণ রায়)
কাব্যচর্চার শুরুতেই আল মাহমুদ বুদ্ধদেব বসুর মতো প্রতিভাধর কবি ও সম্পাদকের দৃষ্টিতে পড়েছিলেন। বুদ্ধদেব বসু আল মাহমুদের কিছু কবিতা তার সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকায় প্রকাশ করেন। এটি ছিল আল মাহমুদের প্রতিভার পক্ষে একটি বড় স্বীকৃতি। ষাট ও সত্তরের দশক থেকেই আল মাহমুদের কবিতা নিয়ে এ দেশে ব্যাপক আলোচনা ও পর্যালোচনার সূত্রপাত হয়। আল মাহমুদকে দমিয়ে রাখার প্রবণতাও শুরু হয় সেই সময় থেকেই। তাকে নানাভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা হয়েছে। সাহিত্যের জগতে ঘাপটি মেরে থাকা প্রতিভাহীন এই গোষ্ঠীটি কবির বিকাশের পথে হাজার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেও চরমভাবে নিরাশ হয়েছে। আল মাহমুদকে বিতর্কিত করার সব প্রচেষ্ট ব্যর্থ করে দিয়েছে প্রধানত এ দেশের পাঠক শ্রেণী। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে আল মাহমুদের মতো জনপ্রিয়তা অন্য কোনো কবির পক্ষে অর্জন করা সম্ভব হয়নি। দ্বিতীয়ত মূলধারার আলোচক ও সমালোচকগণ আল মাহমুদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, তারা কবিকে রাজনৈতিক কারণে বর্জন করার যুক্তিকে খণ্ডন করেছেন। এ প্রসঙ্গে ড. শিবনারায়ণ রায় লিখেছেন- ‘আল মাহমুদের কবিতাগুচ্ছ প্রকাশ করায় অনেক বাংলাদেশী পাঠক আমাকে পত্র লিখে জানান যে আল মাহমুদ বর্তমানে ইসলামপন্থী প্রচারক হয়ে উঠেছেন। যে তিনি সরকারের সমর্থক ও প্রগতিবিরোধী, যে সেই কারণে তার প্রতি আমার মতো র্যা ডিক্যাল মানবতন্ত্রীর অনুরাগ অযৌক্তিক ও অসঙ্গত। আমি আল মাহমুদের পাঠানো আরেকগুচ্ছ কবিতা ‘জিজ্ঞাসা’ তৃতীয়বর্ষ চতুর্থ সংখ্যায় প্রকাশ করি এবং পাঠক-পাঠিকাদের জানাই যে, কবির ব্যক্তিগত বিশ্বাসের
অংশভাক অথবা তার বিবিধ ক্রিয়াকলাপের সমর্থক না হয়েও তার কবিতা উপভোগ করা সম্ভব বলেই আমি মনে করি। অনুভবের সততা, কল্পনার মৌলিকতা, শব্দ ব্যবহারের দক্ষতা, উপমা ও ব্যঞ্জিত বাকপ্রতিমার উদ্ভাবনা শক্তি যাঁর কবিতায় প্রত্যক্ষ তাঁর বিশ্বাস ও ব্যবহার যাই হোক না কেন তাঁর কবিতায় সাড়া দেয়া কব্যানুরাগীর পক্ষে স্বাভাবিক। (একজন খাঁটি কবি/ শিবনারায়ণ রায়)
আল মাহমুদের বিরুদ্ধে প্রবল সমালোচনার সূত্রপাত হয় ১৯৭৬ সালে তার ‘মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো’ কবিতাগ্রন্থটি প্রকাশের পর। এই কবিতাগ্রন্থে কবির ব্যাপক একটি বাঁক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এ বইয়ে তার আদর্শিক অবস্থান বদলে যায়। সেই সাথে কবিতার ভাষা ও শৈলীতে আসে পরিবর্তন। ‘মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো’ থেকে ‘আমি দূরগামী’ পর্যন্ত আটটি কবিতাগ্রন্থে আল মাহমুদ নিজেকে আরো ভিন্নভাবে মেলে ধরার চেষ্টা করেন। পরিপূর্ণ কবির মতোই অনেক কিছু বদলে ফেলেও শিল্পের বিষয়ে তিনি আপস করেননি। তিনি যে আত্মস্থ আধুনিকতার মর্মমূলে প্রকৃতি শোভিত লোকায়ত চেতনার গতিশীল প্রাণবন্ত ভাষাকে রপ্ত করেছিলেন এ পর্বে তা আরো উদ্ভাসিত হলো। শুধু তাই নয় কবিতা রচনার শুরুতেই তিনি যে প্রধান তিনটি ছন্দে অনায়াস দক্ষতা অর্জন করেছিলেন তার সাথে যুক্ত হলো গদ্যের শীতল ছন্দ, যা আজও তাকে বিশিষ্টতার আসনে অধিষ্ঠিত করে রেখেছে। যারা আল মাহমুদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে রেখেছেন তারাও স্বীকার করেন তাঁর কবিতার ভাষা বৈশিষ্ট্য, ছন্দের সফল বাঁধুনি, উপমা ও উৎপ্রেক্ষার নতুনত্ব তাকে বিশিষ্টতা দিয়েছে। এসব প্রসঙ্গকে স্মরণে রেখেই ড. শিবনারায়ণ রায় লিখেছেন- ‘পরিবর্তন জীবনের লক্ষণ; অন্তত কবিতার ক্ষেত্রে পুনরাবৃত্তির চেয়ে পরিবর্তন সততই কাম্য। কিন্তু বিশ্বাস জিগির হয়ে দাঁড়ালে তার মুখ মস্কোর দিকেই হোক আর মক্কার দিকেই হোক ফল কবিতার অপমৃত্যু। ... আমার ধারণা যেহেতু আল মাহমুদ হাড়ে মজ্জায় কবি, ধর্ম বিশ্বাস বা রাজনীতি তাঁকে জীর্ণ করতে পারবে না। যার রক্তের মধ্যে একটি সজনে গাছ ; ভ্রƒর মধ্যে একটি পাখি, মানবিক নির্মাণের প্রতি আস্থা হারালেও প্রতিটি রঙের মধ্যে অন্য রঙ না দেখে তার উপায় নেই। ... আমার সমকালে বাংলাভাষায় যে অল্প কয়েকজন খাঁটি কবি দেখা দিয়েছেন আল মাহমুদ তাদের ভেতরে একজন। ... আল মাহমুদ গল্প লেখেন, আত্মজীবনী লেখেন, একসময়ে রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় হয়েছিলেন, সাম্প্রতিককালে তার ধর্ম বিশ্বাসের কথা ঘোষণা করে থাকেন, কিন্তু পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত তিনি একজন জলজ্যান্ত কবি। ( একজন খাঁটি কবি/ শিবনারায়ণ রায়)
আল মাহমুদের কবিতায় তৃতীয় বাঁক পরিবর্তন ঘটে সম্ভবত তাঁর ‘একচক্ষু হরিণ’ (১৯৮৯) কবিতাগ্রন্থ থেকে। কবিতাকে তিনি যে সবুজের গাঢ় গন্ধ যুক্ত বাকল পরিয়ে দিয়েছিলেন, আর ভাষার গভীরে স্থাপন করেছিলেন বাংলাদেশের আবহমান নদীদের স্রোতের গতি। এবার তিনি রবীন্দ্রনাথ বা নজরুলের মহাযুগের মতোই অধ্যাত্মচেতনার অপার্থিব অনুভবকে তার হাতের তালুতে তুলে নিলেন। এই বাংলাদেশের সপ্রাণ মানুষের ধর্ম ও ভাবান্দোলনকে উন্মুক্ত আধুনিকতার অগ্রসর পটভূমিতে স্থাপন করলেন তিনি। অর্থাৎ উত্তর আধুনিক বাংলা কবিতার প্রথম পুরোহিতের আসনটিও অধিকার করলেন কবি আল মাহমুদ। একটি পরিপূর্ণ কবিতাযুগের অধিশ্বর হলেন তিনি। তাই হয়তো নিজেই ঘোষণা দিলেন ‘আমি সীমাহীন যেন বা প্রাচীন বটবৃক্ষের মতো’।


আরো সংবাদ



premium cement